এফডিসিতে ৪৫ মিনিট

দৃশ্যধারণের একটি সময়ের ছবি। ছবি: মনজুরুল আলম

‘এই রিপোর্টার, আপনেরা কোথায় গেলেন? এই সায়েরা বানু, তুমি কই? লাঠিসোঁটা যাঁর হাতে যেটা ছিল, সেটা নিয়ে সবাইকে আসতে বলো।’ এফডিসির পরিচালক সমিতির অফিস পাশ কাটিয়ে ক্যানটিনের পাশে দাঁড়াতেই শব্দগুলো কানে এল। মুহূর্তেই ভিড় আরও বাড়ল। দেখা গেল, কারও হাতে স্ট্যাম্প, কারও হাতে লাঠি বা রড। এর মধ্যে দুই পাশে সাংবাদিকেরা দাঁড়িয়ে গেলেন। দৃশ্যটি দেখে প্রথমেই মনে হয়, এখানে হয়তো কোনো সিনেমার শুটিং চলছে। পাশে একজনে সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সিনেমার মতো বড় আয়োজন হলেও আসলে শুটিং হচ্ছে নাটকের।

উচ্চস্বরে কথা বলা ব্যক্তিই নাটকের পরিচালক। তিনি আশিষ রায়। দীপ্ত টেলিভিশনের ‘দেনা পাওনা’ নাটকের শুটিং হচ্ছিল। পরিচালক একজন অভিনেত্রীকে আসতে দেখে বললেন, ‘এই সায়েরা বানু, তুমি যাও কোথায়? এরপরই তোমার সিন।’ পাশ থেকে একজন বললেন, ‘নাশতার বিরতি ছিল, তাই শিঙাড়া খাচ্ছিল।’ সূর্যের আলো বাড়ছে–কমছে, তাই কিছুটা তাড়াহুড়া। পরিচালক এবার দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

নির্দেশনা দিচ্ছেন পরিচালক। ছবি: প্রথম আলো

নায়কের বাবা ঋণখেলাপি হয়েছেন। এতে অফিসের কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন–বোনাস আটকে গেছে। কর্মচারীরা উত্তেজিত। তারা অর্থের জন্য আন্দোলন করছেন। পরিচালক বুঝিয়ে দিলেন শ্রমিকনেতাদের একজনকে, ‘আপনারা খুবই উত্তেজিত, মারমুখী। সবাই হাতে লাঠি নিয়ে এগিয়ে আসবেন। তখন নায়ক এরফান দাঁড়াবে। সে বলবে, ‘‘আপনারা একটু শান্ত হোন। আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই।” তখন আপনার (সামনে একজনকে দেখিয়ে) সংলাপ, “কিসের কথা? কোনো কথা নাই। এখন যা হইব, তা ফাটাফাটি, ওই ধর।” পরে দুই পা এগিয়ে আসবেন, এই অংশ এখন শুটিং করব।’

শিল্পী সমিতির রুম ত্রাণে ভরা। ছবি: প্রথম আলো

শুটিং ঠিকমতো হলেও সাংবাদিকদের একজনকে উত্তেজনার মুহূর্তে তেমন সিরিয়াস মনে হলো না। কাট বলে দ্বিতীয়বার শুটিং করতে হলো। দীর্ঘদিন পর এফডিসিতে এত মানুষের শুটিং। তাই অনেকেই কৌতূহল নিয়ে শুটিং দেখছিলেন। প্রশাসনিক অফিসের এক কর্মকর্তা জানালেন, এখনো আগের মতো শুটিং শুরু হয়নি। প্রায় ৪৫ মিনিট কেটে গেল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি)। পরিচালক সমিতির তথ্যমতে, বেশ কিছু সিনেমার নাম নিবন্ধন করা হলেও এখনো কোনো সিনেমার শুটিং শুরু হয়নি। তবে শিগগিরই নীরবতা ভাঙবে, এমনটাই আশা তাঁদের। মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে দেখা গেল কর্মব্যস্ত প্রশাসনিক অফিস। তবে বেশির ভাগ রুমেই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ছিলেন না। উৎপাদন বিভাগের পরিচালক রেজাউল হক বলেন, সবাই আছেন। হয়তো কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এমন নয় যে কাজে কেউ ফাঁকি দিচ্ছেন। যাঁর কাজ, তিনি করছেন। সবাইকে কাজ করতে হচ্ছে।

প্রশাসনিক ভবনে কর্মব্যস্ততা চোখে পড়লেও বেশির ভাগ রুমে তেমন কেউ নাই।
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে ব্যস্ত শিল্পী সমিতির অফিসে নেই কোনো চলচ্চিত্র শিল্পী। কেউ আসেন কি না, জানতে চাইলে অফিসের একজন বললেন, এখন চেয়ারে বসার মতো লোক নেই। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শিল্পী সমিতিতে তেমন কেউ আসেননি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল দেশে নাকি বিদেশে, সেটাও জানেন না তিনি। তবে রুমটির বেশ কিছু অংশজুড়ে ত্রাণসামগ্রী দেখা গেল। শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে ত্রাণ কেন দেওয়া হয়নি, জানতে চাইলেও সেটা অফিসের লোকেরা বলতে পারলেন না।

প্রশাসনিক অফিসের পাশে সাংবাদিকদের বড় জটলা। প্রযোজক সমিতির অফিসে বেশ খাওয়ার আয়োজন। জানা গেল, সবাই অপেক্ষা করছেন ওমর সানীর জন্য। বেলা একটায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ওমর সানী যানজটে আটকা পড়ায় সময়মতো শুরু করা যায়নি। কী উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন জানতে চাইলে পাশ থেকে আয়োজকদের একজন জানান, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে কেউ কেউ ঠিক থাকলেও কয়েকজন আসল লোককে বসানো হয়নি। এফডিসির লোক এখানে বঞ্চিত। সেটা নিয়ে ওমর সানী কথা বলবেন।