স্ত্রীর মৃত্যুর পরদিন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের মৃত্যু

সোহানুর রহমান সোহানসংগৃহীত

জীবনসঙ্গীকে হারিয়ে শোকে কাতর ছিলেন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। সোহানের স্ত্রী প্রিয়া রহমান মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন। স্ত্রীর মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সোহানও চলে গেলেন। আজ বুধবার বিকেলে উত্তরার বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন সোহান, অনেক ডাকাডাকি করেও তাঁর সাড়া পাননি গৃহকর্মী। পরে অচেতন অবস্থায় সন্ধ্যা ৬টা ৪৪ মিনিটে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে।

হাসপাতালে নেওয়ার আগে ঘুমের মধ্যেই সোহানের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা তানভীর ইসলাম। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সোহানের বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।

তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। তবে সোহানের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পারেননি চিকিৎসকেরা। মৃত্যুকালে তিনি দুই মেয়েকে রেখে গেছেন।

সোহানুর রহমান সোহান
ছবি: প্রথম আলো

তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তথ্যমন্ত্রী তাঁর শোকবার্তায় বলেন, ‘সোহানুর রহমান সোহানের চলে যাওয়া দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে এক বেদনাবিধুর অধ্যায়। করোনার ক্রান্তিকাল পেরিয়ে সিনেমাজগৎ আবার ঘুরে দাঁড়ানোর এই সময় তাঁর মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি।’

সোহানের মৃত্যুর খবরে ঢাকাই সিনেমার পরিচালক, শিল্পীরা হাসপাতালে ভিড় করেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন তিনি। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, মহাসচিব শাহীন সুমন, প্রযোজক খোরশেদ আলমসহ আরও অনেকে শোক জানিয়েছেন।

সোহানের মরদেহ উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে হিমঘরে রাখা হয়েছে। সোহানের স্ত্রী প্রিয়া রহমানকে টাঙ্গাইলে শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে। স্ত্রীর কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করার ইচ্ছাপোষণ করে গেছেন সোহান। তবে দাফনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সোহানুর রহমান সোহান ও তাঁর স্ত্রী প্রিয়া
ছবি: সংগৃহীত

সোহানুর রহমান সোহান তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেন নির্মাতা শিবলী সাদিকের সহকারী পরিচালক হিসেবে। সেটা ১৯৭৭ সালের কথা। এরপর তিনি শহীদুল হক খানের ‘কলমিলতা’ (১৯৮১), এজে মিন্টুর ‘অশান্তি’ (১৯৮৬) ও শিবলী সাদিকের ‘ভেজা চোখ’ (১৯৮৮) সিনেমাগুলোতে সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।

প্রধান নির্মাতা হিসেবে সোহানুর রহমান সোহান আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৮৮ সালে। তাঁর পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’। তবে তিনি সাফল্য পান ১৯৯৩ সালে। সিনেমার নাম ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এই সিনেমার মাধ্যমে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন এবং তারকাখ্যাতি পান প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ, নায়িকা মৌসুমী ও কণ্ঠশিল্পী আগুন।

সোহানুর রহমান সোহান
সংগৃহীত

সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত অন্যান্য সিনেমাগুলো হচ্ছে ‘আমার দেশ আমার প্রেম’, ‘স্বজন’, ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’, ‘অনন্ত ভালোবাসা’, ‘স্বামী ছিনতাই’, ‘আমার জান আমার প্রাণ’, ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’, ‘কোটি টাকার প্রেম’, ‘সে আমার মন কেড়েছে’, ‘দ্য স্পিড’ ও ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’ ইত্যাদি। সোহানের ‘অনন্ত ভালোবাসা’ সিনেমার মাধ্যমেই আত্মপ্রকাশ করেছিলেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। বর্তমানে যিনি ঢালিউডের শীর্ষ তারকা।

১৯৬০ সালের ১৫ অক্টোবর বগুড়ার ফুলবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করে সোহান। বগুড়া ও জয়পুরহাটে স্কুল ও কলেজজীবন শেষে ঢাকায় আসেন তিনি। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী কলেজে।

আরও পড়ুন