একেই বলে নায়ক, একেই বলে শাকিব খান...
ঢাকাই ছবির আলোচিত নায়ক শাকিব খান তাঁর সিনেমাজীবনের ২৫ বছর পার করলেন ২৮ মে। ১৯৯৯ সালের ২৮ মে তাঁর প্রথম অভিনীত ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছবিটি মুক্তি পায়। ওই ছবিতে খলনায়ক হিসেবে শাকিব খানের সহশিল্পী ছিলেন রাজীব ও মিশা সওদাগর। এ পর্যন্ত শাকিবের অভিনীত ছবির সংখ্যা প্রায় আড়াই শ। শাকিবের সঙ্গে খলনায়ক হিসেবে বেশির ভাগ ছবিরই সহশিল্পী মিশা সওদাগর। শাকিবের সঙ্গে মিশার অভিনীত ছবির সংখ্যা দুই শর কাছাকাছি। শাকিব খানের সাম্প্রতিক সিনেমা ‘তুফান’-এও সহশিল্পী আছেন মিশা সওদাগর।
চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে শাকিব খানের সফলতার ২৫ বছরের অর্জন সামনে রেখে তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বুধবার দুপুরে মিশা সওদাগর তাঁর ফেসবুক ভেরিফায়েড আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে একাংশে তিনি লিখেছেন, ‘তোমার জীবনের প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত শেষ শুটিং করা সিনেমার সঙ্গে আমি জড়িত। আমার তিন যুগের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে চাই, সাকসেসের জন্য সবাই কঠোর পরিশ্রম করে। কিন্তু সাকসেস পাওয়ার পর তোমার মতো ‘তুফানি’ পরিশ্রম করতে আমি কাউকে দেখিনি।’
এ সফলতাকে আরও এগিয়ে নিতে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে আরেক অংশে মিশা লিখেছেন, ‘২৫ পেরিয়ে ২৬–এর সফল অগ্রিম শুভেচ্ছা। সুস্থ থাকো। চলচ্চিত্রকে এমন করেই ভালোবাসো।’
এ ব্যাপারে মিশা সওদাগর প্রথম আলোকে বলেন, ‘২৫ বছর ধরে চলচ্চিত্রে শাকিব খানের পথচলা যে খুব সহজ ছিল, তা–ও নয়। আমার তিন যুগের ক্যারিয়ারে শাকিবের সহশিল্পী হিসেবে আমিই বেশি ছবিতে কাজ করেছি। আমি সামনে থেকে দেখেছি তার পরিশ্রম। একটা কথা বলি, শাকিবের লক্ষ্য মিস হয়নি।’
এই খলনায়কের বক্তব্য, ‘শাকিবের এই সফলতা, অন্য কেউ হাতে তুলে দেয়নি তাকে। সে নিজেই অর্জন করেছে। অনেক সময় আমরা দেখি, মানুষ একের পর এক সফলতা পাওয়ার পর একটা সময় গিয়ে পথ হারায়। কিন্তু শাকিব খানের বেলায় ভিন্ন চিত্র দেখলাম। একের পর এক সফলতার সিঁড়ি ভেঙেছে, পরবর্তীতে আরও পরিশ্রম করেছে। সফলতা তাকে থামিয়ে দেয়নি, আরও বেগবান করেছে। আর এতেই সে তার পথ হারায়নি। একেই বলে নায়ক, একেই বলে শাকিব খান।’
শুরু থেকেই শাকিব খানকে সম্ভাবনাময় মনে হয়েছিল মিশার কাছে। তাঁর ধারণা হয়েছিল একদিন জ্বলে উঠবে এই ছেলে।
শাকিবের প্রথম ছবি ‘অনন্ত ভালোবাসা’র শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা থেকে মিশা বলেন, ‘ওই ছবিতে রাজীব ভাই ও আমি ভিলেন। শাকিবের সঙ্গে আমাদের একটি দীর্ঘ ড্রামা সংলাপ ছিল। প্রথম টেকেই পরিচালক সোহান ভাই ওকে করে দিলেন দৃশ্যটি। সোহান ভাই তো শুটিংয়ের সময় খুবই খুঁতখুঁতে। ফাঁকি দেওয়ার কোনো পথ ছিল না তাঁর কাছে। সেই সোহান ভাই প্রথম টেকেই ওকে করলেন। রাজীব ভাই আমার দিকে তাকালেন, আমিও তাঁর দিকে তাকালাম। আমরা দুজনই শাকিবের সংলাপে মুগ্ধ হলাম। ওই দিনই শাকিবের অভিনয়ের তেজ বুঝেছিলাম।’
