চলচ্চিত্র কমিশন গঠনসহ ২৪ দাবি

গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় ঢাকার গ্রাউন্ড জিরোতে আলোচনায় বসেছিলেন দেশের প্রায় শতাধিক চলচ্চিত্রকর্মীআয়োজকদের সৌজন্যে

চলচ্চিত্র সংস্কার বাক্‌স্বাধীনতার পরিপন্থী সব নিপীড়নমূলক আইন বাতিল, স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত চলচ্চিত্র কমিশন গঠনসহ ২৪টি খসড়া দাবি উত্থাপন করেছেন এই প্রজন্মের চলচ্চিত্রকর্মীরা।

গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় ঢাকার গ্রাউন্ড জিরোতে আলোচনায় বসেছিলেন দেশের প্রায় শতাধিক চলচ্চিত্রকর্মী ও চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। এ সময় ‘চলচ্চিত্র সংস্কার রোডম্যাপ ২০২৪’ নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা।

আলোচনার পর সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা জানান, ‘ব্যক্তির ঊর্ধ্বে গিয়ে সমষ্টির স্বার্থই হবে মূলকথা’—এই স্লোগানকে ধারণ করে চলচ্চিত্রশিল্পকে আমূল সংস্কার করার লক্ষ্যে কাজ করছেন তাঁরা।

এই আলোচনায় বিদ্যমান বাক্‌স্বাধীনতা পরিপন্থী সব নিপীড়নমূলক আইন বাতিল, স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত চলচ্চিত্র কমিশন গঠন, ফিল্ম কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা, চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের আমলাতান্ত্রিক কাঠামো সংস্কার করা, ফেডারেল ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করাসহ আরও অনেক বিষয় উঠে আসে।

আলোচনায় ঢাকার বাইরে থেকে অনেকে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন। সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই ২৪টি খসড়া দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। পরবর্তী সময়  আলোচনা ও মতামতের মাধ্যমে সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন হতে পারে।

গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় ঢাকার গ্রাউন্ড জিরোতে আলোচনায় বসেছিলেন দেশের প্রায় শতাধিক চলচ্চিত্রকর্মী
আয়োজকদের সৌজন্যে

দাবিগুলো হলো :
১। বিদ্যমান বাক্‌স্বাধীনতা পরিপন্থী সব নিপীড়নমূলক আইন বাতিল করতে হবে।
২। স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত চলচ্চিত্র কমিশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৩। স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত ফিল্ম কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৪। ফিল্ম ফিন্যান্স করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৫। কবিরপুর ফিল্ম সিটির নির্মাণকাজ দ্রুত সমাপ্ত করতে হবে এবং এফডিসি সংস্কার ও আধুনিকায়ন করতে হবে।
৬। চলচ্চিত্র শিক্ষার প্রসারে বিসিটিআইসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্রের বিভাগগুলোকে বিশ্বমানের চলচ্চিত্র শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৭। জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদান নীতিমালা সংস্কার করতে হবে।
৮। ডিজিটাল চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও পরিবেশন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৯। সাংস্কৃতিক চেতনা ও সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য ‘জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
১০। চলচ্চিত্র সংরক্ষণ (আর্কাইভাল) নীতিমালা সংস্কার করতে হবে।
১১। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, চলচ্চিত্র শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হবে।
১২। চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শনে সমাজের সব স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ করার সুযোগ সৃষ্টির কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৩। টেকসই চলচ্চিত্র উন্নয়ন পরিকল্পনা ও চলচ্চিত্র নির্মাণে পরিবেশবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।

১৪। বিদেশি চলচ্চিত্রনির্মাতা ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করার জন্য বৈশ্বিক নীতিমালার আদলে নতুন নীতিমালা তৈরি করতে হব এবং বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের বিকাশে চলচ্চিত্র ও পর্যটনকে একীভূত করে প্রকল্প প্রণয়ন করতে হবে।
১৫। তরুণ নির্মাতাদের চলচ্চিত্র নির্মাণে সুযোগ সৃষ্টির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৬। চলচ্চিত্র গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধিসহ গবেষণাকাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
১৭। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
১৮। চলচ্চিত্রের সঙ্গে দর্শকদের সম্পৃক্ত করার জন্য মাঠপর্যায়ে প্রকল্প প্রণয়ন করতে হবে।
১৯। চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট সব পেশাজীবী সংগঠনের অধিকার নিশ্চিত করতে ফিল্ম কমিশনকে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করতে হবে।
২০। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ২০২৩ সংস্কার করতে হবে এবং গ্রেডিং–পদ্ধতি চালু করতে হবে।
২১। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য ফেডারেল ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
২২। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের আমলাতান্ত্রিক কাঠামো সংস্কার করতে হবে।
২৩। ধর্মীয় অনুভূতি, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও ভাবমূর্তি এবং বাক্‌স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়গুলো বিবেচনা করে বিভিন্ন ধর্মের স্কলার, আইনজ্ঞ ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিত্বদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন ও পরিষ্কারভাবে বিষয়গুলো সংজ্ঞায়িত করতে হবে।
২৪। কোনো চলচ্চিত্র সমাজে বিতর্ক সৃষ্টি করার কারণে যদি সংশ্লিষ্ট নির্মাতা এবং কলাকুশলীর নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা তৈরি হয়, তাহলে তাদের যথাযথ নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে।

আরও পড়ুন