মায়ের জমানো টাকা আর শখের গাড়ি বিক্রি করে সিনেমা, অতঃপর নায়কের কান্না!
চ্যানেল আই রিয়েলিটি শো ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম দিয়ে বিনোদন অঙ্গনে কাজ শুরু আদর আজাদের। এরপর নাটক, টেলিছবির অধ্যায় শেষ করে নাম লেখান বড় পর্দায়। এরই মধ্যে কয়েকটি সিনেমা মুক্তিও পেয়েছে। বেশির ভাগ সিনেমার প্রযোজকও এই নায়ক। এবার ঈদে তিনি ‘লিপস্টিক’ নামে একটি সিনেমা নিয়ে আসার ঘোষণা দেন। তাঁর ধারণা ছিল, প্রেক্ষাগৃহপ্রাপ্তির দিক দিয়ে ২ নম্বর অবস্থান হবে ‘লিপস্টিক’ ছবির। ঢালিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী তারকা শাকিব খানের পরের অবস্থান হবে তাঁর। কিন্তু তাঁর সে আশায় গুড়ে বালি। মায়ের জমানো টাকায় ছবি বানানো এই নায়ক প্রত্যাশিত প্রেক্ষাগৃহ না পেয়ে কাঁদলেন। জানালেন ভবিষ্যৎ আশঙ্কার কথাও।
এবারের ঈদুল ফিতরে একসঙ্গে ডজনখানেক ছবি মুক্তি পাচ্ছে। বছরের অন্য সময়ে ছবি মুক্তির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কম থাকলেও এই সময়ে যেন বেশির ভাগ প্রযোজক–পরিচালক ছবি মুক্তি দিতে তোড়জোড় করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এবারের ঈদে এত ছবি মুক্তি পাচ্ছে। এক ঈদে এত ছবি মুক্তির বিষয়টি মোটেও ভালো চোখে দেখছেন না বেশির ভাগ সিনেমা হলের মালিক। তাঁদের বেশির ভাগের মতে, এই সময়ে পাঁচটি ছবি মুক্তি পেলেও ঠিক হতো। কিন্তু এত ছবি মুক্তি দেওয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
এবারের ঈদে সর্বাধিক ১২০ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে শাকিব খানের ‘রাজকুমার’ ছবিটি। এরপর প্রেক্ষাগৃহপ্রাপ্তির তালিকায় রয়েছে ‘ওমর’ ছবিটি, এটি ২৪ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির বিষয় চূড়ান্ত করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে আদর আজাদ অভিনীত ও প্রযোজিত ‘লিপস্টিক’ ছবিটি মাত্র সাতটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে বলে জানালেন তিনি নিজে।
আদর আজাদের দাবি, তিন দিন আগেও তাঁর ছবিটি প্রেক্ষাগৃহপ্রাপ্তির সংখ্যায় যেখানে থাকার কথা, তা হয়ে ওঠেনি। বিভিন্ন কারণে তা হয়নি। এমনকি সেন্সর বোর্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় ছবিটি একটা পক্ষ আটকে দিতেও চেয়েছে।
আদর আজাদ বললেন, ‘আমি আমার জোরে ছবিটি বানিয়েছি। আমার জোরে ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে আনতে চাই। আর সেটা অবশ্যই আমার গল্প, কনটেন্ট, আমার পরিচালক। এখানে ভালো, ভালো এবং সব ভালো। আমার কিন্তু এই ছবির পেছনে অনেক বিনিয়োগ আছে। আমি ঈদে আসব বলেছিও, তাই আসতে হবেও। কিন্তু এখন ১৩–১৪টি ছবি মুক্তি যখন পাচ্ছে, তখন সবাই পেশিশক্তি, টাকার গরম, রাজনৈতিকসহ সব ক্ষমতা দেখাচ্ছে। দিন শেষে আমি পরিবারের জন্য যা করছি, আমার পরিবার আমার জন্য যা কিছু করছে, সব উৎসর্গ করে ছবিটা করছি। আমি এখন হল না পেলে কই যাব! আমার সব টাকা, মায়ের জমানো টাকা এই ছবির পেছনে লগ্নি করা। আমার গাড়িও বিক্রি করে দিয়েছি!’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আদর আজাদ বললেন, ‘আমার গাড়ি বিক্রির টাকার চেয়েও মায়ের অনেক দিনের জমানো টাকায় এই “লিপস্টিক” ছবিটি। কিন্তু বিষয়টা তো সেটা নয়, আমি একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা চেয়েছি। আমার ছবিটা ঈদে সুন্দরভাবে মুক্তি পায়, সেটার একটা পরিবেশ চাইছিলাম। শুধু আমার আশপাশে কোনো ক্ষমতাবান বড় ভাই নেই বলে কি পিছিয়ে গেলাম! আমি তো ভালো একটা ছবি বানিয়েছি।
আমি কি দেখাতে পারব না ছবিটা? আমি এমনও ভাবতেছি, ঈদে ছবিটা যদি রিলিজ না করতে পারি, তাহলে তিন মাসের মধ্যে আমি আত্মহত্যা করব। আমি যে ছবিটা কীভাবে বানিয়েছি, কত কষ্ট করেছি, তা অল্প কথায় বলে বোঝাতে পারব না। আর এতে করে কিছু যায়–আসেও না। ইন্ডাস্ট্রির কিছুও আসে–যায় না। দিন শেষে আমি একজন শিল্পী, আমার জন্যই ছবিটা বানিয়েছি। একটা ভালো কনটেন্ট উপহার দিতে চেয়েছি ঈদে। কিন্তু যে স্বপ্ন দেখছিলাম, তা আর দেখতে পারছি না গতকাল থেকে। এই স্বপ্ন দেখতে দিচ্ছে না। এই অবস্থার পর, আজকের পর কেউ কি আমার ওপর ২ কোটি বা ৫ কোটি টাকা লগ্নি করবে! আমার ক্যারিয়ার কোথায় যাবে, তা–ও তো বুঝতে পারছি না।’
‘লিপস্টিক’ ছবিতে আদর আজাদের বিপরীতে নায়িকা পূজা চেরি। ছবিটির পরিচালক কামরুজ্জামান রোমান।