প্রথম আলো :
শুভ জন্মদিন।
ফেরদৌস আহমেদ: ধন্যবাদ। এবার তো সবাই শুভ শুভ শুভ দিন, আজ ফেরদৌসের জন্মদিন, এভাবেই সবাই শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
প্রথম আলো :
নায়ক ফেরদৌস হিসেবে জন্মদিন পালন হতো। এবার তো নামের আগে সংসদ সদস্য যুক্ত হয়েছে।
ফেরদৌস আহমেদ: সংসদ সদস্য হিসেবে এটা আমার প্রথম জন্মদিন আর আমার জীবনের সেরা জন্মদিন। কারণ, এবারই প্রথম সামনাসামনি প্রধানমন্ত্রী জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
প্রথম আলো :
সংসদ সদস্য ফেরদৌসের ব্যস্ততা তো এখন অন্য রকম। গতকাল রাতে বাসায় গেলেন কখন?
ফেরদৌস আহমেদ: রাত সাড়ে ১০টার দিকে। প্রথমে আম্মার বাসায় যাই। ওখানে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ছিলাম। এরপর আমার বাসায় আসি। দুই মেয়ে নুযহাত, নামীরা, স্ত্রী তানিয়া, আমার শাশুড়িসহ কয়েকজন আত্মীয়স্বজন ছিলেন, তাঁরাও শুভেচ্ছা জানালেন। কেক কাটলেন। মায়ের সঙ্গেও কেক কেটেছি। রাত বেশি করিনি। কারণ, ভোর পাঁচটায় উঠতে হবে। ৩২ নম্বরে ৬ দফা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান ছিল। ওখানে দলের অনেকে শুভেচ্ছা জানান। সেখান থেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির একটা অনুষ্ঠান ছিল টিচার্স ট্রেনিং কলেজে, সারা দেশে পাঁচ লাখ গাছ লাগাবে তারা, সেটার উদ্বোধন করলাম। এরপর ধানমন্ডি ঈদগাহ মসজিদে নামাজ পড়ে ভাবছিলাম দুপুরের খাবার খেতে বাসায় যাব, কিন্তু তা আর হলো না। আমার ধানমন্ডির অফিসে আসতে হয়, সেখানে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সহযোদ্ধারা ফুল-কেক নিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি।
প্রথম আলো :
কয়টা কেক কাটলেন বিকেল পর্যন্ত?
ফেরদৌস আহমেদ: এখন পর্যন্ত ২৫টি কেক কাটা হয়েছে। রাতেও কাটা হতে পারে।
প্রথম আলো :
দীর্ঘ চলচ্চিত্রজীবন আপনার। সেই অঙ্গনে আপনার অনেক বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী ও শ্রদ্ধাভাজন আছেন। তাঁদের মধ্য থেকে কে সবার আগে শুভকামনা জানিয়েছেন?
ফেরদৌস আহমেদ: এটা সত্যি, সারা জীবনের জন্মদিনের চেয়ে এবারেরটা একেবারে ভিন্ন। এর মধ্যে আমার চলচ্চিত্রের সহকর্মী, বন্ধুরা ফোন করেছে। অনেকে ফেসবুকেও শুভকামনা জানাচ্ছে। এবার অভিনয় ও রাজনৈতিক অঙ্গন মিলিয়ে ভালো কাটছে। দারুণ অনুভূতি হচ্ছে। বরাবরের মতো এবারও পূর্ণিমা আমাকে প্রথম শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ফোন করেই বলছে, ‘জানি, তুমি অনেক ব্যস্ত এখন। তাই বেশি সময় নেব না।’ আমার সব বন্ধু আসলে মেনেই নিয়েছে যে আমি এখন অনেক ব্যস্ত। এটাও ঠিক, আমি এখন আমার রাজনৈতিক বন্ধু, সহকর্মী ও সহযোদ্ধাদের নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকব। এটাও একটা আনন্দ।
প্রথম আলো :
আপনার মূল পরিচয় নায়ক। এই অঙ্গনে আপনার ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য নতুন কী খবর দেবেন?
ফেরদৌস আহমেদ: অভিনয় শেষ হওয়া কয়েকটি ছবি এখনো মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এর মধ্যে আছে ‘দামপাড়া’, ‘মানিকের লাল কাঁকড়া’, ‘ক্ষমা নেই’, ‘রাসেলের জন্য অপেক্ষা’, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’, ‘যদি আরেকটু সময় পেতাম’। এই ছবিগুলো একেবারে অফ ট্র্যাকের। আমি তো তথাকথিত বাণিজ্যিক সিনেমার বাইরে গিয়ে অফ ট্র্যাকের ছবিই বেশি করি। এই ছবিগুলো ঈদের পর থেকে মুক্তি পেতে শুরু করবে। হিসাব করে দেখলাম, এক বছর ছবিগুলো দিয়ে ভক্তদের কাছাকাছি থাকব। এই একটা বছরে আমার রাজনৈতিক অঙ্গনটাকে আরও গোছাতে চাই। কারণ, আমার পাঁচ বছরের কাজের জন্য, মানুষের আস্থা তৈরির জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। মানুষও তো ভেবেছেন আমি একজন নায়ক, আবার হয়তো অভিনয়ে ফিরে যাব। কিন্তু এই যে তাঁদের কাছে থেকে, পাশে থেকে তাঁদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা, মহান সংসদে তুলে ধরা, এদিকটায় আমি এখন ফোকাস করতে চাই। বছর শেষে হয়তো নতুন ছবি নিয়ে ভাবব। এর মধ্যে কথাবার্তাও হচ্ছে। নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে ছবি শুরু করার ইচ্ছা আছে। অভিনয়ের ব্যাপারে আরেকটা বিষয়ও লক্ষ করছি।
প্রথম আলো :
কী সেই বিষয়?
ফেরদৌস আহমেদ: আমি দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ করছি, আমাদের দেশে কোনো শিল্পী যখন অভিজ্ঞ হন, ২৫-৩০ বছর ধরে কাজ করেন, তাঁদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। একজন রাজ্জাককেও মূল্যায়ন করা হয়নি, একজন ববিতা, কবরী, আলমগীরকেও করা হয়নি। অনেক সিনিয়র শিল্পীকে আমাদের দেশে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমিও যদি সেই চরিত্রাভিনেতা হয়ে যাই, তবে সেই মূল্যায়নটা হয়তো আমি নিজেও পাবে না। আর তা আমার গ্রহণ করতেও কষ্ট হবে। এই কারণে চাই, মানুষের মনে নায়ক হিসেবেই ছিলাম, সেটাই যেন থাকি।
প্রথম আলো :
আপনি নিজেকে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে দেখতে চান না?
ফেরদৌস আহমেদ: না না, আমি কোনো দিন চাই না। পাশের দেশেও যেভাবে সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে ভাবা হয়, আমাদের এখানে সেভাবে ভাবা হয় না। ভাবনার জায়গাটা এখনো তৈরি হয়নি। আমাদের জীবদ্দশায় দেখতে পারব কি না, জানি না। এ কারণে এত কষ্টে তৈরি করা জায়গাটা নষ্ট করতে চাই না। আমি একটা অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকতে চাই। আমরা সবাই তো উদাহরণ দিই, কিন্তু আমার সব সময় ইচ্ছা ছিল, আমি উদাহরণ হব। উদাহরণ হওয়াটা তো কঠিন কাজ, সেটার জন্য সেক্রিফাইজ করতে হয়, সাধনা করতে হয়, আমি সেটাই করতে চাই।