এফডিসিতে দুই সহশিল্পীর বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগ অরুণা বিশ্বাসের
এবার চলচ্চিত্রশিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস। গত রোববার এমন ঘটনা ঘটেছে বলে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন অরুণা বিশ্বাস নিজেই। তিনি বলেন, ‘এমন বর্ণবৈষম্য, ইভটিজিং, বডিশেমিংয়ের শিকার হব, ভাবিনি। আগেও হয়েছি, বলিনি। এবার বাধ্য হয়ে মুখ খুলতে হয়েছে। নিজের দ্বিতীয় ঘর এফডিসিতে এমন ঘটনার মুখোমুখি হওয়াটা অবিশ্বাস্য। কিন্তু আমার সঙ্গে সেটাই ঘটেছে।’
এমন ঘটনায় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন অরুণা বিশ্বাস। সেই চিঠিতে অরুণা উল্লেখ করেন, ‘২ এপ্রিল রোববার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় উপস্থিত হই। সভা শেষ হওয়ার প্রাক্কালে সমিতির দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জনাব আরমান আমার শরীর সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ও অসম্মানজনক মন্তব্য করে। একজন সিনিয়র শিল্পী হিসেবে আমি অপমানিত ও অসম্মানিত বোধ করেছি।’ এই চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমি যখন মিটিংয়ে প্রবেশ করি, তখন সহসাধারণ সম্পাদক সাইমন সাদিক আমাকে অসম্মান/অপমানজনক মন্তব্য করেছেন, যা একজন সিনিয়র শিল্পী হিসেবে জুনিয়র শিল্পীর নিকট থেকে কাম্য নয়। এমন আচরণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।’
অরুণা বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘ভালো একটি মনমানসিকতা নিয়েই মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে ভদ্রলোকটা (আরমান) প্রথম থেকেই আমার বাক্স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছিল। খুবই অ্যাগ্রেসিভ ছিল। যেভাবে সবার সামনে অপমানিত করল, এটা অপ্রত্যাশিত। এই ঘটনায় আমি তিন দিন মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। শুধু ভাবছি, তিনি আমার শরীর, আমাকে নিয়ে কথাগুলো কীভাবে বললেন। এই ঘটনার প্রতিবাদ হওয়া উচিত। আমি দেখতে চাই, কাঞ্চন ভাই কী করেন।’
জানা যায়, শিল্পী সমিতির সেই কার্যনির্বাহী সভায় উপস্থিত ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন, অঞ্জনা, নিপুণ আক্তার, রিয়াজ, সাইমন সাদিক, জাদু আজাদসহ আরও অনেকে। তাঁরাও কেউ কিছু বলেননি। অরুণা মনে করেন, এই ঘটনার প্রতিবাদ হওয়া দরকার। যাকে–তাকে যা–তা বলা একটা বাজে স্বভাব হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি।’
বর্তমান শিল্পী সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক সাইমন সাদিক। তিনি কী বলেছিলেন জানতে চাইলে অরুণা বলেন, ‘আমি সভায় বলছিলাম, সভাপতির সম্মতিক্রমে যেহেতু সাধারণ সম্পাদক পদ এখনো অমীমাংসিত, এখনো আদালত চূড়ান্ত রায় দেয়নি। সেখানে কথার মাঝেই সাইমন আমাকে হুট করে বলেন, “আপনি কেন এসেছেন?” আমি থ হয়ে গেলাম। একজন জুনিয়র শিল্পী কীভাবে আমাকে সবার সামনে এই কথা বলতে পারেন। শিল্পী সমিতি থেকে এই ধরনের অসম্মান পাব, কোনো দিন ভাবিনি। দুটি ঘটনাই আমার কাছে মনে হয়েছে বর্ণবৈষম্য, বডিশেমিং এবং বাক্স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা।’
এই ঘটনা সম্পর্কে সাইমন বলেন, ‘আপাকে আমি ফোন করেছিলাম। তিনি আমার সিনিয়র আর্টিস্ট। তাঁর প্রতি আজীবন শ্রদ্ধা। কখনোই কাউকে অসম্মান করি না। আপাকে ফোন দিয়ে বলেছি, কোনো কারণে যদি আমার ওপর কোনো অভিমান থাকে, তাহলে...তখন তিনি বলেন, ঠিক আছে। মিটিংয়ের ইস্যুতে কথা হয়েছে। অন্য কিছু না। এখানে তো একেকজনের মতামত একেক রকম হয়। এ ছাড়া অন্য কিছু না।’
অরুণার অভিযুক্ত আরেক ব্যক্তি আরমান। তিনি ফাইট ডিরেক্টর। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে তাঁর মুঠোফোনে কলা করা হয়। ফোনটি গ্রহণ করেন তাঁর সহকারী বিল্লাল। তিনি বলেন, ‘আরমান ভাই এখানে নেই। তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন। তাঁকে পাওয়া যাবে না। এলে আপনার নম্বরে ফোন দিতে বলব।’ ১০ মিনিট পর আরমান ফোন দিয়ে বলেন, ‘আমার সঙ্গে অরুণা দিদির পরিচয় অনেক দিনের। সেই সম্পর্ক হিসেবেই মজা করে বলেছিলাম, আপনি মোটা হয়ে গিয়েছেন। ভাত কম খাবেন। রুটি খেতে পারেন না। এই কথায় তিনি মাইন্ড করবেন ভাবলে বলতাম না। আমি আসলে তাঁকে দুঃখ দেওয়ার জন্য কিছু বলিনি। তিনি নিজেও আমার সঙ্গে মজা করেন। আমি কিছু মনে করি না।’
সবশেষে অরুণা বিশ্বাস বললেন, ‘শিল্পী হিসেবে আমি এখন এফডিসিতেও নিরাপত্তাহীন। যেখানে আমার সবকিছু বলতে পারার কথা, সেখানে আমি আইনের পক্ষেও কথা বলতে পারব না। আমি চাইলে কোর্টে যেতে পারতাম। তখন হয়তো সিনিয়র ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বলতেন, “আমরা আছি।” এর আগে একটি ঘটনা ঘটেছিল। তখন বসতে বলেছিল। এবার সেই পথেই হাঁটছি। এখন অপেক্ষায় আছি ইলিয়াস কাঞ্চন সাহেবরা কী সিদ্ধান্ত নেন। তারপর আমি আবার কথা বলব। তার আগে দেখি কী বিচার পেলাম।’