রাজের মুখোমুখি রাজ
হঠাৎই অভিনয়ের প্রতি প্রেম। সুযোগের খোঁজে শহরজুড়ে ছুটে চলা। একসময় টুকটাক মডেলিং করতে শুরু করেন। অর্থনৈতিক সংকটে চাকরিতেও নাম লেখান। অভিনয়ের টানে সে চাকরি ছেড়েও দেন। শুরু হয় নতুন সংগ্রাম—একদিকে অভিনয়ের সুযোগ খোঁজা, অন্যদিকে ঢাকায় টিকে থাকার সংগ্রাম। এর মধ্যেই রেদওয়ান রনির আইসক্রিম সিনেমায় অডিশন দিয়ে টিকে গেলেন। সেই সিনেমা মুক্তির পরে সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ালেও মনমতো নতুন সিনেমার গল্প পাচ্ছিলেন না। আর্থিক সংকটে থাকার পরও পছন্দের বাইরে কোনো চিত্রনাট্যে কাজ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ক্যারিয়ারে বারবার ঝুঁকি নিয়েছিলেন বলেই হয়তো ‘আইসক্রিম’-এর নাদিম, ‘পরাণ’-এর রোমান, ‘হাওয়া’–এর ইব্রাহিম, ‘ন ডরাই’-এর সোহেল হয়ে উঠতে পেরেছেন তিনি। পাঠকেরা হয়তো বুঝে গেছেন, বলা হচ্ছিল শরীফুল রাজের কথা। চলতি বছর পরাণ, হাওয়ার পর এখন এই অভিনেতা এখন প্রশংসা পাচ্ছেন ‘দামাল’ সিনেমার মুন্না চরিত্রে।
‘পরাণ’ মুক্তির পরে ঢালিউডে আলোচিত নাম হয়ে ওঠেন শরীফুল রাজ। দেশের দর্শক নতুন করে আবিষ্কার করেন সম্ভাবনাময় এক অভিনেতাকে। ২ ঘণ্টা ১৯ মিনিট ব্যাপ্তির সিনেমায় পুরোটা সময় দর্শক তাঁর অভিনয় বুঁদ হয়ে ছিলেন। পর্দায় তাঁর গুন্ডামি, প্রেম, প্রেমিকাকে নিয়ে পাগলামি, বাঁচার আকুতি কখনো হাসিয়েছে, কখনো কাঁদিয়েছে। শুধু দর্শকই নন, দেশের গুণী অভিনেতা জাহিদ হাসান থেকে শুরু করে অনেকেই রাজকে ফোন করে অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। প্রায় মাসজুড়ে তাঁর ছবির টিকিট পাওয়াই দুষ্কর হয়ে যাচ্ছিল। এই অভিনেতা ঢালিউডে নিজেকে কতটা সফল মনে করেন?
রাজ বলেন, ‘সিনেমা নিয়ে এই প্রথম এত আলোচনা–সমালোচনা শুনছি। অনেকেই প্রশংসা করছেন। ভালো লাগছে। কিন্তু আমি কোথায় যাব, সেটা কখনোই ভাবি না। এটা বলাও যায় না। ঢাকা এসেছিলাম পড়াশোনা করতে। আর্থিকসহ নানা কারণে সেই পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি। অথচ এই পড়াশোনা আর টিকে থাকার খরচের জন্যই একসময় বাধ্য হয়ে তারকাদের পেছনে পার্শ্ব চরিত্রে কাজ শুরু করি। এভাবে অভিনয়ের প্রতি ভালো লাগা জন্মে। তখন অভিনয়ের জন্য নানা জায়গায় ঘুরেও দীর্ঘদিন কাজ পাইনি। ভাগ্য কাকে কখন কোথায় নিয়ে যায় এটা বলা যায় না। আমি শুধু পরিশ্রমে বিশ্বাসী।’
জুলাইয়ে ‘পরাণ’-এর পর রাজ নতুন করে আলোচনায় আসেন মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’ দিয়ে। ‘মাস্তান প্রেমিক’ থেকে একেবারেই ব্যতিক্রমী চরিত্রে—এবার মুখোমুখী চঞ্চল চৌধুরীর মতো অভিনেতার। প্রথম দিকে চঞ্চলের সঙ্গে অভিনয় নিয়ে কিছুটা সংশয়ে থাকলেও পর্দায় দেখা যায়, চঞ্চলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করতে। জেলের চরিত্রে দর্শকেরা তাঁকে শতভাগ মার্ক দিতেও কার্পণ্য করেন না। পরপর দুটি সিনেমার সাফল্যে দর্শকেরা তাঁর নামের আগে যুক্ত করেছেন অনেক বিশেষণ। দর্শকের বিচার মাথা পেতে নিয়ে আরও এগিয়ে যেতে চান রাজ, ‘অভিনয় কখনো প্রতিযোগিতার বিষয় নয়। আমি ভালো অভিনয় করি—এটা জোর করে চাপিয়ে দিলেও হবে না। এটা দর্শকেরা বিচার করবেন। আর আমি এখানেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। অনেক ভালো চিত্রনাট্য পাচ্ছি। সামনে দর্শকদের জন্য আরও ভালো কিছু উপহার দিতে চাই। আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করি। নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চাই।’
‘পরাণ’, ‘হাওয়া’ সিনেমার পর রাজ আবার আলোচনায় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়কের চরিত্রে। গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে ‘দামাল’। ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ এখনো চলছে। বলা যায়, প্রেক্ষাগৃহে এখন রাজের মুখোমুখি রাজ। পরিচালক সূত্রে জানা যায়, ‘দামাল’ ভালো ব্যবসা করছে। সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে এবারও দর্শকদের কাছে আলাদা নজর কেড়েছেন রাজ। ছবি মুক্তির আগে সাক্ষাৎকারে অভিনেতা তুলে ধরেছেন পর্দার ‘মুন্না’ হয়ে উঠতে তাঁর সংগ্রামের কথা—নারকেলগাছে উঠে ফুটবলে শট দিতে গিয়ে হাতের হাড় ফ্র্যাকচার হয়ে যায়, কোমরে ব্যাথা পেয়েছিলেন। এরপরও দেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের গল্পটি তাঁকে শক্তি জুগিয়েছে।
চলতি বছর রাজের মুক্তি পাওয়া আগের দুই সিনেমা হিট। সর্বশেষ দামাল-এর জন্যও প্রশংসা পাচ্ছেন। তবে ছবি হিট হবে কি না, সেসব নিয়ে ভাবেন না রাজ, ‘তিনটি সিনেমার ক্ষেত্রে একবারের জন্যও আমার মাথায় আসেনি ছবি হিট হবে কি না। শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করেছি। পরিচালকদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। রাফির কথাই যদি বলি, সে আমার ওপর অনেক কিছুই ছেড়ে দিয়েছিল। সুমন ভাইয়ের কথাও বলছি। সে কারণেই কিন্তু আমার চরিত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’