না হওয়া নাটক অভিনেতা বানিয়েছে তাঁকে

মোস্তফা মন্‌ওয়ারছবি : অভিনেতার সৌজন্যে
কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে পেশা হিসেবে কী বেছে নেবেন, এটা নিয়ে অস্তিত্বসংকটে ছিলেন। এমন সময় ডাক পড়ল মহল্লার এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। অভিনয় করতে হবে। সেই প্রথম অভিনয়। সেদিন যে নাটকের মহড়া করেছিলেন, সেটি পরে আর মঞ্চস্থ হয়নি। কিন্তু না হওয়া সেই নাটকের মহড়া দিয়েছে অভিনেতা মোস্তফা মন্‌ওয়ারকে। মহড়া করতে গিয়েই যে অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয় তাঁর। সেই ভালোবাসার অভিনয় ক্যারিয়ার ২৫ বছরে পড়ল।

অপেক্ষার ১২ বছর
১৯৯৮ সালে অভিনয় শিখতে প্রাচ্যনাটে যোগ দেন। মঞ্চে টানা পাঁচ বছর অভিনয় করেন। ২০০৩ সালে প্রথম সুযোগ পান টেলিভিশনে, বন্ধু অনিমেষ আইচের ‘কুফা’ নাটকে। পরে অনেক পরিচালকের সঙ্গে অভিনয় করেছেন। কিন্তু মনের মতো চরিত্র পাচ্ছিলেন না। পছন্দমতো চরিত্র পেতে তাঁকে অপেক্ষা করতে হয় ১২ বছর! মন্‌ওয়ার বলেন, ‘দিনের পর দিন ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছি। অনেকে কাজেই ডাকেনি, অনেক কাজ করা হয়নি; এগুলোতে আমার মন খারাপ হয়নি। কোনো দিন কাজ পেতে লবিং করিনি। এগুলো আমি এনজয় করেছি। কিন্তু মন খারাপ থাকত ভালো চরিত্রের জন্য। পছন্দের চরিত্র পেতে ১২ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই চরিত্র আমাকে দিয়েছিলেন পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ।’ ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া লাইভ ‘ফ্রম ঢাকা’ সিনেমার সাজ্জাদ চরিত্রটি এখনো তাঁর কাছে সেরা। সিনেমাটির সিঙ্গাপুর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা পরিচালকের পুরস্কার জেতে। একই সঙ্গে সেরা অভিনয়ের জন্যও পুরস্কার জিতেছিলেন মন্‌ওয়ার।

‘চাকরি ছাড়া এখন হাস্যকর’
তিনি চাকরি ছাড়বেন শুনলেই সহকর্মীরা এখন হাসাহাসি করেন। কারণ, মন্‌ওয়ার চাকরি ছাড়ার কথা তিন–চার মাস পর পর বলবেন—এটা সহকর্মীরা ধরেই নিয়েছেন। অভিনয়ে তাঁকে অনেক সময় দিতে হয়। এ সময় তিনি বের করেন পাওনা ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে। এমনকি অভিনয়ের জন্য অফিস তাঁকে বাড়তি ছুটিও দেয়। এ জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই অভিনেতা বলেন, ‘দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আমি অভিনয় ও চাকরি একসঙ্গে করছি। অনেকবার চেয়েছি চাকরি ছেড়ে শুধু শুটিং শুরু করি। কিন্তু কোনোভাবেই এটা হচ্ছে না। অর্থনৈতিক কারণে অভিনয়কেই শুধু পেশা হিসেবে নিতে পারছি না। চাকরিও ছাড়তে পারছি না। এর আগে চার-পাঁচবার চাকরি ছেড়েছি। কিন্তু আবার চাকরিতেই ফিরতে হয়েছে। ছুটির দিনে পরিবারকে সময় দিতে পারি না। শুটিংয়ে যাই।’

মোস্তফা মন্‌ওয়ার
অভিনেতার সৌজন্যে

‘এখন আমি না বলতে পারি’
অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়ার এখনো সুযোগ সেই অর্থে হয়নি, এটা অনুভব করেন মন্‌ওয়ার। এটা ভবিষ্যতের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। তবে চাকরি করার কারণে সবচেয়ে বড় লাভ হয়েছে, এখন তিনি না বলতে পারেন। ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে হয় না। তিনি বলেন, ‘নিয়মিত কাজ করলে ডিরেক্টরদের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে হতো। আমাকে চলার জন্য মাসের বেশির ভাগ দিনই অভিনয় করতে হতো। সেখানে গল্পের বাছবিচার করার সুযোগ তেমন থাকত না। এখন আমি না বলতে পারি, শুধু পছন্দের কাজটিই করতে পারি।’

