ডিপজল আবার রাজনীতির মাঠে, এবার বিএনপির ব্যানারে

আবার রাজনীতির মাঠে ডিপজল। ছবি: কোলাজ

খল অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল গত নির্বাচনে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের হয়ে মনোনয়ন চেয়েছিলেন; কিন্তু সাড়া পাননি। সে খবর গণমাধ্যমেও প্রকাশ পায়। মনোনয়ন না পেলেও এই অভিনেতাকে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনের প্রচারণায়। সেই ডিপজল এবার বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির ব্যানারে রাজনীতির মাঠে আলোচনায় এলেন।

ফেসবুকে খুব বেশি সরব নন ডিপজল। এর মধ্যে হঠাৎ করেই রাতে ভক্তদের বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ডিপজল। সেই শুভেচ্ছাবার্তায় একটি পোস্টারও প্রকাশ করেছেন। পোস্টারে দেখা যায়, ডিপজলের মাথার ওপর বিএনপির লোগো। তার ওপরে রয়েছে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি। এ নিয়েই শুরু হয়েছে সমালোচনা।

বিজয় দিবসে উপলক্ষ্যে ছবিটি রাতে ফেসবুক পোস্ট করেন ডিপজল। ছবি: ফেসবুক

বিজয় দিবসের এই পোস্টার ফেসবুকে পোস্ট করে ডিপজল নিজের পরিচয় দিয়েছেন, সাবেক ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে। একই সঙ্গে লিখেছেন, তিনি একজন অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক ও বিশিষ্ট সমাজসেবক।

পোস্টার ভক্তদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এই খল অভিনেতা ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। যাদের মহান আত্মত্যাগে আমাদের এই স্বাধীনতা, সেই সব বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। লাখ শহীদের রক্তে লিখা, বিজয়ের এই ইতিহাস!! মুক্তির বার্তা নিয়ে বারবার, ফিরে আসুক ডিসেম্বর মাস।’

এর আগের সরকারের সময়ে একাধিকবার পোস্টার প্রকাশ করেন ডিপজল। সেসব পোস্টারে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে মনোনয়ন নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। নির্বাচনে আগ্রহ প্রকাশ করা তেমন একটি পোস্টারে ডিপজল স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনার উদ্দেশে লিখেছিলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা, যদি আমাকে ঢাকা-১৪ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করেন, আমার এলাকার মানুষের সেবা করার সুযোগ দেন, তাহলে আমি নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী।’ পোস্টারে সবার ওপরে লেখা ছিল জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। পাশে ছিল শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি।

মনোনয়ন চাইতে এই পোস্টার প্রকাশ করেছিলেন ডিপজল। ছবি: ফেসবুক

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ডিপজল ছিলেন বিএনপির সক্রিয় কর্মী। তিনি বিএনপির হয়ে নির্বাচন করে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে তিনি ভোল পাল্টাতে থাকেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে ভোল পাল্টানো শুরু করেন। সে সময় তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৪ (মিরপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন।
ডিপজল মনোনয়ন ফরম কেনার সেই সময়ে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে তাঁকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করে এ আসনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিতে চান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ওই আসনে আওয়ামী লীগের তখনকার এমপি আসলামুল হককে আবারও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।
২০২১ সালে আসলামুল হক মারা যাওয়ায় ঢাকা-১৪ আসন শূন্য হয়। তখন ওই আসন থেকে নির্বাচন করার আগ্রহের কথা জানান ডিপজল। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। পরে সে বছরের ২১ জুলাই ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগে সরব হন ডিপজল। আওয়ামী লীগ ৪ জুন থেকে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যে ফরম বিক্রি শুরু করে। তখন মনোনয়ন ফরম কিনতে যান ডিপজল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি।

ডিপজল
ছবি: ফেসবুক

এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন পাননি ডিপজল। সর্বশেষ এই নির্বাচনে ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মাইনুল হোসেন খান নিখিলের পক্ষে প্রচারণায় কাজ করেন তিনি। ডিপজলকে বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও প্রচারণায় দেখা যায়। সেই ডিপজল এবার পোস্টারে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ লিখছেন, বিএনপি থেকে তাঁর আওয়ামী লীগের পক্ষে আসা ঠিক হয়নি। আবার কেউ লিখছেন, আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করে এখন বিএনপিকে মাথার ওপরে তুলে রাখাও ঠিক হয়নি। মোহাম্মদ মোহন নামের একজন ডিপজলের ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করেছেন, ‘বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে। এ জন্য মনোয়ার হোসেন ডিপজল ভাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’

ডিপজলের পোস্টটি ভাগাভাগি করে জুবায়েদ ইসলাম নামের একজন কৌতূহলী ইমো দিয়ে লিখেছেন, ‘রাজনীতি করলে আমার আদর্শ হবে ডিপজল ভাই। সরকার যাবে আসবে তবে আমার গাবতলী আমার কাছে থাকা চাই। পোস্টার ব‍্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন হবে তবে আমার চেহারাটা ঠিক এক জায়গায় থাকতে হবে!’ রাকিব নামের একজন লিখেছেন, ‘৩৬০ ডিগ্রিতে ঘুরে গেলেন ডিপজল সাহেব।’ নাজমুল আলম নামের আরেকজনের মন্তব্য, ‘একটু চালাক না হলে জীবন কঠিন।’

ডিপজলের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপেও তাঁকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন