এফডিসিতে মারামারি: ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
গতকাল মঙ্গলবার ছিল শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার দিন। তাই শপথও নিয়েছেন প্রত্যেক সদস্য। বিকেলে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এফডিসি প্রাঙ্গণ। মারামারি-ধস্তাধস্তি, চেয়ার ছোড়াছুড়ি আর হইহট্টোগোলে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েন সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীরা। নতুন কমিটি শপথের পর এমন ঘটনার জন্য হয়তো প্রস্তুত ছিলেন না কেউই। কারণ, এই কমিটির সংবাদ সংগ্রহেই সেখানে গিয়েছিলেন একদল বিনোদন সাংবাদিক।
জানা গেছে, শিল্পী সমিতির সদস্য খল অভিনেতা শিবা সানুর সঙ্গে ইউটিউবারদের বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। একসময় পুরো পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে এগিয়ে যান সাংবাদিকেরা। কিন্তু তাঁদের সঙ্গেও শুরু হয় বাগ্বিতণ্ডা। সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়। কেউ কেউ বলছেন, চিত্রনায়িকা ময়ূরীর মেয়ের সাক্ষাৎকার নিতে চাইছিলেন কয়েকজন ইউটিউবার। ময়ূরীর মেয়ে সাক্ষাৎকার দিতে অনীহা প্রকাশ করলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা খল অভিনেতা শিবা সানু বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে এগিয়ে আসেন। তিনি ওই প্রশ্নকর্তার কাছে জানতে চান, “তুমি সাংবাদিক নাকি ইউটিউবার?” এরপর ওই প্রশ্নকর্তাকে এফডিসি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। মূলত এই কাটাকাটির পর থেকে গণ্ডগোলের সূত্রপাত। এরপর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গায়ে হাত তোলার খবর। এফডিসির শিল্পী সমিতির কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন সদ্য নির্বাচিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরী ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো।
ঘটনার পর প্রকাশ্যে এসেছে বেশ কয়েকটি ভিডিও। এর একটিতে চিত্রনায়ক জয় চৌধুরীকে মারমুখী দেখা যায়। তিনি প্রকাশ্যে অযোগ্য ভাষায় সাংবাদিক ও ইউটিউবারদের কথা বলে গালাগালিও করেন। এরপর ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ থেকে দেখা গেছে, জয় চৌধুরীর হাতে লাঠির মতো কিছু একটা ছিল। এফডিসির শিল্পী সমিতির অফিস সহকারী জামালকেও দেখা গেছে চেয়ার ছুড়ে মারতে। চলচ্চিত্রের ফাইটার গ্রুপের একটা অংশও এই হামলায় অংশ নিয়েছে। এরপর পুরো এলাকায় অস্থির অবস্থা বিরাজ করে। পরিস্থিতি পুরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এফডিসিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও আসেন।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় আহত হয়েছেন দৈনিক খবরের কাগজের বিনোদন প্রতিবেদক মিঠুন আল মামুন, বাংলাভিশনের ক্যামেরা পারসনসহ ১০ জনের মতো সংবাদকর্মী ও ইউটিউবার। মামুন জানান, কোনো কারণ ছাড়াই তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছেন শিবা শানু এবং জয় চৌধুরী।
এই হামলায় কোন কোন শিল্পী মদদ দিয়েছেন, তা নিয়েও চলছে বিচার–বিশ্লেষণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন খল অভিনেতা শিবা শানু, অভিনেতা জয় চৌধুরী, আলেকজান্ডার বো, নায়ক রুবেলসহ চলচ্চিত্রের বেশ কয়েকজন শিল্পী।
প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানান, এই হামলার শুরুটা হয় খল অভিনেতা শিবা শানুকে দিয়ে। এরপর হামলা চালান শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরী ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো। একপর্যায়ে এই ঘটনায় অংশ নেন এফডিসির ফাইট ডিরেক্টররাও।
এ ঘটনা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে নবনির্বাচিত কমিটি। সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজলের পক্ষ থেকে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকারও করেছে সংগঠনটি।
এদিকে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবিগুলো মেনে ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিকে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। দাবিগুলো হলো—আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করা; শিবা শানু, চৌধুরী, আলেকজান্ডার বোসহ সবার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া; প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা; যাঁদের ডিভাইসের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রমাণ সাপেক্ষে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; যাঁদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে শিল্পী সমিতিকে মেনে নিতে হবে।