সাদেক বাচ্চুকে কি তবে ভুলে গেছে...
২০২০ সালের আজকের দিনে মারা যান অভিনেতা সাদেক বাচ্চু। দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কোভিড পজিটিভ হওয়ায় অভিনেতাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মহাখালীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সুস্থ করার জন্য চিকিৎসকেরা নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি চলে যান না-ফেরার দেশে।
বাংলা চলচ্চিত্রে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি অর্জন করেন সাদেক বাচ্চু। খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেও জনপ্রিয়তা পান এ অভিনেতা। জীবনের শেষ দিনগুলোতে অভিনয়ে অনিয়মিত ছিলেন তিনি। তাঁকে নতুন নাটক বা চলচ্চিত্রে কম দেখা যেত। এর আগে পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন ও সিনেমায় ছিল তাঁর পদচারণ।
স্কুলে পড়ার সময় অভিনয়ে আগ্রহ জন্ম নেয় তাঁর। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের মাধ্যমে প্রথম অভিনয় শুরু করেন তিনি। নাটকটি নির্দেশনা দেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আব্দুল গাফফার খান। নাটকটিতে অমল চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। বর্তমানের ইস্টার্ন প্লাজার জায়গাটির মাঠে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল।
সে সময়ের স্মৃতিচারণা করে এক সাক্ষাৎকারে সাদেক বাচ্চু বলেছিলেন, ‘আমি তখন ধানমন্ডি স্কুলের ছাত্র। ফোর–ফাইভে পড়ি। তখন পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়, সব জায়গায় কচিকাঁচার আসর, মুকুল ফৌজ, রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী আয়োজন করা হতো। পাড়ায় পাড়ায় ব্যায়ামাগার, পাঠাগার ছিল, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুখর থাকত চারদিক। এভাবেই আমরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে লাগলাম। সেভাবেই স্কুলের মাধ্যমেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “ডাকঘর” নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পাই।’
এরপর রেডিওতে নিয়মিত অভিনয় করতে থাকেন সাদেক বাচ্চু। তিনি বলেন, ‘সে সময় রেডিও স্টেশন ছিল শাহবাগে। সেখানে তখন আমার যাতায়াত শুরু হয়। খেলাঘর আসরে অভিনয়ের সুযোগ পাই। তখন সেখানে রণেন কুশারী, আব্দুল লতিফ ভাই, গোলাম মুস্তাফা, আনোয়ার হোসেন, শওকত আকবর সাহেব, আয়েশা আক্তারসহ আরও অনেক গুণী মানুষদের পদচারণ হতো।’
মহিলা সমিতির মঞ্চে এক নাটকে সাদেক বাচ্চুর অভিনয় দেখে তাঁকে বিটিভিতে ডেকে নেন প্রযোজক আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম। ১৯৭৪ সালে বিটিভিতে তিনি অভিনয় করেন ‘প্রথম অঙ্গীকার’ নাটকে। তাঁর অভিনীত নাটকের সংখ্যা হাজারের বেশি। প্রথম অভিনীত সিনেমা শহীদুল আমিন পরিচালিত ‘রামের সুমতি’।
বহুমাত্রিক এই অভিনেতার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার’, ‘জীবন নদীর তীরে’, ‘জোর করে ভালোবাসা হয় না’, ‘তোমার মাঝে আমি’, ‘ঢাকা টু বোম্বে’, ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’, ‘এক জবান’, ‘আমার স্বপ্ন আমার সংসার’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’, ‘বধূবরণ’, ‘ময়দান’, ‘আমার প্রাণের স্বামী’, ‘আনন্দ অশ্রু, ‘প্রিয়জন’, ‘সুজন সখী’ প্রভৃতি।
বরেণ্য এই অভিনেতা চলে গেছেন চার বছর হলো। একসময় দাপুটে অভিনেতা হিসেবে এফডিসিতে ছিল তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। বিভিন্ন আয়োজনে জ্যেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, নবীনদের সহযোগিতা করেছেন। তাঁর কাছে অভিনয়ের পরামর্শও নিয়েছেন নবীনেরা। এই গুণী অভিনেতাকে নিয়ে আজ পর্যন্ত বড় কোনো আয়োজন হয়নি এফডিসিতে। আজও কোনো স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সহশিল্পীদের উল্লেখযোগ্য কোনো আলোচনা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ শিল্পী শনিবার বললেন, ‘সাদেক বাচ্চুকে ভুলে গেছে এফডিসি। আসলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নামডাক না করলে, বড় পরিসরে কাজ না করলে অনেক গুণী শিল্পীকেও মনে রাখে না এ সিনেমাজগৎ। আফসোস!’