সকালে খবরটি শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম: ববিতা
‘সপ্তাহখানেক আগেও আশা ছিল ফারুক ভাই সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবেন। তাঁর স্ত্রীর ছোট বোনের সঙ্গে ঢাকায় দেখা হলে এমনটাই জানিয়েছিল। তিনি ফিরছেন ঠিকই, কিন্তু কফিনবন্দী হয়ে। ফিরছেন নিথর দেহ নিয়ে। আজ সকালে খবরটি শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এর পর থেকেই মনটা খুব বিষণ্ন।’
চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুর খবর শুনে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন অভিনেত্রী ববিতা।
স্মৃতি হাতড়ে ববিতার মনে পড়ল, সর্বশেষ তাঁদের দেখা হয়েছিল ২০১৮ সালে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬ আসরে তাঁরা দুজন আজীবন সম্মাননা পান। এরপর আর দুজনের দেখা হয়নি, কথাও হয়নি। তবে অসুস্থ অবস্থায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকা বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ফারুকের খোঁজখবর পেতেন তাঁর স্ত্রী ফারহানা পাঠানের বোনের কাছ থেকে। ববিতা এখন বছরের লম্বা সময় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় থাকেন। কানাডায় একমাত্র সন্তান অনিক আর যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর ভাইয়েরা থাকেন।
ববিতা বললেন, দীর্ঘ অভিনয়জীবনে ৫০টির মতো ছবিতে তাঁরা একসঙ্গে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে ‘আলোর মিছিল’যেমন ছিল, তেমনি ছিল ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘কথা দিলাম’-এর মতো ছবিও। ববিতার ভাষ্য, এসব ছবির মধ্যে ক্ল্যাসিক ধাঁচের সিনেমা যেমন আছে, তেমনি মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমাও আছে। ছবিগুলোতে অভিনয় করতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কত শত শত স্মৃতি যে জমা পড়েছে!
কথায় কথায় ববিতা বললেন অভিনয়শিল্পী ও মানুষ ফারুক সম্পর্কে। ববিতা বলেন, ‘অভিনয়শিল্পী হিসেবে ফারুক ছিলেন অসাধারণ, অতুলনীয়। বিশেষ করে গ্রামীণ পটভূমির চলচ্চিত্রে এত অসাধারণভাবে মিশে যেতে পারতেন, তা আর কারও পক্ষে সম্ভব ছিল বলে মনে হয় না।
যখন তিনি ছবিতে কাজ করতেন, ইমোশনাল হয়ে কাজ করতেন। আর মানুষ হিসেবে ফারুক ভাইকে বাইরের কেউ কেউ বদরাগী, বদমেজাজি ভাবতেন। খুব ভয় পেতেন—এমনটা আমরা প্রায়ই শুনতামও। কিন্তু তিনি মোটেও তা নন। ছিলেন খুব নরম মনের মানুষ। শিশুসুলভ মনের একজন মানুষ ছিলেন আমাদের ফারুক ভাই।’
কথা বলতে বলতে ববিতার কণ্ঠ ধরে আসে। তিনি বলেন, ‘খারাপ লাগছে, আমাদের সমসাময়িক যাঁরা কাজ করতেন, সিনিয়র অনেকেই চলে গেছেন। আমরা কয়েকজন মাত্র এখন বেঁচে আছি। সৃষ্টিকর্তা ফারুক ভাইকে শান্তিতে রাখুক।’
দীর্ঘদিন রোগে ভুগছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ওরফে ফারুক। মাসের পর মাস সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। দেশে ফেরার জন্য উদ্গ্রীব ছিলেন তিনি। কিন্তু আর ফেরা হলো না তাঁর। আজ সোমবার সকালে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। মৃত্যুকালে রেখে গেছেন স্ত্রী ও দুই সন্তান। ফারুকের মৃত্যুর খবর প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন ছেলে রওশন হোসেন পাঠান। আজ সকালে রওশন প্রথম আলোকে জানান, অভিনেতা ফারুকের মরদেহ মঙ্গলবার ভোরের ফ্লাইটে ঢাকায় আনা হবে। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমালিয়া ইউনিয়নে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে তাঁকে।