‘আমার বন্ধু রাশেদ’–এর সেই আফনান এখন কোথায়?
সিনেমায় অভিষেক গর্ব করার মতো। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। হয়েছিলেন প্রশংসিত। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়, তাই মুক্তির পরে অনেকে ভেবেছিলেন ছবিগুলো তাঁদের ভাগ্য বদলে দেবে। কিন্তু সেই আশার যেন গুড়ে বালি। বলছি ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ সিনেমার আফনান চৌধুরী, ‘শোভনের স্বাধীনতা’ সিনেমার রুদ্র রায়হান ও ‘অনিল বাগচির একদিন’ সিনেমার আরেফ সৈয়দের কথা। তাঁরা কেউ কেউ অনেক চেষ্টা করেও অভিনয় অঙ্গনে টিকে থাকতে পারেননি। এখন কেউ স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যতে নির্মাতা হওয়ার, কেউ বড় কর্মকর্তা হতে চান। কেউ টিকে থাকতে চাকরির পাশাপাশি অভিনয় করে যেতে চান। যেমন চেয়েছিলেন ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ সিনেমার আফনান চৌধুরী।
‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ছবিতে অভিনয় করেছেন সেই সময়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া আফনান। সিনেমা মুক্তির পর সবার কাছে হয়ে যান রাশেদ। সিনেমা মুক্তির পর অপরিচিত আফনানের পরিচিতি বাড়তে থাকে, যেখানেই যেতেন, অনেকে ছুটে আসত, ‘রাশেদ ভাই, একটা ছবি তুলব’। পরিচিতরাও ‘রাশেদ’ বলে ডাকতেন। এক যুগ পেরিয়ে এখন আর দর্শকেরা সেই রাশেদকে তেমন একটা চিনতে পারেন না। চিনলেও সংখ্যায় খুবই কম।
আফনানকে না চেনার কারণ তিনিও আর সেই অর্থে অভিনয়ে নেই। তিনি জানান, তাঁর অভিনয় করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। ফোন নম্বর দিয়ে স্কুল থেকে এমনিতেই গিয়েছিলেন অডিশন দিতে। পরে তিনি জানতে পারেন, জাফর ইকবালের মুক্তিযুদ্ধের এই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ডাক পড়েছে।
সেদিন যতটাই খুশি হয়েছিলেন, তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলেন। নিজেকেই প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমি কীভাবে অভিনয় করব?’ পরে পরিচালক মোরশেদুল ইসলামের টিমের সঙ্গে এক মাসের গ্রুমিং হয়। রাশেদ চরিত্রের জন্যও প্রস্তুত হন। এ প্রসঙ্গে আফনান জানান, তিনি ন্যাচারাল অভিনয় করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। ছবিটি করতে গিয়ে অভিনয়কে ভালোবাসতে শুরু করেন।
পরে আফনান ভেবেছিলেন, হয়তো অভিনয়টাই করে যাবেন। সে আশা পূরণ হয়নি। বলা যায় সুযোগ না পাওয়ায় হতাশ। এই সময়ে তিনি তেমন কোনো গল্পের চিত্রনাট্য পাননি। কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করলেও সেগুলো মনের মতো হয়নি। ভবিষ্যৎ মিডিয়ায় থাকার ইচ্ছা আছে কি না এ নিয়ে জানতে চাইলে এর আগে তিনি প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, ‘রাশেদ চরিত্র করতে গিয়ে অনেক মজার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তখন অভিনয়টা কিছুটা শেখা হয়েছে। এটা বেশ উপভোগও করি। তবে অভিনয় নয়, ভবিষ্যতে পরিচালনার ইচ্ছা আছে।’
সিনেমায় অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর কাজের মান ধরে রাখতে চেয়েছিলেন তরুণ এই অভিনেতা। যে কারণে সেই সময়ে অনেকটাই বাছবিচার করে গল্পগুলোতে নাম লেখাতেন। দেখা যেত, বেশির ভাগ গল্পই এই অভিনেতার কাছে মানানসই মনে হতো না। তখন কাজটি ছাড়তে হতো। এভাবে কাজ ছাড়তে ছাড়তে একসময় পর্দা থেকে অনেকটাই দূরে থাকেন। ‘কাজের প্রস্তাব পেতাম। কিন্তু সব কাজ করা হতো না। কাজে নতুনত্ব পেতাম না। আর নিয়মিত কাজ না করলে যা হয়। হয়তো সবাই আমাকে ভুলে যেতে থাকে। হয়তো ধরে নেয় কাজ করি না। এভাবেই পর্দা থেকে দূরে। পরে একসময় মনে মনে হলো অভিনয়টা সেভাবে টানছে না। কারণ এক তো গল্প ভালো লাগত না; দ্বিতীয়ত, অভিনয় করে স্বস্তি পেতাম না। যে কারণে অভিনয়কে ক্যারিয়ার ভাবিনি।’– বলেন এই অভিনেতা।
অভিনয় না করলেও সব সময় তাঁকে টানে ক্যামেরার পেছনের কাজ। ইচ্ছা আছে নির্মাণ করার। বর্তমানে তিনি বন্ধু ও বড় ভাইদের সঙ্গে একটি প্রোডাকশন হাউসে কাজ করেন। তাঁরাই ঢাকায় চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটির উদ্যোগে শিশু–কিশোরদের সিনেমা নিয়ে উৎসব করেন। আহনাফ বলেন, ‘এখনো বিভিন্ন প্রজেক্টের ডকুমেন্টারির কাজ করি। কাজগুলোর সঙ্গে থাকতেই ভালো লাগে। শুটিংয়ের পেছনের যে কোনো কাজ আমাকে খুবই টানে। আপাতত এই কাজগুলো নিয়েই থাকতে চাই।’ ২০১৪ সালে সর্বশেষ তাঁকে ‘ইউটার্ন’ নাটকে দেখা গিয়েছিল। তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই থাকেন। গত গত ডিসেম্বর মাসে বিয়ে করেন।
২০১১ সালে মুক্তি পায় ‘আমার বন্ধু রাশেদ’। সিনেমাটিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিশোরেরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। সিনেমাটি মুক্তির পরে আলোচনায় আসে। সিনেমাটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে পরিচালক মোরশেদুল ইসলামের নাম। কারণ, সিনেমাটির গল্প অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া এক বালককে নিয়ে।
১৯৭১–এর সেই সময়ে পরিচালক নিজেও একই শ্রেণিতে পড়তেন। যে কারণে রাশেদ চরিত্রায়ণের সময় তিনি গল্প, প্রেক্ষাপট নিয়ে আফনানকে সহায়তা করেছেন। এই নিয়ে আফনান জানিয়েছিলেন, যেকোনো প্রয়োজনে পরিচালকই ছিলেন তাঁদের বড় ভরসার জায়গা। শুটিংয়ে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর কথা শুনেছেন তাঁরা। যা সিনেমাটিকে আরও বেশি বাস্তবসম্মত করেছে।