৩০ বছরের সংসারে একে অন্যের চোখে কেমন নাঈম-শাবনাজ
নাঈম–শাবনাজের সংসার আজ তিন দশকে পড়ল। দীর্ঘ এই তিন দশক নানা কারণেই তাঁদের জন্য ঘটনাবহুল। তরুণ বয়সে বিয়ে। চারপাশের নানান কথা। শুনতে হয়েছে বিয়ে টিকবে না, বিচ্ছেদ হবে—এমন কথা। আলোচনা–সমালোচনা সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে তাঁদের বলা যায় সফল এক দম্পতির উদাহরণ। সফল এই সংসারে তাঁরা একে অন্যের চোখে কেমন? একে অন্যের চোখে কি দোষ খুঁজে পান? শুরুতেই জানতে চাইলাম নাঈমের কাছে।
‘আমি তো শাবনাজের গুণ বেশি বলতে পারব না, দোষ কী, সেটা জানতে চান?’ হেসেই কথাগুলো বললেন নাঈম। তাঁর পাশে দাঁড়ানো শাবনাজ সব কথাই শুনছিলেন। তিনিও হেসে বললেন, ‘গুণ বলতে গিয়ে এত সময় নিচ্ছ কেন? তাড়াতাড়ি বলো। আমার কি কোনো গুণ নেই।’ পরে দুজনই হাসলেন। নাঈম বলেন, ‘দীর্ঘ এই সংসারে আমি দিন শেষে সব সময়ই খুশি। এর কারণ, শাবনাজ। প্রথমেই বলব, সংসার ধরে রাখার জন্য সব সময় শাবনাজ চেষ্টা করে গেছে। এখানে দুকথা হবে, সেটা স্বাভাবিক; কিন্তু ভুল কোনো সিদ্ধান্ত কখনোই নিইনি।’
স্বামী হিসেবে স্ত্রীর কাছ থেকে সব সময়ই ভালো পরামর্শ পেয়েছেন। সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়েছেন। দীর্ঘ এই সংসার জীবনে একাধিকবার ভেঙে পরেছেন নাঈম। সেই দিনগুলোতে সব সময়ই পাশে পেয়েছেন স্ত্রীকে। নাঈম বলেন, ‘আমি চিরকৃতজ্ঞ শাবনাজের কাছে। খারাপ সময়ে সে আমাকে আগলে রেখেছে। অনেক সময় সে যা করেছে, সেটা স্ত্রীর চেয়েও বেশি কিছু করা। যখন আমার অপারেশন হয়। সেই সময়ে হয়তো বড় কিছু ঘটে যেতে পারত। তখন সেই আমাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বাঁচিয়েছে।’
নাঈমের দর্শন হলো, একতরফা ভালোবেসে যাওয়া। এর পেছনে কোনো শর্ত থাকবে না। সেই ভালোবাসাই তাঁকে সুখী করেছে। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী হিসেবে শাবনাজকে সব সময় দেখেছি সাধারণভাবে জীবন যাপন করতে। তার কোনো বাড়তি চাওয়া নেই। সহজ–সরল জীবন। আরেকটা কথা, শাবনাজের মধ্যে কখনোই কোনো কুচক্রী বা কুটনি, কথা লাগানো—এগুলো দেখিনি। সংসারের সবকিছু সে সম্মানের সঙ্গে আগলে রেখেছে। আমাদের নিয়ে অনেক নেতিবাচক কথা শুনেছি। সেগুলো নিয়ে নিজেরাই কথা বলেছি। দূরত্ব তৈরি হতে দিইনি। আমাদের সংসার ৩০ বছর হলো, এটা নিয়ে গর্ব না এর পেছনে আমরা সংগ্রাম করেছি, সেগুলোই সংসার টিকিয়েছে। নানা সেক্রিফাইস করেছি, সেগুলোই আমাদের গর্ব।’
এবার আসি শাবনাজের দোষের কথায়? পাশ থেকে শাবনাজের অনুমতি নিতে নাঈম বললেন, ‘বলব’। পরে তিনি জানালেন, শাবনাজ অনেক বেশি ইমোশনাল। যে কারণে মাঝেমধ্যে রাগও হয়ে যায় এই চিত্রনায়িকার। নাঈম বলেন, ‘দেখা যায়, সব সময়ই আমাকেই রাগ ভাঙাতে হয়। দোষ করলেও রেগে অনেক সময় কোনো কথা বলবে না। আমিই তার রাগ ভাঙাই। আর দোষ বলব না, তার রান্না আমার অনেক পছন্দের; কিন্তু রান্না একটু কম করে। তবে আমার তাকে নিয়ে কোনো অভিযোগ নাই।’
