পরিবার, বন্ধুবান্ধব কেউ পাশে ছিলেন না, তিনি এখন সফল
ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোর মধ্যে আলোচিত হয়েছে ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’, ওটিটিতে মুক্তির পর প্রশংসিত হয়েছে দুটি সিরিজ—‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ ও ‘মহানগর ২’। গল্প, অভিনয়, নির্মাণের পাশাপাশি সিনেমা ও সিরিজ দুটির চিত্রগ্রহণও আলোচিত হয়েছে। তিনটি কাজের চিত্রগ্রাহকদের সংগ্রাম ও এগিয়ে চলার গল্প জেনেছেন মনজুরুল আলম। পর্ব-৩
২০১০ সালে হঠাৎই তাঁর মনে হয়, চিত্রগ্রাহকের সহকারী হিসেবে কাজ করবেন তিনি। কিন্তু সিনেমাটোগ্রাফি পেশা বেছে নিতে না করেন চারপাশের পরিচিত মানুষেরা। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, চারপাশের কেউই ফরহাদ হোসেনের পাশে ছিলেন না। ‘ইচ্ছা’র পেছনে একাই ছুটে চলেছেন। পরে যেন মনে হলো, গভীর এক সাগরে এসে পড়েছেন তিনি। সেখানে সফল হয়েই ফিরতে চান। আত্মবিশ্বাস ছিল, ভালো করতে পারবেন। এ জন্য দিনের পর দিন কষ্ট করেছেন। সেগুলো হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন। সেই ক্যামেরার কাজই তাঁর মুখে সত্যিকারের হাসি ফুটিয়েছে। ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমার চিত্রগ্রহণ দিয়ে প্রশংসা পাচ্ছেন তিনি। সাফল্যের পেছনের সেই গল্প শোনালেন ফরহাদ।
পরিবার থেকে ক্যামেরার কাজ নিয়ে বারণের পর কিছুটা দোটানায় পড়ে যান ফরহাদ। এমনও হয়েছে, অনেক সময় আর্থিক সংকটে থেকেও পরিবারের কাউকে সেগুলো বুঝতে দেননি। কাজের জন্য ঘুরলেও পরিবারকে বুঝিয়েছেন ভালো আছেন। কিন্তু এই সংকট ক্রমেই বাড়তে থাকে।
কারণ, দেশের প্রেক্ষাপটে ক্যামেরা সহকারীদের তেমন অর্থ দেওয়া হয় না। কাজ শেখার জন্য মুখ বুজে সব সহ্য করেছেন। শুরুর সেই সংগ্রাম প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ফরহাদ বলেন, এখনো নিজেকে সফল মনে করেন না তিনি। তবে কাজের জন্য ছুটতে চান। আরও বড় কাজের প্রতীক্ষায় থাকেন। এটাও তাঁর কাছে অন্য রকম সংগ্রাম। ফরহাদ বলেন, ‘দেশ–বিদেশে এখন অনেক বড় বড় বাজেটের কাজ হচ্ছে। তাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু আমাদের প্রেক্ষাপটে বড় স্কেলের কাজের সুযোগ কম। ভালোভাবে একটি প্রি–প্রোডাকশন শেষ করতে পারি না। বাণিজ্যিক সিনেমায় সেই চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। সেই চ্যালেঞ্জ আমি বারবার নিতে চাই।’
পেশা হিসেবে সিনেমাটোগ্রাফি গুরুত্বপূর্ণ। একজন নির্মাতা, অভিনয়শিল্পীদের চেয়ে সব সময় বেশি সজাগ থাকতে হয় তাঁকে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই অর্থে সম্মানটা অনেক সময়ই উপেক্ষিত। ফরহাদ বলেন, ‘একজন পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ভালো করলে তাঁকে যে সম্মান দেওয়া হয়, তাঁকে নিয়ে লেখালেখি করা হয় কিন্তু আমাদের মতো সিনেমাটোগ্রাফারদের গল্প আড়ালেই থেকে যায়। কাজের সম্মান কম, অনেক সময় পারিশ্রমিক ঠিকমতো পাওয়া যায় না। পেশাদারত্ব তৈরি হলে এই সেক্টরে অনেক সম্ভাবনার জায়গা রয়েছে। এখন আমাকে আর খেয়েপরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হয় না। কাজের অভাব নেই। এই জন্য ধৈর্য ধরতে হয়েছে।’
‘ক্যাসিনো’ সিনেমা দিয়ে শুরু ফরহাদের সিনেমাপাড়ায় যাত্রা। পরে ‘তালাশ’, ‘অন্তরাত্মা’, ‘মুখোশ’, ‘প্রেমপুরাণ’সহ বেশ কিছু কাজ করেছেন। এসব কাজের জন্য কখনো টানা ৭২ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হয়েছে, কখনো টানা ৫০ দিন পরিবারের বাইরে থাকতে হয়েছে তাঁকে। ‘যখন কোনো দর্শক আমার কাজ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন, কাজের প্রশংসা করেন, তখন কোনো কষ্টই মনে থাকে না। তখন দায়বদ্ধতা বাড়ে। মনে হয়, আরও ভালো কাজ করতে হবে, দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। এটা আমাকে দিয়েও সম্ভব। কারণ, একটি লোকেশনকে সবাই যেভাবে দেখেন, সেভাবে আমি দেখি না। আমাকে শৈল্পিক দিক থেকে দেখতে হয়,’ বলেন ফরহাদ। তাঁর গুরু চিত্রগ্রাহক নাবিদ খান চৌধুরী।