সিনেমার হিরোদের মতো প্রস্তুত হয়ে বাইরে বের হওয়ার বিষয়টি আমার মধ্যে নেই: আফরান নিশো
‘সুড়ঙ্গ’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেকেই বাজিমাত আফরান নিশোর। আজ মুক্তির ৩৭ দিন পার করেছে ছবিটি। ছোট পর্দার এই অভিনেতার এখন দিন কাটছে বেশ ফুরফুরে মেজাজে। আফরান নিশো বলেন, ‘মডেলিং যখন করেছি তখনো চেষ্টা করেছি, দীর্ঘদিন ধরে নাটকে অভিনয় করেছি, প্রমাণ করতে হয়েছে। আমরা যারা অভিনয় করি, কাজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হয়। যেহেতু “সুড়ঙ্গ” আমার প্রথম সিনেমা। অভিষেক এতটা ভালো হবে বুঝতে পারিনি। “সুড়ঙ্গ” ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়েছে। দর্শক ছবিটি গ্রহণ করেছেন। সব শ্রেণির দর্শক ছবিটি নিয়েছেন। একেবারে নিম্নবিত্তের মানুষ যেমন ছবিটি দেখছেন, আবার উচ্চবৃত্তের যাঁরা কখনোই সিনেমা দেখতে হলমুখী হননি, তাঁরাও সিনেমাটি দেখেছেন, দেখছেন। সব শ্রেণির মানুষ কাজটি কানেক্ট করতে পেরেছেন। ফলে কাজটি দেখে সবাই আরাম পেয়েছেন। এটি আমার জন্য নিঃসন্দেহে সোনায় সোহাগা বলতে পারেন। পরের ছবি আরও ভালো করার চেষ্টা থাকবে।’
কোথায় সুড়ঙ্গ-জাদু
নিশো মনে করেন, একটা ভালো প্রোডাকশনের মধ্যে অনেকগুলো ভাগ থাকে। বিশেষ করে অভিনয়, আর্ট নির্দেশনা, লোকেশন, প্রযোজনা, সিনেমোগ্রাফিসহ সব কটির মধ্যে ভালো সমন্বয় ছিল এই ছবিতে। সবচেয়ে বড় কথা, সবার হাতে প্রচুর সময় ছিল কাজটি তুলে আনতে।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি সেক্টর থেকেই কোনো কম্প্রোমাইজ না করে কাজটি করেছি। শুটিং করেছিলাম ৪০ দিনের ওপরে। ছবি দর্শকনন্দিত হওয়ার আগে আমাদের নিজের কাছে কাজ নন্দিত হয়েছি কি না, সেটি একটা ব্যাপার। সেটি আমরা ছবিটি করে ফিল করতে পেরেছি। আমরা এটি বিশ্বাস করেছি। এরপর দর্শকের কাছে পৌঁছেছে কাজটি।’
নিশোর ভাষ্যে, ছবিটির বেলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, ছবির সঙ্গে জড়িত পরিচালক, শিল্পী-কলাকুশলী, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান—সবই পরীক্ষিত ছিল। ফলে দেশের নানা প্রান্তে, নানা শ্রেণির মানুষের কাছে ছড়িয়ে যাওয়ার শক্তি পেয়েছে ছবিটি।
এই নিশো কি সেই নিশো
‘সুড়ঙ্গ’ মুক্তির আগে-পরে নিশো হলে হলে ঘুরেছেন, দর্শকের সঙ্গে বসে সিনেমা দেখেছেন, কথা বলেছেন। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সংবাদকর্মীদের নানা ধরনের প্রশ্ন-উত্তরে থাকতে হয়েছে। যা আগে কখনোই দেখা যায়নি তাঁকে। বড় পর্দায় বেড়েছে তাঁর ভক্তের সংখ্যাও। তাই সিনেমায় পা দিয়ে আগের নিশো আর এই নিশোর কোনো পার্থক্য টের পেলেন? নিশো বলেন, ‘জীবনযাত্রার কোনো পরিবর্তন নেই। আমি সেই সাধারণ নিশোই আছি। আপনারা লক্ষ করলে দেখবেন, আমি সিনেমা হলে যাই বা বাইরে কোথাও যাই, পোশাক থেকে শুরু করে সবকিছু সাধারণ। সিনেমার হিরোদের মতো প্রস্তুত হয়ে বাইরে বের হওয়ার বিষয়টি আমার মধ্যে নেই। আমি এভাবে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আলাদাভাবে টের পাওয়ার কিছু নেই।’
এ অভিনেতার বক্তব্য, ‘আমি যখন মডেলিং শুরু করি তখন মা বলছিলেন, “বাবা যেখানেই কাজ করো সেরা পাঁচে থাকবা।” পরে যখন নাটকে অভিনয় শুরু করি, তখনো মায়ের কথা মাথায় রেখে অভিনয় করে এসেছি। নাটকে কাজ করে দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছি। রাস্তায় বের হলে সে ভালোবাসা দেখেছি। এখন সিনেমায় কাজ করে দর্শকের আলাদা ভালোবাসা তৈরি হয়েছে, ব্যাপারটা তেমন নয়। তবে সিনেমা করতে এসে আলাদা অভিজ্ঞতা টের পাচ্ছি আমি। এই যে লুকিয়ে লুকিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে দর্শকের সঙ্গে বসে সিনেমা দেখা। সিনেমার বিভিন্ন দৃশ্যে, এমনকি সিনেমা শেষ হচ্ছে, দর্শকের মধ্যে যে উন্মাদনা, হাততালি দিচ্ছেন, সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে দর্শকের একেবারেই তাজা রিঅ্যাকশন—এসব আমার কাছে নতুন অভিজ্ঞতা। এসবে কত যে সুখ, কত আনন্দ, তা বলে বোঝানো যাবে না। এই জায়গাতে বলা যায়, নাটকের নিশো আর সিনেমার নিশো আলাদা।’
