নায়িকা ববির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও চুরির মামলা, ববির পক্ষেও পাল্টা মামলা
এবার চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববির নামে চুরি ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন মুহাম্মাদ সাকিব উদ্দোজা। গত ২৩ জুন দুপুরে গুলশান থানায় মামলাটি করেন সাকিব। মামলা নম্বর ১৩/১৬৪। মামলার সত্যতা স্বীকার করেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম। তিনি জানান, এই মামলার দ্বিতীয় আসামি ববি, প্রথম আসামি মির্জা আবুল বাশার (৩৪)। তাঁরাও পরে পাল্টা মামলা করেছেন।
মামলাটির তদন্ত করছেন গুলশান থানার উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৩ জুন মামলাটি হয়েছে। এ ঘটনার পরই আরও একটি মামলা করেছেন ১৩ নম্বর মামলার বাদীর আসামিরা। বর্তমানে মামলা দুটি তদন্তাধীন। তিনি বলেন, ‘দুই মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।’
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করিয়া সাধারণ ও গুরুতর জখম, চুরি, ক্ষতিসাধন ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অপরাধ।’ পরে আরও বলা হয়েছে যে ‘এ ঘটনায় ওয়াইএন সেন্টারের ক্ষতির পরিমাণ দেড় লাখ টাকা ও চোরাই মূল্য এক লাখ টাকা, যা এখনো উদ্ধার হয়নি।’
মামলাটির বাদী ছিলেন মুহাম্মাদ সাকিব উদ্দোজা। তিনি ওয়াইএন সেন্টারের এজিএম। তিনি জানান, তাঁদের কাছ থেকে রেস্টুরেন্ট ভাড়া নেন আমান নামের একজন। এটার অবস্থান গুলশান ২–এর ১১৩ নম্বর সড়কে। আমান অর্থনৈতিকভাবে পুষিয়ে উঠতে পারছিলেন না। পরে ব্যবসায় তৃতীয় পক্ষ হিসেবে যুক্ত করেন আবুল বাশার ও চিত্রনায়িকা ববিকে। রেস্টুরেন্টের জিনিসপত্র তাঁরা কিনে নিয়েছেন। সেভাবেই চুক্তি করেন বলে জানান সাকিব।
ব্যবসার অংশ হিসেবে চুক্তিমতো আমানকে ৫৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। ববি ও বাশার প্রথমে ১৫ লাখ, পরে ১০ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন। কিন্তু দুটি চেকই ডিজঅনার হয়। এই টাকা চাওয়া নিয়েই আমান ও বাশার–ববির সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
সাকিব উদ্দোজা আরও বলেন, ‘আমান একসময় আমাদের তৃতীয় পক্ষের কাছে ভাড়া নিতে বলে। কয়েক মাসের ভাড়া বকেয়া থাকলেও মে মাসের ভাড়া দেন তাঁরা। পরে তাঁরা একই রসিদ দিয়ে আরও একটি বিল তৈরি করেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘ওয়াইএনসি কর্তৃপক্ষ আরও সাত লাখ টাকা বুঝে পেয়েছে।’ যা ছিল মিথ্যা। পরে আমরা বুঝতে পারি যে বাশার লোকটি অসৎ। তাঁকে আগের ভাড়ার নকল রসিদের কথা বললে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আমাদের লোকেদের মারতেও আসেন। তখন আমাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। বুঝতে পারি যে পেশিশক্তি খাটিয়ে রেস্টুরেন্ট দখল করতে চান বাশার। আমরা প্রথমে থানায় অভিযোগ করি ও ১৩ জুন জিডি করি।’
‘ভুবন’ নামের সেই রেস্টুরেন্টের মালিক আমান একসময় বাশার ও ববির রেস্টুরেন্টে আসা বন্ধ করার জন্য ২৩ জুন রেস্টুরেন্ট তালাবন্ধ করেন, যা দেখে বাশার রেগে যান। বাশার উত্তেজিত হয়ে গেলে জনতার হাতে গেটের বাইরে পিটুনিও খান বলে জানান বাদী সাকিব উদ্দোজা। তিনি বলেন, ‘মার খেয়ে চলে যান। পরে তিনি আবার এসে গাড়ি নিয়ে ফটক ভাঙেন। ভেতরে এসে ম্যানেজার জয়নালসহ আমাদের লোকদের ভয়ভীতি দেখান। অনেকের গায়েও হাত দেন। আমার নাকে ঘুষি মারেন। ছয় ঘণ্টা ধরে রক্ত পড়ে। আমরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা নিই। পুলিশ আসে। পরে আমরা মামলা করি। আমাদের মামলার নম্বর ছিল ১৩। ওরাও মামলা করে। ওদের মামলার নম্বর ১৪।’
