ঢালিউডের এই ৭ সিনেমার বিদেশি আয় চমকে ওঠার মতো
প্রবাসে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। এর কারণ প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যেও বাংলা সিনেমা নিয়ে অনেক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। সিনেমার মুক্তির পর বাণিজ্যিকভাবেও সফলতা আসছে। সেই কথা বলছে গত কয়েক বছরে মুক্তি পাওয়া ‘আয়নাবাজি’, ‘দেবী’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’, ‘সুড়ঙ্গ’ ও ‘প্রিয়তমা’। এই সাত সিনেমার বিদেশি আয় চমকে ওঠার মতো। সিনেমাগুলোর আয় মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
বাংলা সিনেমার এই প্রবাসী বাজার সব সময় অধরাই থেকে গেছে। এর অন্যতম কারণ বাংলা সিনেমার বিদেশের বাজারের শুরু থেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগিয়েছে। দেশের আলোচিত সিনেমা বিদেশে বসে দেখার শখ থেকে এর যাত্রা। বাঙালি কমিউনিটিতে একসময় ঘর ভাড়া করে বাংলা সিনেমা দেখানো হতো। এর সঙ্গে জড়িতদের একমাত্র টার্গেট ছিল উৎসাহী প্রবাসী বাংলাদেশি দর্শক। ‘মাটির ময়না’, ‘মনপুরা’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘টেলিভিশন’, ২০১৬ সাল–পরবর্তী ‘অস্তিত্ব’, ‘মুসাফির’, ‘সম্রাট’, ‘শিকারি, ‘নবাব’ সিনেমাগুলোও মিলনায়তন ভাড়া করে দেখানো হতো। তখন খুব বেশি টাকা পাওয়া যেত না। প্রতি সিনেমার আয় ছিল ৩ থেকে ৫ হাজার ডলারের মধ্যে।
কিছু চাহিদা বিবেচনায় সিনেমা হলেও মুক্তি পেয়েছে। টাকার হিসাব ছিল শো অনুযায়ী। ‘আয়নাবাজি’ সিনেমা প্রতি শোর জন্য এক হাজার ডলার পেয়েছেন বলে জানান অমিতাভ রেজা। সেই প্রবাসের বাজারেই এখন বড় বড় হলে দেশের সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। বাড়ছে আয়।
বর্তমানে বিদেশের বাজারে আলোচনায় রয়েছে ‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’। ৭ জুলাই ‘স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো’র পরিবেশনায় ৪২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় হিমেল আশরাফ পরিচালিত সিনেমা ‘প্রিয়তমা’। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মুক্তির পর থেকেই দর্শক ‘প্রিয়তমা’ হলে আগ্রহ নিয়ে দেখছেন।
পরিবেশক সূত্রে জানা যায়, সিনেমাটি উত্তর আমেরিকা থেকে গত দুই সপ্তাহের আয় ১ লাখ ১২ হাজার ডলার, যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড। তবে গত তিন দিনে এই আয় আরও বেশি হবে। এদিকে ২১ জুলাই ভারতের বাজারে মুক্তি পেয়েছে ‘সুড়ঙ্গ’। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ৩১টি হলে সিনেমাটি চলছে। সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের রিভিউ ভালো। গত চার দিনে সিনেমাটির আয় ৫৫ লাখ রুপি। বর্তমানে এই আয় ৬৭ হাজার ডলারের মতো। রায়হান রাফি পরিচালিত সিনেমাটি ২৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মোট ১০৮টি হলে মুক্তি পাবে। সেখানেও সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের তুমুল আগ্রহ রয়েছে। এই আয় হয়তো নতুন রেকর্ড করতে পারে বলে দর্শকদের ধারণা।
