নির্বাচন কমিশন ও আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের কথাবার্তা রহস্যজনক মনে হয়েছে: নিপুণ
ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচিত মিশা-ডিপজল প্যানেলের নির্বাচিত কমিটির ফলাফল স্থগিত চেয়ে আদালতে রিট করেছেন পরাজিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নায়িকা নিপুণ আক্তার। মঙ্গলবার উচ্চ আদালতে এ রিট করেন তিনি।
বর্তমানে মেয়ের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এই অভিনেত্রী। রিট করার পর বুধবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোর কাছে নিপুণ বলেন, ‘আরও আগেই করা উচিত ছিল। ভোট হয়েছে শুক্রবার। ভোটের ফলাফল এসেছে শনিবার সকালে। রোববারই রিটটি করা দরকার ছিল। কিন্তু আমি অসুস্থ হয়ে পড়া এবং জরুরি কাজে যুক্তরাজ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। আমি আসার সময় সবকিছু প্রসেস করে রেখে এসেছিলাম। গত মঙ্গলবার আমার আইনজীবীর মাধ্যমে রিটটি করেছি।’
শুধু ভোটের দিনই নয়, ভোটের আগের দিন থেকেই মিশা-ডিপজল প্যানেলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন আপিল বোর্ডের যোগসূত্রে এই অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন নিপুণ। তিনি বলেন, ‘ভোট শেষ হওয়ার পর তখন সন্ধ্যা সাতটা। তখন থেকেই নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান ও আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যানের কথাবার্তা আমার কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান খসরু ভাই বারবার আমাকে বলছিলেন, “এখানে বসে থেকে আর লাভ নাই। বাসায় চলে যান। মিশা-ডিপজল পুরো প্যানেল জয়লাভ করবে।” আমি বারবার বলেছি, “হারজিত যা হোক, ফলাফল না নিয়ে এখান থেকে যাব না।” তখনো পোর্টফোলিও ভোটের বাক্সই খোলেনি, কীভাবে চেয়ারম্যান এসব বলতে পারেন?’
নিপুণ আরও বলেন, ‘ভোটের দিন সন্ধ্যায় ভোট গ্রহণ শেষ হলে আমি বাসায় গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে আমার এফডিসিতে আসি। তখন রাত হয়তো ১০টা বাজে। তার আগেই আমার প্যানেল থেকে নির্বাহী পরিষদের সদস্য পদপ্রার্থী সাদিয়া মির্জা আমাকে ফোন করে জানান, মিশা ডিপজল প্যানেল থেকে কেউ কেউ হুমকি দিচ্ছেন তাঁকে। কারণ, আগের দিন সাদিয়া ডিপজলের বিরুদ্ধে ভোট কেনার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। আমি এফডিসিতে ফেরার পর পরিবেশ ঘোলাটে দেখতে পাই।
যতই রাত বাড়ছিল, ততই ভোটকেন্দ্র ও বাইরের পরিবেশ আমার কাছে হুমকিস্বরূপ মনে হচ্ছিল। সেদিনের এমন পরিবেশ আমি আগে কখনো দেখিনি এফডিসিতে। পুরো আঙিনা তারা দখলে নিয়েছিল। ভোটের গণনা শেষ হতে তখনো অনেক সময় বাকি ছিল, কিন্তু তাদের হাবভাবে মনে হচ্ছিল, তখনই তারা পুরো প্যানেল জিতে গেছে। আমি নিজেও নিরাপদ মনে করিনি ভোট গণনার পুরো রাত। তাই আমিসহ আমার প্যানেলের কয়েকজন এক নম্বর স্টুডিওর মেকাআপ রুমে তালা মেরে ভেতরে বসে ছিলাম ভোটের ফলাফল পর্যন্ত।’
নিপুণের দাবি, ওই রাতের অনিয়মের অনেক কিছুই প্রমাণ তাঁর কাছে আছে। এই অভিনেত্রী অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বাতিল ভোটের সংখ্যা সঠিক দেননি। আমার জানামতে, ৮১টি ভোট বাতিল হয়েছে। কিন্তু তারা ৪০টি ভোট বাতিল দেখিয়েছে। এ নিয়ে স্পষ্ট করে কোনো কিছুই আমাদের প্যানেলকে জানায়নি নির্বাচন কমিশন।’
কিন্তু পরের দিন সকাল সাতটার দিকে ভোটে বিজয়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন কেন?—জানতে চাইলে নিপুণ বলেন, ‘যেহেতু আমি ভোটের ফলাফল পর্যন্ত ছিলাম। তা ছাড়া ওই সময় সেটি করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তা ছাড়া মিশা-ডিপজল প্যানেলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন, আপিল বোর্ডের যোগসাজশে ভেতরে-ভেতরে এত বড় অনিয়ম চলে আসছিল, সেটি ফলাফল প্রকাশের অনেক সময় পর স্পষ্ট হয়েছে।’
নিপুণের আরও বলেন , ‘আদালত তো আমাদের আস্থার জায়গা। যেসব ডকুমেন্টের ভিত্তিতে রিট করা হয়েছে, আমি বিশ্বাস করি, নবনির্বাচিত কমিটি স্থগিত হবে। আমাদের পক্ষে রায় আসবে।’
এদিকে নিপুণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চলচ্চিত্র শিল্পী সিমিতির নির্বাচন কমিশনের সভাপতি খোরশেদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রথম আলো। আজ রাত ৯টার দিকে তিনি বলেন, ‘নিপুণ যেসব অভিযোগ নিয়ে নিয়ে আদালতে রিট করেছেন, কাগজপত্র হাতে পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব। এর আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
উল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২০২৬ মেয়াদি নির্বাচনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদসহ বেশির ভাগ পদেই জয়লাভ করে মিশা-ডিপজল পরিষদ।