‘পারলে আমার মন থেকে শিমুলের নাম সরিয়ে দাও...’
পারুল: আমার শরীরটারে কবরে পাঠাইতে পারবা বাজান, মনটারে পারবা না!
বাবা: মণ্ডল সবই পারে।
পারুল: পারলে আমার মন থেকে শিমুলের নাম সরিয়ে দাও।
বাবা: পারুল, আমি তোর কইলজা ছিঁড়া ফালামু।
পারুল: আমার ভেতরের কোনো কিছুই তো আমার ভেতর খুঁইজা পাইবা না, বাজান। সবকিছু শিমুলের কাছে।
বাবা: তাহলে আমি শিমুলের সবকিছু শেষ কইরা ফালামু।
পারুল: শিমুলের কোনো কিছুই তো তার কাছে নাই, বাজান। ওর সবকিছু তো আমার কাছে।
এ সংলাপের পর পারুলকে মারলে আঘাত পান সিনেমার নায়ক শিমুলও...। কয়েক মাস আগের কথা। বাংলা চলচ্চিত্রের তুমুল হিট সিনেমা ‘শিমুল পারুল’ ছবির একটি ক্লিপ ভাইরাল হয়েছিল। ওপরের সংলাপ সেই ভিডিও থেকে নেওয়া।
১৯৯০ সালে মুক্তি পায় দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত সাড়াজাগানো সিনেমাটি। সেখানে জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়া ভাই’ হিসেবে পরিচিত নায়ক ফারুক এবং অভিনেত্রী সুনেত্রা। ‘শিমুল পারুল’ সিনেমাটি গ্রামবাংলার নিটোল প্রেমের চমৎকার চিত্রায়ণ।
একদিকে শিমুল-পারুলের ভালোবাসার অপরূপ স্নিগ্ধতা, অন্যদিকে গ্রামীণ নদীর চর দখল, লাঠিয়ালদের মারামারি, গ্রাম্য মোড়লের চক্রান্তে নায়ক-নায়িকার বিচ্ছেদ এবং নানা নাটকীয়তায় ছবির মধুর সমাপ্তি। শুধু সিনেমাই নয়, সে সময় ‘শিমুল পারুল’ ছবির প্রায় সব কটি গানই ছিল দর্শকদের মুখে মুখে। ‘শিমুল পারুল’ শুধু এ দেশে নয়, জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও। হয়েছিল রিমেকও।
সেই ঐতিহাসিক সিনেমার প্রাণভোমরা শিমুল চলে গেছেন ২০২৩ সালের ১৫ মে। বছর যেতে না যেতেই গত এপ্রিল মাসে না–ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন পারুলও। শুক্রবার প্রথম আলোকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। মহাকালের গভীরে হারিয়ে গেলেন ফারুক-সুনেত্রা জুটি। সুনেত্রার আগেই পরপারে পাড়ি জমান নায়ক ফারুক। সে কারণে শিমুলকে নিয়ে স্মৃতিচারণার সুযোগ পেয়েছিলেন সুনেত্রা ওরফে পারুল। ১৯৯০ সালে ‘পালকি’ সিনেমাও করেছিলেন এই জুটি। এর মাধ্যমে নায়িকা হিসেবে তুমুল খ্যাতি অর্জন করেন সুনেত্রা। সুনেত্রা একজন কুষ্ঠরোগীর চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন।
নায়ক ফারুকের মৃত্যুর পর গণমাধ্যমে সহ-অভিনেতার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সদ্য প্রয়াত অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘আমি সিনেমা থেকে নিজেকে অনেক আগেই সরিয়ে নিয়েছি। এসব নিয়ে কোথাও কথাও বলি না। নিজেকে বলা চলে রিজার্ভ করে নিয়েছি। তবু ফারুক ভাইয়ের প্রসঙ্গে কিছু কথা বলতেই হয়। তাঁর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। আমি মনে করি, স্মৃতিচারণা এমন একটি বিষয়, যা একা একা করতে হয়। আমি চাই না যেসব স্মৃতি ফারুক ভাই আমার কাছে রেখে গেছেন, সেসব সবার সঙ্গে শেয়ার করতে।’
‘শিমুল পারুল’, ‘পালকি’ সিনেমার অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি। ফারুক ভাই অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। আমার শ্রদ্ধা তাঁর জন্য চিরকাল থাকবে। ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি।’
অথচ সুনেত্রার মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণার জন্য নেই শিমুল (ফারুক)। শিমুলের পারুল একটা সময়ে গিয়ে এতটাই নিভৃতচারী হয়ে পড়েন যে তাঁর মৃত্যুর দেড় মাস পর জানা গেল, জনপ্রিয় এই চিত্রনায়িকা আর নেই।