গত বছর একই সময়ে ব্যবসাসফল ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ সিনেমা দুটিকে কেন্দ্র করে নতুন করে আলোচনায় এসেছিল ঢালিউড সিনেমার বাজার! সেই সময় সিনেমাটি দুটির টিকিট পেতে হিমশিম খেতে হয়েছে প্রবাসী বাঙালি দর্শকদের। সান কমিউনিকেশন ‘হাওয়া’ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিদেশি বাজার থেকে আয় করে ৪ লাখ ডলারের বেশি। এখন পর্যন্ত বিদেশের বাজারে সর্বাধিক আয় করা সিনেমার তকমা লেগেছে আছে ‘হাওয়া’য়। একটি সূত্র জানায় ‘পরাণ’ বিদেশ থেকে দুই কোটি (২ লাখ ডলার) টাকার বেশি টাকা আয় করেছে।
এর আগে জয়া আহসান ও চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত ২০১৮ সালে ‘দেবী’ সিনেমায় আয় ছিল দেড় লাখ ডলারের বেশি। আয়ের সঠিক তথ্য না জানা গেলেও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিবেশক সূত্রে জানা যায়, ‘আয়নাবাজি’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমাগুলো বিদেশেও সাড়া জাগিয়েছিল। প্রতিটি সিনেমার গড়ে ৫০ হাজার ডলারের বেশি আয় করে। সব মিলিয়ে গত এক দশকে এই সাত সিনেমার আয় গড়ে সাড়ে ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। টাকার পরিমাণে এই অঙ্ক ১৩ কোটি টাকার বেশি।
‘আয়নাবাজি’ ও ‘রিকশা গার্ল’ সিনেমার পরিচালক অমিতাভ রেজা এর আগে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদেশে আমাদের বাঙালি দর্শক এখন বলা যায় দেড় কোটি প্রায়। সংখ্যায় বৃহৎ দর্শক। কিন্তু আমাদের বাজার এখনো শিশুর পর্যায়ে রয়েছে। এখনো আমাদের প্রফেশনাল ডিস্ট্রিবিউটর তৈরি হয় নাই, তবে হতে শুরু করেছে। ভারত যে লাইনে ছবি রপ্তানি করে আমরা তার ধারেকাছেও নাই। তাদের বিশাল আধিপত্য। সেখানে সম্প্রতি আমরা পা রাখছি। তবে আমাদের ছবি দর্শকের কাছে পৌঁছালে অনেক বড় সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে। এই বাজারটা আকাশ থেকে পড়বে না। আমাদের ধরতে হবে।’
কয়েক বছরের তুলনায় বাণিজ্যিকভাবে এর আগে এত বড় বাজার পায়নি ঢালিউড সিনেমা। এর কারণ বর্তমানে প্রবাসী দর্শক ধরতে গড়ে তোলা হয়েছে পরিবেশক ব্যবস্থা।
বর্তমানে সিনেমা পরিবেশনের সঙ্গে বড় পরিসরে যুক্ত স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো। তারা ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে সিনেমা রপ্তানি করে। এ ছাড়া পরিবেশক হিসেবে আরও কাজ করছে বঙ্গজ ফিল্মস, বায়োস্কোপ ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক রাদুগা উল্লেখযোগ্য।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের সিনেমাকে যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ সিনেমার বাজার হিসেবে নিয়ে যেতে কাজ করছে পরিবেশক প্রতিষ্ঠান স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো। তারা ‘আয়নাবাজি’, ‘শিকারি’, ‘স্বপ্নজাল’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘শান’, ‘দেবী’, ‘হাওয়া’সহ একাধিক সিনেমা বিভিন্ন দেশে পরিবেশন করেছে। এর প্রধান মোহাম্মদ অলিউল্লাহ এর আগে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বলিউডের বিশাল মার্কেট। তারপরেই বিদেশে ভারতের দক্ষিণের সিনেমার বাজার। দক্ষিণের চেয়ে আমাদের দর্শক বেশি। তাদের চেয়েও বড় বাজার ধরতে আমরা কাজ করছি। আমাদের বাজার অপেক্ষা করছে, এটা বুঝে গেছি। এ জন্য আমাদের মানসম্পন্ন ছবি লাগবে। তবে এখানে কিছু বাধা আছে। বাধাগুলো পেরোতে পারলে ঢালিউড সিনেমার বাজার বিশাল, এটা প্রমাণ করব।’