বিতর্ক, সমালোচনার মুখে
ছবি মুক্তির পরপরই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গত এক মাসে নানা ধরনের ইস্যুর জন্ম দিয়েছেন নিশো। বেশ কিছু ইস্যুতে অন্য নায়কদের ভক্ত থেকে শুরু করে কোনো কোনো সময় সাধারণ দর্শকের তোপের মুখে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে নিশো বলেন, ‘একটা জিনিস খেয়াল করবেন, ভালো কথার প্রচার–প্রসার কম, যখন ডাবল মিনিং কথা তৈরি হয়, তখন সেটি নিয়ে মাতামাতি বেশি। প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত মতামত আছে। সেটি অন্য মানুষের মতামতের সঙ্গে মিলতে না–ও পারে। যখন আমি একটা মতামত দিলাম, যেখানে কারও নামই উল্লেখ করলাম না, সেটি ইঙ্গিতপূর্ণভাবে কারও ওপর দিয়ে দেওয়া হলো।’
নিশো আরও বলেন, ‘আমার বক্তব্য, একজন মানুষ তাঁর সহধর্মিণীকে দেখাবেন কি না, সেটি অন্য বিষয়। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে উনি সিঙ্গেল না ম্যারিড, আমি সে কথা বলেছি। একসময় আমাদের বলা হতো, তোমাদের বৈবাহিক অবস্থার কথা জানিও না, তোমাদের মূল্য কমে যাবে। তুমি একজন হিরো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই হিরোইজমকে আমি সো–কল্ডই বলতে চাই।
একজন নায়ক তাঁর বউ-বাচ্চা সামনে আনবেন কি না, সেটা তাঁর বিষয়। বয়স গোপন করবেন কি না, সেটা তাঁর বিষয়। আমি আমার দর্শনের কথা বলেছি। যখন আমাকে জানতে চাওয়া হয়েছে, আমি চাপ অনুভব করি কি না? বলেছি, আমার বয়স ৪০ পার। কেউ বলেছে, বয়স গোপন রাখেন। কিন্তু সেটি আমি চাইনি। আমি নিজেকে নিজে পচাই। আমাকে যখন “বস”, “গুরু” বলা হয় তখন আমি বলি, এক সময় আমি নিজেই সিনিয়রদের এসব বলে পচাতাম। দেখেন এগুলো কিন্তু পিক করছে না, যেটি মিন করে বলিনি, সেটা নিয়ে মাতামাতি। তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই আমার বসবাস।’
এ অভিনেতার কথা, সেটি আমি বললাম না, সেটি প্রচার করা হলো। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেও হতে পারে। তারা চায় অন্যভাবে বিতর্ক করতে, তারা চায় একটা রিঅ্যাক্ট করতে। তাই এটি নিয়ে তর্ক–বিতর্ক থাকবেই। সবকিছু তো শেষ আছে। সময় সবকিছুর উত্তর দিয়ে দেয়। কারণ, দিন শেষে কাজটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমার তো এটি অভিষেক। আমাকে গ্রহণ করবে কি না, সেখানে আমরা কী দেখলাম। যা হোক, আমি এখনো বলছি, তখনো বলেছি, ইনটেনশনালি কারও দিকে তির ছুড়ে কোনো কিছু বলিনি আমি। আমি আমার দর্শনের কথা বলেছি।’
সিনেমাতে পা দিয়ে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়বেন ভাবেননি নিশো। আক্ষেপের সুরে এই অভিনেতা আরও বলেন, ‘যখন সিনেমাটি মুক্তির মুখে, তখন একদল লোক বলা শুরু করল, নাটকের মানুষ সিনেমায় চলবে না। তাহলে কি হুমায়ুন ফরীদিদের কি ইঙ্গিত করে কথা বলা হলো? আরে নাটকের মানুষই একজন নারী অভিনেত্রী আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনপ্রিয়তা নিয়ে কাজ করে চলেছেন। ওই দল তাঁকেও অপমান করল না? এই বিষয় নিয়েও তো আমরা ধরেতে পারতাম, ধরিনি। কারণ, একদন মানুষ আছে, যারা তর্ক–বিতর্ক তৈরি করতে পছন্দ করে। বলতে পারেন, এটিও তাদের দর্শন।’