এফডিসির গেটে আটকে গেলেন ওমর সানী, ভেতরে চটলেন নূতন
এফডিসির গেটের বাইরে একটি কালো গাড়ি। সেই গাড়ি ঘিরে বিশাল এক জটলা। চারপাশ ঘিরে প্রিয় তারকাকে দেখছেন ভক্তরা। গাড়ির চালকের আসনে চিত্রনায়ক ওমর সানী। তিনি এফডিসিতে এসেছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভোট দিতে। কিন্তু চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন উপলক্ষে শৃঙ্খলার স্বার্থে নিয়ম করা হয়েছে, নির্দিষ্ট ব্যক্তির বাইরে কেউ এফডিসিতে প্রবেশ করতে পারবে না। এতেই আটকে গেলেন এই তারকা।
এ নিয়েই কিছুটা বিপাকে পড়ে যান ওমর সানী। তাঁর সঙ্গে প্রযোজক ইকবাল। পেছনে আরও একজন ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এককথা, দুজন যেতে পারবেন, এ অনুমতি আছে। দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেও কোনো লাভ হলো না। ভোট দিতে এসে তাঁকে কিছুটা সময় আটকে থাকতে হলো। পরে একজনকে নামিয়ে ভেতরে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করলেন ওমর সানী।
আজ শুক্রবার সকালে শুরু হয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে ভোট গ্রহণ। নবীন–প্রবীণ সব অভিনয়শিল্পীকে দেখা গেল ভোট দিতে এসেছেন। দুপুর ১২টার দিকে ভোট দিতে এসেছিলেন অভিনেত্রী নূতন। উৎসবের আমেজে তাঁকে ভোটকেন্দ্রের দিকে নিয়ে আসা হলো। ইতিমধ্যে তাঁকে ঘিরে ধরেছেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে একজন নায়ক মারুফ আকিব। ভোট দিতে যাওয়ার পথে তিনি এই অভিনেত্রীকে বললেন, ‘আপা, আমাদের কিছু ভোট দিয়েন। সব ভোট অন্যদের দিয়েন না।’ এ কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে চটে গেলেন নূতন।
কিছুটা রেগে নূতন বলতে লাগলেন, ‘আমি আমার ভোট যাকে ইচ্ছা তাকে দেব। তুমি বলার কে, আমি কাকে ভোট দেব।’ পাশ থেকে মারুফ বলতে লাগলেন, ‘আমি তো আপা ভোট চেয়েছি। চাইতেই তো পারি।’ পরে অবশ্য মারুফ নিজেকেই বললেন, ‘ভোট চেয়ে অপরাধ করেছি।’ তখনো নূতন রেগে আছেন। পাশ থেকেই তাঁকে ঘিরে ধরলেন সাংবাদিকেরা। একজন জানতে চাইলেন, ভোটের পরিবেশ কেমন? নূতন প্রশ্ন শুনে তড়িঘড়ি করে বললেন, ‘ভোট দিইনি, ভোটের পরিবেশ কেমন কীভাবে বলব।’ বোঝা গেল, তিনি রেগে আছেন।
এফডিসির চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির পাশের রাস্তা দিয়েই ভোট দিতে আসছিলেন আরেক অভিনেত্রী মুক্তি। তাঁকে ঘিরে ধরেছেন বাপ্পী চৌধুরী, অমিত হাসানসহ বেশ কয়েকজন। বাপ্পী চৌধুরী মুক্তির হাত ধরার কারণে এগোতেই পারছিলেন না এই অভিনেত্রী। বাপ্পী একসময় বললেন, ‘ভোট কিন্তু দিতে হবে।’ মুক্তি তখন হেসেই বললেন, ‘হাত ছাড়ো। হাত না ছাড়লে ভোট দিতে যাব কীভাবে।’ পরে অবশ্য বাপ্পীই তাঁকে নিয়ে এগিয়ে গেলেন ভোটকেন্দ্রের দিকে। এই চিত্রনায়ক ছাড়াও ভোট চাওয়ায় সবচেয়ে বেশি সবর দেখা গেছে মামনুন ইমন, জয় চৌধুরী, অমিত হাসান, রত্না, নাসরিন, ডনসহ আরও অনেককে।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখে বোঝা গেল, এবারের নির্বাচন অনেকটাই উৎসবমুখর পরিবেশে হচ্ছে। শিল্পীরাও একই কথা বলছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্যানেলের সদস্যদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চোখে পড়েছে। মিশা-ডিপজল প্যানেল থেকে সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন ডন। অন্যদিকে মাহমুদ কলি-নিপুণ প্যানেলে সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক মামনুন হাসান ইমন। বেশির ভাগ সময় দুই প্যানেলের খল অভিনেতা ও নায়ককে একসঙ্গে দেখা গেল।
ইমন বলেন, ‘ডন ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ক্যারিয়ার শুরুর দিকে। তিনি আমার বড় ভাই। ডন ভাই মানেই আমার কাছে অন্য কিছু। এখানে এই নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কিছু নেই। আমাদের সম্পর্ক আজও যেমন আছে, এটা সব সময় একই রকম থাকবে।’ অন্যদিকে ডন বললেন, ‘ইমন আমার ছোট ভাই। ওকে আমি অনেক আগে থেকেই স্নেহ করি। ও ভালো ছেলে। আমাদের এই সম্পর্ক বহুদিনের। নির্বাচনের জন্য এই সম্পর্ক কখনোই খারাপ হবে না। শুরুর দিক থেকে ওকে আমি সহায়তা করেছি। এখনো ওকে সেভাবেই দেখি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নায়ক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই শিল্পী সমিতির এই নির্বাচন ছিল উৎসবমুখর। কিন্তু দুই বছর ধরে এই সমিতির সদস্যরা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে গেছেন। নিজেদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেছেন। কেউ কেউ এখনো নিজেদের মধ্যে কথা বলেন না। এটা কারোরই কাম্য নয়। শিল্পীদের শিল্পীসুলভ আচরণই মানানসই। এখানে ক্ষমতা দেখানোর কিছু নেই। তবে আমরা খুশি, এবার নির্বাচনে উৎসবের আমেজ আছে। এখন ভোট গণনা নিয়ে কী হয়, সেটা নিয়েই কিছুটা চিন্তিত।’
১৯৭২ সাল থেকে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন আবুল হায়াত। পরবর্তী সময়ে শিল্পী সমিতির নির্বাচন শুরু হলে সব সময়ই তিনি ভোট দিয়েছেন। এবারও খুশিমনে ভোট দিতে এসেছেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। কিন্তু মন খারাপ করে বললেন, ‘নির্বাচন হলেই ভোট দিই। এবারও দিচ্ছি। সব সময়ই চাওয়া থাকে, ভালো কিছু হোক। সেটা হচ্ছে না। এই এফডিসির উন্নয়ন হচ্ছে না। এখানে এখন আর সিনেমার শুটিং করার পরিবেশ নেই। বাধ্য হয়ে আমাদের অনেক কষ্ট করে রাস্তাঘাটে শুটিং করতে হয়। অথচ এখানে কত সিনেমার শুটিং করেছি। এফডিসিতে পুকুর ছিল, জঙ্গলের মতো জায়গা ছিল, রাস্তা ছিল। যেখানে শুটিং করা যেত। এখন এখানে শুধু ভবন আর ভবন। শুনছি আরও ভবন তৈরি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, সিনেমার চেয়ে এগুলোতেই মনোযোগ বেশি। যে কারণে সিনেমাই দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে।’