আমির খানের ভাইকে নিয়ে বাংলাদেশের দুই পরিচালকের ‘ভার্চ্যুয়াল যুদ্ধ’
আমির খানের ভাই ফয়সাল খান সামনে আসেন অনেক পরে। তবে ঘটনা যা ঘটনা, তা আগেই ঘটে গেছে। বাংলাদেশের পরিচালক অনন্য মামুন শাকিব খানকে নিয়ে ‘দরদ’ নামে একটি সিনেমা বানাবেন। সেই সিনেমায় ফয়সাল খানের অভিনয় করার কথা ছিল। কয়েক দিন আগে পরিচালক নিজেই প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁর ছবিতে ফয়সাল খান অভিনয় করবেন। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু গত সোমবার ফয়সালের প্রতিনিধি যখন দাবি করেন, অভিনেতা বাংলাদেশি পরিচালকের ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হননি, তখন ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে। এর মধ্যে আলোচনায় আসে আরেক বাংলাদেশি পরিচালক জুলফিকার জাহেদীর নাম, যাঁর ছবিতে ফয়সাল অভিনয় করছেন। মামুন আর জুলফিকার পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে শুরু হয় ‘ভার্চ্যুয়াল যুদ্ধ’।
এর আগে ‘দরদ’ ছবিতে ফয়সাল খান অভিনয় করছেন দাবি করে অনন্যা মামুন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমরা ফয়সাল খানের কাছে চিত্রনাট্য পাঠিয়েছিলাম। সেটা তাঁর পছন্দ হয়েছে। তিনি সিনেমা করতে রাজি হয়েছেন। আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে, এটা নিয়ে আসলে বলার কিছু নেই। কিন্তু অনেকেই অনেক কথা বলছেন। তাঁরা সব সময়ই বলেন। ডিরেক্টর হিসেবে আমি যেটা বলব, সেটাই বিশ্বাস করা উচিত। কারণ, আমি সিনেমা করতে চাই। আমি মুখে বলেছি, সেটাই আসল।’
ওই সময় মামুন আরও বলেন, ‘এর আগে ফয়সাল খানকে গল্প পাঠানো হয়েছে। চরিত্র নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের অ্যাগ্রিমেন্টও হয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁর শুটিং। বেনারসে শুটিং শুরু হবে।’
ফয়সাল খানের সঙ্গে প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির কথা হয়। ফয়সাল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (অনন্য মামুন) চুক্তি না করে তো বলতে পারেন না আমি অভিনয় করছি। তাঁর কাছ থেকে তো কোনো টাকাও নেওয়া হয়নি। সেখানে এভাবে নাম ব্যবহার করে প্রচারণা খারাপ দেখায়। এটা তিনি ঠিক করেননি। এটি পেশাদার আচরণের মধ্যে পড়ে না।’ এমন বক্তব্য প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাপের মুখে পড়েন অনন্য মামুন। অনেকেই পরিচালকের কঠোর সমালোচনায় সোচ্চার হন।
কয়েক দিন চুপ থাকার পর গত বুধবার বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক পেজে দীর্ঘ পোস্ট দেন অনন্য মামুন। স্ট্যাটাসের একাংশে তিনি লিখেছেন, ‘একদিন হঠাৎ করে মুম্বাই থেকে একজন ফোন করে আমাকে বললেন, “আমি ফয়সাল খানের ম্যানেজার বলছি, ভাইজান (ফয়সাল খান) আপনার মুভিতে কাজ করতে চান।” আমি বললাম, “আমার ছবির মেইন হিরো তো শাকিব খান।” পরে আমি গল্প শোনালাম। ফয়সাল খান স্যার এবং তাঁর ম্যানেজারের খুব ভালো লাগল। আমাদের মধ্যে সম্মানী নিয়ে কথা হলো। তারপর তাঁরা একটি কনফার্মেশন ই-মেইল পাঠালেন। আমি তাঁদের জিজ্ঞেস করলাম, “আমি কি মিডিয়াতে জানাতে পারব?” তাঁরা সেটিও অনুমোদন দিলেন।’
একই স্ট্যাটাসের আরেক অংশে বাংলাদেশের এক পরিচালক জুলফিকার জাহেদীকে ইঙ্গিত করে অনন্য মামুন আরও লিখেছেন, ‘আমার ছবিতে ফয়সাল খান কাজ না করলে এমন কিছু যায় আসে না। তাঁর ম্যানেজারের রিকোয়েস্টেই আমি তাঁকে কাস্ট করতে চেয়েছিলাম। বাংলাদেশের এক “হনু ডিরেক্টর” শুনলাম তাঁকে নাকি অনেক বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে মেইন রোলে কাস্ট করেছেন। এরপর ফয়সাল খানের ম্যানেজার ফোন করে আমাকে বললেন, “মামুন জি, ভাইজান তো বড় ক্যারেক্টারে কাজ করছে বাংলাদেশের ছবিতে, কী করা যায় বলুন তো।” আমি বললাম, “আমার ছবির তো নিউজ হয়ে গেছে, যদি আপনাদের ইচ্ছা না হয়, আমার কোনো সমস্যা নেই।”’
এদিকে অনন্য মামুনের এই স্ট্যাটাস দেখে খেপেছেন বাংলাদেশের পরিচালক জুলফিকার জাহেদী। যাঁর ‘সুইং’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ফয়সাল খান।
‘হনু ডিরেক্টর’ প্রসঙ্গ টেনে এনে বুধবার রাতেই এক ভিডিও বার্তায় জুলফিকার জায়েদী বলেন, ‘অনন্য মামুন বলেছেন “হনু ডিরেক্টর”। এই “হনু ডিরেক্টর” কে আমি জানি না। কিন্তু আমি মনে করছি, এটি আমাকে বলা হয়েছে। অনেকেই জানেন, ফয়সাল খানকে নিয়ে আমার ও অনন্য মামুনের একটা ঘটনা ঘটেছে। অনন্য মামুন আমার ছোট ভাইয়ের মতো। কিছুদিন আগে তাঁকে আমি বলেছিলাম, পরিচালনা আপনার পেশা। আপনি এটি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আমি ক্লাস নাইনে পড়াকালীন সিনেমা পরিচালনা করেছি। আমি এটি পেশা হিসেবে নিইনি বলে নিয়মিত কাজ করি না। কারণ, আমি এটি দিয়ে পয়সা কামাব না।’
ভিডিওর আরেক অংশে মামুনের উদ্দেশে এই পরিচালক বলেছেন, ‘অনলাইন ঘেঁটে মামুন সম্পর্কে একটু জানার চেষ্টা করলাম। তাঁর নাম লিখে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখি, তিনি নাকি নারী পাচারের অপরাধে মালয়েশিয়াতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে ছিলেন। মামুন, আপনি আমার নামটি গুগলে সার্চ দিয়ে দিয়ে দেখুন, ওর মধ্যে কী আছে। আমার নামের আগে ট্যাগ কীভাবে লাগাতে হয়, আমি জানি। আপনাকে হনু বলে ট্যাগ লাগাতে হবে না। ওটি আমি কাউন্টও করি না। দ্বিতীয়ত, আপনি বলেছেন, সেই হনু ডিরেক্টর প্রচুর টাকা দিয়ে ফয়সাল খানকে নিয়েছেন। এসব কে বলেছে আপনাকে? আমি বলেছি? আমি বেঙ্গালুরু ও মুম্বাই মিলে ৯ বছর ভারতে ছিলাম। ওখানে আমি ঘাস কেটেছি? ফয়সালকে আমি মূল চরিত্রে নয়, বিশেষ একটি চরিত্রে কাস্ট করেছি। দর্শকদের বলতে চাই, ওই পরিচালকের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। ’
‘কাগজ’ ছবির এই পরিচালক অনন্য মামুনকে নিয়ে আরও বলেন, ‘আপনি এখনো শিশুর মতো আচরণ করছেন। আপনি বারবার বাংলাদেশের দর্শকদের বিভ্রান্ত করেন। আপনি যে “পাঠান” ছবির কথা বারবার বলেন, আপনি কি একা এনেছেন এই ছবি? আমরা কি জানি না, কারা এর সঙ্গে জড়িত? মনে হচ্ছে আপনি এমন কাজ করেছেন, পরবর্তী সময়ে অস্কার পাবেন।’
জাহেদীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অনন্য মামুন বলেন, ‘আমি ওই পরিচালক নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। আমি এসব নিয়ে কথা বলে তাকে হাইলাইট করতে চাই না। তাকে কে চেনে? তাকে মানুষ তো চেনেই না। ও আমাকে নিয়ে কথা বলছে আলোচনায় আসতে। যাতে সবাই তাকে চিনবে, এটা সে চাচ্ছে।’