শাহরুখের ‘জওয়ান’–এ ক্ষতিগ্রস্ত রুবেলের ‘বৃদ্ধাশ্রম’, নিয়ম মানতে বললেন প্রেক্ষাগৃহের মালিকদের
বলিউড তারকা শাহরুখ খানের ‘জওয়ান’ বাংলাদেশে চতুর্থ সপ্তাহ ধরে চলছে। এখনো দেশের ৪২টি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে শাহরুখের ‘জওয়ান’ মুক্তিতে এর আগে ‘সুজন মাঝি’ ও ‘অন্তর্জাল’ ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যায়। আজ শুক্রবার দেশের ১৭টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে গায়ক এস ডি রুবেল অভিনীত ‘বৃদ্ধাশ্রম’ ছবিটি। সরকারি অনুদানের ছবিটির পরিচালকও রুবেল।
রুবেল আজ দুপুরে বলেন, ‘জওয়ান’ না থাকলে ‘বৃদ্ধাশ্রম’ আরও বেশি প্রেক্ষাগৃহ পেত। সিনেমা প্রদর্শনে বাংলাদেশ সরকারের যে নিয়ম রয়েছে, তা ‘জওয়ান’–এর ক্ষেত্রে মানছে না প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাইরের দেশের ছবির ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম মানতে অনুরোধ করেছেন রুবেল।
জানা গেছে, অ্যাটলি কুমার পরিচালিত ‘জওয়ান’ ছবিটি ভারতের পাশাপাশি একই দিনে মুক্তি পায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহেও। চতুর্থ সপ্তাহে এসে ৪২টি প্রেক্ষাগৃহে প্রতিদিন ছবিটির ২০৪টি প্রদর্শনী চলছে। সপ্তাহে এই প্রদর্শনীর সংখ্যা ১ হাজার ৪২৮ বলে জানান আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পরিচালক অনন্য মামুন।
‘বৃদ্ধাশ্রম’ ছবিতে এস ডি রুবেলের বিপরীতে নায়িকা হয়েছেন ববি। প্রথম দিনের প্রথম প্রদর্শনী কেমন ছিল, জানতে চাইলে রুবেল আজ বেলা তিনটায় বলেন, ‘বেশির ভাগ হল থেকে ভালো রিপোর্ট পাচ্ছি। ভালো লাগছে। সাধারণ শুক্রবার হিসেবে ভালো হয়েছে। তবে “জওয়ান” প্রচণ্ড বিরক্ত করছে। বলা যেতে পারে, আমার সিনেমা মুক্তি দেওয়াই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ, “জওয়ান” বড় বাজেটের ছবি। বিশেষ করে সিনেপ্লেক্স তো ব্যবসায়িক কারণে আমাদের হলই দিতে পারেনি। সিনেপ্লেক্সের মালিক যাঁরা আছেন, তাঁদের দেশপ্রেম বাড়াতে হবে। তা না হলে এই সংস্কৃতি আমি কিংবা অন্য কেউ বা প্রথম আলো বা অন্য কারও পক্ষেই জাগ্রত করা সম্ভব নয়।’
এস ডি রুবেলের মতে, দেশে ভারতীয় ও হলিউডি ছবি প্রদর্শিত হতেই পারে। তিনি বলেন, ‘যেহেতু চলচ্চিত্র নেতারা এই নীতিতে স্বাক্ষর করেছেন। যেহেতু সম্মিলিতভাবে চলচ্চিত্র নেতারা স্বাক্ষর করেছেন, তাই এ বিষয়ে বেশি মন্তব্যও করব না। কিন্তু আমি নবীন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে বলব, হলমালিকদের আমাদের দেশের সিনেমাকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। শতভাগ অগ্রাধিকার দিতে হবে। ভারতীয় ছবি এভাবে মুক্তি দেওয়ায় আমাদের দেশের ছবিকে অগ্রাধিকার দেওয়া শতভাগ কমে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
কথায় কথায় এস ডি রুবেল বলেন, ‘কাউকে অসম্মান ও ক্ষতিগ্রস্ত করে নয়, বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। আমাদের মানতে হবে যে আমরা ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করি। আর ভারতীয় সিনেমা ১৪০ কোটি লোকের, ইংরেজি সিনেমা সারা পৃথিবীর প্রতিনিধিত্ব করে। স্বাভাবিকভাবেই ১৪০ কোটি লোকের সিনেমার বাজেট কয়েক শত কোটি টাকা। ইংরেজি সিনেমার বাজেট তো হাজার কোটি টাকা। আমাদের সিনেমার বাজেট কত, তা তো সবাই জানেন। এখন কোনো পরিচালক যদি একটা ছবি বানিয়ে এক–দুই কোটি টাকা লস করেন, তাঁর পক্ষে আর কোনো দিন সিনেমা বানানো সম্ভব নয়। এমনকি বাইরের দেশে ৫০০ বা হাজার কোটি টাকা বাজেটের সিনেমার সঙ্গে আমাদের সিনেমার প্রতিযোগিতা করা সম্ভব নয়।’
শেষে রুবেল বলেন, ‘সিনেমার প্রদর্শনীর ব্যাপারে চলচ্চিত্র নেতা, হলমালিকসহ সবার উদ্দেশে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমাদের সরকারের যে নিয়ম আছে, ৬০ ভাগ দেশের সিনেমা ও ৪০ ভাগ বিদেশের সিনেমা—এটা অবশ্যই মানতে হবে। সরকার আইন করেছে মানার জন্য, না মানার জন্য নয়। বাইরের দেশের সিনেমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ট্যাক্সও বাংলাদেশি সিনেমার মধ্যে পার্থক্য থাকতে হবে। এটা ঠিক যে বিশ্বায়নের এই যুগে আমরা কাউকে আটকে রাখতে পারব না। কিন্তু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সবাইকে পেশাদারভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে দেশের প্রচলিত আইন মেনে। দেশপ্রেমের কথাও ভাবতে হবে।’
মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেন না অনেক সন্তান। বয়স হলে মা-বাবাকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে। শেষ জীবনে সন্তান-পরিজন ছাড়া কেমন কাটে মা-বাবার জীবন? এমন প্রেক্ষাপটেই তৈরি হয়েছে ‘বৃদ্ধাশ্রম’। এটি গায়ক এস ডি রুবেল পরিচালিত প্রথম সিনেমা।