সাকিব উদ্দোজা রাত নয়টার দিকে আরও বলেন, ‘আমরা দুজনের নামে মামলা করেছি। তাঁরা আমাদের মালিকসহ সব কর্মীর নামে মামলা করেছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জন। এ ঘটনার পর আমরা বসি। ঘটনার কোনো মীমাংসা হয় না। এর মধ্যেই গত শুক্রবার বাশার আবার তালা ভেঙে অনেক মালামাল নিয়ে যান। আমাদের হুমকি দিয়ে যান। পরে আমরাই এই খারাপ মানুষের হাত থেকে রক্ষার জন্য থানায় বসার পরিকল্পনা করছি।’
পরে ববির পক্ষ হয়ে মো. আব্বাস মামলা করেন। ভবনের মালিক শাহিনা ইয়াসমিন, তাঁর সন্তান জাওয়ান আল মামুনসহ ৭ জন ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনের নামে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘পরস্পর যোগসাজশে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করে গুরুতর জখম করা হয়েছে। ৫৫ লাখ টাকার মালামাল চুরি করা হয়েছে। একটি ঘড়ি চুরি হয়েছে, যার দাম চার লাখ টাকা। এ ছাড়া নগদ ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, দেড় ভরি স্বর্ণের চেইন ও একটি আইফোন চুরি হয়েছে। যা উদ্ধার হয় নাই।’
এ ঘটনা নিয়ে ববির অপারেশন পার্টনার (সহযোগী) আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেস্টুরেন্ট করার জন্য আমরা চুক্তিবদ্ধ হই। মূলত এটা ববির রেস্টুরেন্ট হওয়ার কথা ছিল। আমি ছিলাম অপারেশন পার্টনার। ববির পক্ষ থেকে কাজ করতাম। মে মাসের ভাড়াও দিয়েছি। আমাদের ইনভেস্টমেন্ট ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকার মতো হয়ে গেছে। এখন বিষয়টা দেখেন, যখন ববি কোনো রেস্টুরেন্ট করবে, সেটার কাগজপত্র নিয়ে অনেকের আগ্রহ থাকবে। সেই কারণেই আমরা মালিকপক্ষের কাছে পরে ভবনের বৈধতার কাগজ চাই। দিব দিব করে তাঁরা ঢিলেমি করেন। এখান থেকেই ঝামেলা শুরু হয়।’
বাশার জানান, তাঁরা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছেন, ভবনের কোনো কাগজ নেই। এই জন্য রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স করাও কঠিন হয়ে যায়। তাঁরাও কিছুটা বিপদে পড়েন। তিনি আরও বলেন, ‘অনেক বলার পরও বৈধ কাগজ দেন নাই। পরে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেন। তা ছাড়া ফায়ার এক্সিট নাই। এটা–সেটা নিয়ে ঝামেলা করেন। একদিন গিয়ে দেখি, আমাদের জিনিসপত্র সব বাইরে ফেলে রেখেছেন। এর প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো আমাকে মেরে তাঁরা নাটক সাজান। আমার কাছে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ রয়েছে। যাঁরা আমাকে মেরেছেন, তাঁরা সবাই ওই ভবনে থাকেে। বাধ্য হয়ে মার খেয়ে চলে আসি। আমি ছিলাম একা আর তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন।’
ঘটনার সেই ফুটেজ রয়েছে প্রথম আলোর হাতে। সেখানে দেখা যায়, অনেকেই ভবন থেকে আবুল বাশারকে মারতে মারতে নিচে নিয়ে যান। পরে পালাতে বাধ্য হন বাশার। তিনি বলেন, ‘পরে ঘটনাস্থলে যান ববি। যে কারণে ববির নামেও ভবনের মালিকেরা মামলা করেছেন। আর তাঁরা যে অভিযোগ করছেন, সেগুলো থানায় দেখাতে বলেন। তাঁরা বৈধতা দেখাক। তাঁরা উল্টো আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। এখন আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।’
একটি সূত্রে জানা যায়, রাত নয়টায় গুলশান থানায় বসার কথা ছিল। বসেছিলেন কি না, সেটা জানতে চাইলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘থানায় এসেছিল দুই পক্ষ। মালিক ও ভাড়াটের মধ্যে বিরোধ। তারা মামলা করেছে। দুই পক্ষই এখন জামিনে আছে। তারা এখন বসতে চাচ্ছে। এখানে আমাকে বলছে মধ্যস্থতা করতে। কিন্তু আমি তো মধ্যস্থতা করতে পারি না। তারা এসেছিল, আমি বসি নাই। তাদের বলে দিয়েছি বাইরে মিউচুয়াল হলে থানায় আসেন, আমাদের যা করণীয়, আমরা করে দেব। আমি সমঝোতা করে দিতে চাইনি। এখন বাকিটা তাদের সিদ্ধান্ত। তারা না বসলে আমাদের কাজ আমরা করব।’