সব চরিত্র নতুন
অভিনয় ও চাকরি একসঙ্গে করতে গিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে মোস্তফা মন্‌ওয়ারকে। গল্প বাছাই করতে অনেক বাছবিচার করতে হয়। সারা বছরের অভিনয়ের ক্ষুধা মেটাতে হয় অল্পসংখ্যক কাজ করে। এ জন্য তাঁর কাছে অন্যদের ১০টি কাজের সমান নিজের একটি কাজ। এটা তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমি নিয়মিত অভিনয় করলে ১০টি কাজ থেকে যে অভিনয়ক্ষুধা মেটাতে পারতাম, সেটা এখন একটি কাজ থেকে মেটাতে হচ্ছে। এ জন্য আমি সব সময় নতুন চরিত্রে অভিনয় করি। নতুন অভিজ্ঞতা নিতে চাই। অভিনয় শেখা যাবে এমন গল্প, চরিত্রগুলোয় নাম লেখাতে চাই। যে গল্পগুলো অনেক গভীরে চলে যাওয়া যায়।’

মোস্তফা মন্‌ওয়ার
অভিনেতার সৌজন্যে

জনপ্রিয়তার স্বাদ
দুই যুগ ধরে অভিনয় করলেও এবারই প্রথম বিপুলভাবে দর্শকদের কাছে পৌঁছেছেন এই অভিনেতা। তাঁর ভাষ্যে, ‘আগে আমার কাজ কেবল বন্ধু মহলই দেখত। তাঁরাই সমালোচনা করতেন। বাইরে তেমন কেউ চিনত না। কিন্তু এবার সুড়ঙ্গ সিনেমায় অভিনয় করে অন্য রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। বাইরে গেলেই অনেকেই বলেন, “আপনি সুড়ঙ্গ সিনেমায় অভিনয় করেন নাই? আপনার অভিনয় ভালো লেগেছে।” কেউ বলেন, “অন্যের বউ নিয়ে ভেগে যাওয়া ঠিক হয়নি, আপনি ফ্রেন্ডশিপের কলঙ্ক।” এ বিষয়গুলো বেশ মজা লাগে।’ তিনি মনে করেন, সুড়ঙ্গ সিনেমায় তাঁর চরিত্রটির আরও বেশি জায়গা থাকলে ভালো হতো। চরিত্রের দৈর্ঘ্য নিয়ে খুশি না হলেও তাঁর জন্য নিরীক্ষাধর্মী চরিত্রটি দর্শক তৈরিতে কাজে দিয়েছে। তিনি মনে করে, এই দর্শকের অনেকেই এখন তাঁর আগের কাজগুলো খুঁজে দেখছেন। সেই জায়গা থেকে তিনি সফল। মন্‌ওয়ার বললেন, ‘সুড়ঙ্গ আমার অন্য কাজের বিজ্ঞাপন।’

চরিত্র থেকে চরিত্রে
‘জাগো বাহে’ সিরিজের পর্ব ‘লাইটস ক্যামেরা অবজেকশন’-এ জহির রায়হান, মুক্তির অপেক্ষায় থাকা চলচ্চিত্র ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’-এ শহীদুল্লা কায়সার চরিত্র করেছেন মন্‌ওয়ার। এ ছাড়া ‘লাইফ ফ্রম ঢাকা’, ‘ওভার ট্রাম্প’, ‘একাত্তর’, ‘গুণীন’সহ একাধিক সিনেমা ও সিরিজে তাঁকে সহজেই আলাদা করা যায়। এ ছাড়া মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ‘স্যান্ডসিটি’, ‘সাফা’সহ বেশ কিছু কাজ। তিনি বলেন, ‘চরিত্র থেকে চরিত্রে আমি ডুবে যেতে চাই।’

‘দিগন্তে ফুলের আগুন’ চলচ্চিত্রে পান্না কায়সার চরিত্রে মিম ও শহীদুল্লা কায়সার চরিত্রে মোস্তফা মন্ওয়ারকে দেখা যাবে
মিমের সৌজন্যে