রাজ্জাকের বিপরীতে একমাত্র নায়িকা! অঞ্জনার ঘোর যেন কাটছিলই না...
বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি ঢাকাই সিনেমায় কাজ শুরু করলেও তাঁর মুক্তি পাওয়া প্রথম চলচ্চিত্র ছিল শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত ‘দস্যু বনহুর’। তবে আজিজুর রহমানের ‘অশিক্ষিত’ সিনেমায় রাজ্জাকের বিপরীতে প্রথম একক নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন। গান, অভিনয়, নির্মাণ মিলিয়ে ব্যাপক আলোচিত হয় সিনেমাটি। ২০২২ সালের মার্চে নির্মাতা আজিজুর রহমানের মৃত্যুর পর ছবিটি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছিলেন অভিনেত্রী।
‘অশিক্ষিত’ মুক্তি পাবে। তার আগে হলমালিকদের জন্য এফডিসিতে ছবির একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হলো। গানগুলো ছাড়া পুরো ছবিটি দেখানো হলো। ছবি শেষে মিলনায়তন থেকে বেরিয়ে হলমালিকেরা পরিচালক আজিজুর রহমানকে জানালেন, ছবি তাঁদের পছন্দ হয়নি। নায়িকা নতুন, ছবি চলবে না। প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন নতুন নায়িকা অঞ্জনা। হলমালিকদের কথা শুনে তিনি হতাশ হয়ে পড়লেন। সেদিনের স্মৃতিচারণা করে অঞ্জনা বলেছিলেন, ‘পাশে ছিলেন সত্যদার (সত্য সাহা) স্ত্রী।
হলমালিকদের কথা শুনে বউদির গলা ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। এ সময় আজিজ ভাই আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমি তাঁকেও জড়িয়ে ধরে কাঁদলাম।’
‘অশিক্ষিত’ নিয়ে হলমালিকদের আশঙ্কা সত্যি হয়নি। ১৯৭৮ সালে মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এমনকি ‘আমি এক পাহারাদার’, ‘আমি যেমন আছি তেমন রবো/ বউ হবো না রে’, ‘ঢাকা শহর আইসা আমার’ গানগুলোর ঠাঁই হলো মানুষের মুখে মুখে।
এ সিনেমাটি দিয়েই তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অঞ্জনা। নতুন নায়িকা থেকে হয়ে ওঠেন তারকা। এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে সেই সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘পারভেজ ভাই (মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা) হাত ধরে আমাকে সিনেমায় এনেছিলেন। কিন্তু আজিজ ভাই যদি আমাকে “অশিক্ষিত” ছবিতে না নিতেন, আজ আমি অঞ্জনা হতে পারতাম না। আমার জীবনের মাইলফলক “অশিক্ষিত”। সেই গল্প, সেই সুমধুর গান আর আসবে না আমাদের চলচ্চিত্রে। আজিজ ভাইয়ের অবদান কোনো দিন ভুলব না আমি।’
সেই সাক্ষাৎকারে ‘অশিক্ষিত’ ছবিতে কাজের সুযোগ পাওয়ার ঘটনাও ভাগাভাগি করলেন এই অভিনেত্রী। ছবিটি বানানোর সময় নায়ক ঠিক করা ছিল। নায়িকার খোঁজ চলছে। একদিন আজিজুর রহমানের অফিসে ডাকা হলো অঞ্জনাকে। আজিজুর রহমান ও সত্য সাহা জোট বেঁধে কাজ করতেন। সত্য সাহা অঞ্জনাকে ফোন করে বলেন, ‘তুই কি আমার অফিসে একবার আসতে পারবি?’
অঞ্জনার তখন অন্য একটি ছবির শুটিং চলছিল। ছুটি নিয়ে পরদিন গেলেন। তখনো জানতেন না, এ ছবিতে তাঁকে নেওয়া হবে। অঞ্জনাকে দেখেই সত্য সাহা বলেন, ‘তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। তুই রাজ্জাক ভাইয়ের নায়িকা হবি।’ অঞ্জনাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন রাজ্জাকের সঙ্গে। রাজ্জাকের বিপরীতে একমাত্র নায়িকা। অঞ্জনার ঘোর যেন কাটছিলই না।
‘অশিক্ষিত’ ছবির জন্য নিয়েছিলেন ২০ হাজার। এরপর শুরু হলো শুটিং। ঢাকা ও এর আশপাশে ২০ দিন শুটিং হয়েছিল ছবিটির। একটি গানের শুটিং হয়েছিল চট্টগ্রামে। শুটিংয়ের দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করে অঞ্জনা বলেছিলেন, ‘আজিজ ভাই বলেছিলেন, “তুমি তোমার মতো করে সংলাপ বলবে। তোমার ভেতরের গুণটাকে দেখানোর চেষ্টা করবে। আমি কিছুই বলব না। তুমি শুধু একটু ইমোশন ধরে রাখবা আর কমেডির জায়গায় ঠিকঠাক কমেডিটা করবা।” তবে মাঝে মাঝে শুটিংয়ের মধ্যে আজিজ ভাই হাসতে হাসতে মজা করে বলতেন, “এই স্টুপিড, এই স্টুপিড, তোরা সব স্টুপিড।” কথাগুলো খুব কানে বাজে।’
কোন তারকার কোন খাবার প্রিয়, শুটিংয়ে তাঁকে সেটা খাওয়াতে চেষ্টা করতেন আজিজুর রহমান। অঞ্জনা পছন্দ করতেন মিষ্টি। পরিচালকের কাছ থেকে মিষ্টি খাওয়ার স্মৃতিচারণা করে অঞ্জনা বলেছিলেন, ‘আজিজ ভাইয়ের সহকারী ছিলেন মনতাজুর রহমান আকবর। একবার সাভারে শুটিং চলছিল। তিনি আকবর ভাইকে দিয়ে সাভার থেকে অনেক রসগোল্লা আনালেন। এত খাবে কে! আমি বললাম, আজিজ ভাই এত মিষ্টি? মজা করে তিনি বললেন, “আরে খাও খাও, জীবনটাই তো খাওয়ার। খাওয়ার মধ্যে জীবনের সুখ।”’