এবার নাঈম ফোন এগিয়ে দিলেন শাবনাজের দিকে। ফোন স্ত্রীর হাতে দিয়েই বললেন, ‘আমি এখন থাকব না। আমার কী কী দোষ আছে বলো?’ শাবনাজ থাকার কথা বললেও হেসেই ঘর থেকে নাঈম বের হয়ে গেলেন। শাবনাজ বলেন, ‘সংসার করতে গেলে দোষত্রুটি সবারই থাকবে; কিন্তু কীভাবে কে দেখছে, সেটাই আসল কথা। আপনাদের ভাইয়ার সেই অর্থে আমি খুব বেশি দোষের কথা বলতে পারব না।’
কিছুটা থেমে শাবনাজ বলেন, ‘এখন এটা সত্য, আমি ইমোশনাল। অল্পতেই কোনো বিষয় নিয়ে হয়তো কান্নাও করি। আমার দোষ থাকুক বা না–থাকুক, আমি চাই নাঈম, মেয়েরা আমার রাগ ভাঙাক। সেটাই করে তারা। আমি জানি, নাঈম অনেক কেয়ারিং। আরেকটু বেশি কেয়ার করুক। সেটা যে শুধু আমার ক্ষেত্রে তা নয়, এটা সবার ক্ষেত্রেই হওয়া উচিত।’
ক্যারিয়ারে তখন চাঙা অবস্থা। এর মধ্যে নায়ক-নায়িকারা যেখানে ক্যারিয়ার গোছাতে ব্যস্ত, তখনই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন নাঈম ও শাবনাজ। এমন অল্প বয়সে বিয়ে করতে দেখে স্বয়ং এফডিসির সেই সময়ের অনেকেই মন্তব্য করেছিলেন, এই বিয়ে বেশি দিন টিকবে না। বিচ্ছেদ হবে নাঈম-শাবনাজের। এর মধ্যে অনেকেই ছিলেন, এই অভিনয়শিল্পীদের কাছের, চেনা জগতের মানুষ। তাঁরা নাঈম-শাবনাজের সামনে ভালো কথা বললেও অনেকের কাছে এই দম্পতি নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করতেন। তবে সেগুলো নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে না শাবনাজ।
শাবনাজ বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই যা–ই ঘটত, সবই নাঈমকে বলতাম। নিজেদের মধ্যে কোনো কিছু গোপন রাখি নাই। এই মধ্য দিয়েই বোঝাপড়া শুরু হয়। সবাই আমাদের বিষয়গুলো জানত। যে কারণে আমাদের মধ্যে আগে থেকেই বোঝাপড়া ভালো। আমরা একে অন্যকে সম্মান করি। একসঙ্গে সংসার করতে গিয়ে সবার আগে দরকার নিজেদের শ্রদ্ধা করা। পরিবারকে গুরুত্ব দেওয়া। সেই ৩০ বছর ধরে দেখছি নাঈমকে, এখনো সে বাইরে থেকে এলে, আমাদের জন্য কিছু নিয়ে আসবে। আমার পছন্দের পোশাক, পছন্দের খাবার এখনো সে নিয়ে আসে। বন্ডিং থাকলে সংসার এমনিতেই সুখের হবে।’
একটি সংসারে নানা ঘটনা ঘটে। সেখানে বেশির ভাগ দেখা যায়, তৃতীয় পক্ষকে এগিয়ে আসতে। এটা সংসারে আরও অশান্তি সৃষ্টি করে বলে জানালেন শাবনাজ। তিনি মনে করেন, নিজেদের সমস্যা ফলাও করে বলে বেড়ানো উচিত নয়। সংসারের কোনো কিছু তৃতীয় কেউ জানবেই না। তিনি বলেন, ‘এখন দেখি কোনো কিছু হলেই অনেক অভিনয়শিল্পী নিজেরাই ব্যক্তিগত ঘটনা সামনে নিয়ে আসেন। এই ঘটনাগুলো দিয়েও কেউ কেউ প্রচারণা করতে চান। একটি সংসারে সবার আগে বোঝাপড়া, প্রাইভেসি থাকা দরকার। ট্রল হওয়া শিল্পীদের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করে দেয়। সবার মধ্যে সংসার নিয়ে পজিটিভ ভাবনা থাকাটাই জরুরি।’
‘বিষের বাঁশি’ সিনেমায় কাজ করার সময় প্রেমের সম্পর্কে জড়ান নাঈম–শাবনাজ। ১৯৯৪ সালে হঠাৎ বিয়ে করে ফেলেন। ৩০ বছরে পৌঁছে গেছে সেই সংসার। তাঁরা জানান, দিনটি ঢাকার বাসায় কাটছে।