এ পর্যন্ত নায়ক-খলনায়কের জুটি হয়ে দুই শয়ের কাছাকাছি ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব ও মিশা সওদাগর। অর্ধেকের বেশি ছবিই সুপারহিট হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে, ‘প্রিয় আমার প্রিয়া’ ‘আমার স্বপ্ন তুমি’, ‘তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা’, ‘এক বুক জ্বালা’, ‘সন্তান আমার অহংকার’, ‘বলব কথা বাসর ঘরে’, ‘ডন নম্বর ওয়ান’, ‘ক্যাপ্টেন খান’, ‘হিরো দ্য সুপারস্টার, ‘ডন নম্বর ওয়ান, নিঃশ্বাস আমার তুমি’ ‘একবার বলো ভালোবাসি’ ইত্যাদি।
মিশা সওদাগর বলেন, ‘শুরুর দিকে শাকিব খান রোমান্টিক সিনেমা বেশি করত। মান্না মারা যাওয়ার পর শাকিব খানের হাতে অ্যাকশন ছবিগুলোও বেশি আসতে থাকে। ওই সময় থেকেই শাকিবের সঙ্গে আমার জুটির নিয়মিত যাত্রা শুরু হয়। একটা সময় এসে শাকিব-মিশা একটা স্থায়ী জুটি হয়ে দাঁড়ায়।’
মিশা জানান, কোনো কোনো মানুষের মধ্যে দেখা যায়, সম্মানের–অর্জনের দিক থেকে যত বড় হয়, অন্যের প্রতি তার আন্তরিকতা–সম্মান তত বাড়ে। শাকিব খানের মধ্যে সেই গুণটি আছে। সহশিল্পী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে এমন অনেক উদাহরণ আছে তার ঝুড়িতে।
এমন দুটি উদাহরণ টেনে এই অভিনেতা বলেন, ‘“ক্যাপ্টেন খান ছবির শেষ দৃশ্যের শুটিংয়ের ঘটনা। শাকিব আমাকে মেরে ফেলে রাখে। আমি চিত হয়ে পড়ে আছি। ওপর থেকে ড্রোন শট ধরবে আমাকে। অনেক রোদ তখন। আমার মুখের ওপর সূর্য। তাপ লাগছিল। শাকিব এটি খেয়াল করে চিৎকার দিয়ে ইউনিটের ছেলেদেরকে বলছিল, ভাইয়ের মুখে রোদ লাগছে। তাড়াতাড়ি ছাতা ধরো। যাও যাও...। ইউনিটের অন্য কারোর কিন্তু বিষয়টি খেয়াল ছিল না। এই-ই হলো শাকিব খান।’
অতি সম্প্রতি আরেকটি ঘটনার কথা স্মরণ করে এই অভিনেতা আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে “তুফান” ছবির শুটিংয়ে ভারতে গিয়েছিলাম। তাজ হোটেলে উঠেছিলাম। আগে থেকেই ওই হোটেলে শাকিব খানসহ ছবির প্রযোজক, পরিচালক ছিলেন। আমি ঢুকতেই দেখি তিনজন তিন চেয়ার নিয়ে বসে আছেন। আমার যাওয়া দেখেই “ভাই” “ভাই” সম্বোধন করে শাকিব দাঁড়িয়ে গেল। আমাকে বসার জন্য যত বেলা অন্য চেয়ার না আসল, ততক্ষণ দাঁড়িয়েই থাকল শাকিব। তাকে নিয়ে আর কী বলব?’
চলচ্চিত্রে শাকিব খানের ২৫ বছর পার করার মুখে দাঁড়িয়ে মিশার ভাষ্য, প্রতিনিয়তই শাকিব তার অভিনয়ে যত্ন নিয়ে এগিয়ে গেছে। এই পথে অনেক নায়কই ঝরে গেছেন, কিন্তু শাকিব আরও পরিস্ফুটিত হয়েছে।
এই খলনায়কের বিশ্বাস, যেভাবে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন, একদিন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নিজেকে পাকাপোক্ত করতে পারেন শাকিব। শাকিবই পারবেন বাংলা সিনেমাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিতে।