ফেরদৌসের বাসায় না গেলে ভাবি রাগ করে: ঋতুপর্ণা
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ‘স্পর্শ’ ছবিতে অভিনয় করছেন কলকাতার অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ছবিটির শুটিংয়ে অংশ নিতে গত শনিবার বিকেলে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। আজ রোববার থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন লোকেশনে ছবিটির শুটিং শুরু হয়েছে। যৌথভাবে এটি পরিচালনা করছেন বাংলাদেশের অনন্য মামুন ও কলকাতার অভিনন্দন দত্ত। শুটিংয়ের আগে গত শনিবার রাতে প্রথম আলোর মুখোমুখি হন এই ঋতুপর্ণ
প্রথমেই ‘স্পর্শ’ ছবিটি নিয়ে তাঁর প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে ঋতুপর্ণা বলেন, ‘বেশ অনেক দিন বিরতি দিয়েই বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ছবি হচ্ছে। আগে যেসব যৌথ প্রযোজনার ছবি হয়েছে, মোটামুটি সব ছবিই ভালো গেছে। এটি নিয়েও অনেক প্রত্যাশা। কারণ, যৌথ প্রযোজনার ছবিতে গল্প থেকে শুরু করে লোকেশনসহ নির্মাণের সবকিছুতেই বৈচিত্র্য থাকে। ফলে দর্শকেরা কাজটি দেখে আরাম পান।’
১৯৯৭ সালে ‘স্বামী কেন আসামী’ দিয়ে বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় শুরু করেছিলেন ঋতুপর্ণা। তখন থেকেই তাঁর বাংলাদেশে আসা-যাওয়া। এবার নিয়ে কতবার যে বাংলাদেশে আসা হলো তাঁর, হিসাব জানেন না ঋতুপর্ণা নিজেও।
ঋতুপর্ণা বলেন, ‘বাংলাদেশের ছবিতে আমার ২৬ বছরের পথচলা। বহু ছবিতে অভিনয় করেছি। এখানে এতবার এসেছি, এত ভালোবাসা পেয়েছি, বোঝাতে পারব না। ইলিয়াস কাঞ্চন, ফেরদৌস, আমিন খান, রিয়াজসহ অনেক নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছি।
এখানে আসলে আলমগীর ভাই, রুনা (লায়লা) আপার বাসায় যাওয়া হয়। আমার ভালো বন্ধু ফেরদৌসের বাসায় না গেলে ভাবি রাগ করেন। ওমর সানী, মৌসুমিও আমার ভালো বন্ধু। বাংলাদেশ আমার কাছে এক আত্মার আত্মীয়।’
কলকাতার ‘আহারে’ ছবিতে এ প্রজন্মের নায়ক আরিফিন শুভর সঙ্গে অভিনয় করেছেন। এখন যৌথ প্রযোজনার ‘স্পর্শ’ ছবিতে এ প্রজন্মের আরেক নায়ক নিরবের সঙ্গে অভিনয় করছেন ঋতুপর্ণা।
আরিফিন শুভ ও নিরব দুজনেই পরস্পরের ভালো বন্ধু। এ প্রজন্মের এই অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা জানালেন ঋতুপর্ণা, ‘শুভ কাজের সময় চরিত্র নিয়ে ভাবেন। কাজে ফোকাস করেন। এটি তাঁর ভালো গুণ। নিরব আবার শ্রম দেওয়ার চেষ্টা করেন। দুজনের কাজের চিন্তাভাবনা ভিন্ন ভিন্ন।’
সহশিল্পী হিসেবে আরিফিন শুভ ও নিরবকে দুভাবে মূল্যায়ন করলেন কলকাতার এই অভিনেত্রী, ‘নিরবের মধ্যে রোমান্টিক লুক একটু বেশি। নিরবের মধ্যে “লাভেবল হিরো”র ইমেজটা আছে। শুভর মধ্যে অ্যাংগ্রি একটা ব্যাপার আছে। দুজনের রোমান্টিসিজমটা ভিন্ন ভিন্ন। তা ছাড়া হিরোদের ভিন্ন ভিন্ন ইমেজে দর্শকেরাও দেখতে চায়।’
এদিকে গত ঈদে মুক্তি পাওয়া শাকিব খানের ‘প্রিয়তমা’ ছবিটি দেশ-বিদেশে সাড়া ফেলেছে। ছবিতে শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করে প্রশংসায় ভাসছেন কলকাতার মেয়ে ইধিকা পাল। তাঁর সম্পর্কে জানাশোনা আছে কি না, জানতে চাইলে ঋতুপর্ণা বলেন, ‘তার সম্পর্কে আমি জানি না। আমার সঙ্গে আলাপ হয়নি। শুনেছি, সে কলকাতার সিরিয়ালে কাজ করে। কিন্তু সিরিয়াল তো আমার ওভাবে দেখা হয় না। যেহেতু প্রশংসা পাচ্ছে, নিশ্চয়ই ইধিকা ইস গুড।’
কিছুটা আফসোসের সুরেই ঋতুপর্ণা জানান, এর আগে ইলিয়াস কাঞ্চন, ফেরদৌস থেকে শুরু করে এ প্রজন্মের শুভ, নিরবদের সঙ্গে তাঁর কাজ হয়েছে, অথচ শাকিব খানের সঙ্গে এখনো কাজ হয়নি। তবে শাকিবের সঙ্গে কাজের ইচ্ছা আছে তাঁর, ‘শাকিবের ছবি সেভাবে দেখার সুযোগ হয়নি। তবে তাঁর ছবির অনেক গান শুনেছি। বাংলাদেশের অনেক নায়কের সঙ্গে তো কাজ হলো, এবার শাকিবের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কিছুদিন আগে শাকিবের সঙ্গে কথা হয়েছে।’
কাজের ক্ষেত্রে বয়স কোনা বাধা নয় উল্লেখ করে ঋতুপর্ণা বলেন, ‘মেয়েদেরই এই ব্যাপারে বেশি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। পুরুষদের বেলায় কখনোই হয় না। দেখুন, ভারতে রজনীকান্তের “জেলার” মুক্তি পেল। তাঁর বয়স নিয়ে কিন্তু কোনো প্রশ্ন নাই। তিনি কম বয়সের মেয়েদের বিপরীতে অভিনয় করে যাচ্ছেন। শাহরুখ কাজ করছেন। কই, তাঁদের বয়স নিয়ে কিন্তু কোনো কথা নাই? তাঁদের কাজ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটাই হওয়া উচিত। রাভিনা ট্যান্ডন একটি সাক্ষাৎকারে ওই দিন বলছিলেন, ‘‘আমাদের নাইনটিজের হিরোইন বলা হয়। কেন এসব কথা বলা হয়? আমরা তো এখনো হিরোইন হিসেবেই কাজ করছি। কাজল দাপিয়ে কাজ করছেন, টাবু করছেন। হিরো–হিরোইনের কাজের ক্ষেত্রে বয়স ব্যাপার নয়।’’’
ঋতুপর্ণাও মনে করেন, ‘কীভাবে কাজ করছেন, কতটুকু শক্তি দিয়ে দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারছেন, সেটাই ব্যাপার; বয়স নয়। বয়স যে ব্যাপার নয়, তা এবার অস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে মিশেল ইয়ো বুঝিয়ে দিয়েছেন।’