নায়ক জসীমের সন্তানেরা কে কী করেন
১৯৫০ সালে আজকের দিনে জন্ম নিয়েছিলেন জসীম, বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয়স হতো ৭৩। দিনটি স্মরণ করছেন তাঁর সন্তানেরা। শৈশবে বাবাকে হারিয়ে মা নাসরিনের কাছে বেড়ে উঠেছেন রাহুলরা। মাত্র ৪৮ বছর বয়সে ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর মারা গেছেন জসীম। মৃত্যুর দুই যুগ পরও ভক্তদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে খলনায়ক থেকে নায়ক বনে যাওয়া জসীমের।
দুই যুগ ধরে বাবার স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন জসীমের তিন ছেলে—এ কে রাহুল, এ কে রাতুল এবং এ কে সামী। বাবার পথ ধরে অভিনয়ে নাম লেখাননি তাঁরা, কাজ করছেন সংগীতজগতে। তিনজনই যুক্ত ব্যান্ডের সঙ্গে। এর মধ্যে রাহুল ‘ট্রেনরেক’ ব্যান্ডের গিটারিস্ট ও ‘পরাহো’ ব্যান্ডের ড্রামার, রাতুল ও সামী যুক্ত আছেন ‘ওইনড’ ব্যান্ডের সঙ্গে। রাতুল ওইনডের ভোকালিস্ট ও বেজিস্ট, সামী ড্রামার।
জার্মানিতে আয়োজিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় হেভি মেটাল উৎসব ওয়াকেন ওপেন এয়ারে প্রথম বাংলাদেশি ব্যান্ড হিসেবে হেভি মেটাল ব্যান্ড ট্রেইনরেকের সঙ্গে অংশ নেন রাহুল। ২০০৯ সালে গানে অভিষেক ঘটে ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়ক জসীমপুত্র রাহুলের।
অল্পদিনের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের প্রিয় নায়কে পরিণত হন জসীম। তিনি ছিলেন এমন এক নায়ক, যিনি একাধারে ধুন্ধুমার অ্যাকশন দৃশ্য করে হাততালি কুড়াতেন, আবার আবেগের দৃশ্যে তাঁর অভিনয় দেখে নীরবে চোখের জল ফেলত দর্শক। তাঁর আসল নাম আবদুল খায়ের জসীম উদ্দিন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন।
গত শতকের সত্তরের দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ধারার অন্যতম প্রবর্তক। ঢাকাই চলচ্চিত্রে ‘ফাইটিং গ্রুপ’-এর শুরুটা কিন্তু এই জসীমের হাত ধরেই।
আজকের অনেক ফাইট ডিরেক্টর ও স্টান্টম্যান ছিলেন জসীমের ছাত্র। জসীম অভিনয় শুরু করেন ‘দেবর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে, ১৯৭২ সালে। ১৯৭৩ সালে প্রয়াত জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ ছবিতে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন জসীম। কয়েক বছর পর সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সবুজ সাথী’ সিনেমায় প্রথম নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। এই ছবিতে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর খলনায়ক হিসেবে আর অভিনয় করেননি তিনি। বরং তিনি শোষিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন পর্দায়।
পুরো ক্যারিয়ারে জসীম প্রায় ২০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো ‘তুফান’, ‘জবাব’, ‘নাগ-নাগিনী’, ‘বদলা’, ‘বারুদ’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘লালু মাস্তান’, ‘নবাবজাদা’, ‘অভিযান’, ‘কালিয়া’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘গরিবের ওস্তাদ’, ‘ভাইবোন’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘পরিবার’, ‘রাজা বাবু’, ‘বুকের ধন’, ‘স্বামী কেন আসামী’ ইত্যাদি।
(লেখাটি পুনঃপ্রকাশিত)