আজ রাজ্জাক–স্মরণ

রাজ্জাক বলতেই তাঁর এই চিরচেনা নায়কোচিত অভিব্যক্তি ভেসে আসেছবি: সংগৃহীত

দেখতে দেখতে ছয় বছর পেরিয়ে আজ সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাকের আজ সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালের এই দিনে মারা যান তিনি। গুণী এই অভিনেতার স্মরণে চ্যানেল আই দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চ্যানেল আই থেকে জানানো হয়েছে, রাজ্জাককে নিবেদন করে বুধবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে প্রচারিত হবে নিয়মিত আয়োজন ‘গান দিয়ে শুরু’। এতে রাজ্জাক অভিনীত বিভিন্ন চলচ্চিত্রের গান শোনাবেন শিল্পী খুরশীদ আলম। সঙ্গে থাকবে সেরাকণ্ঠের বিকসাম ও অনন্যা আচার্য্য। এরপর দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে প্রচারিত হবে ‘তারকাকথন’-এর বিশেষ পর্ব। এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে থাকবেন রাজ্জাকপুত্র চিত্রনায়ক ও নির্মাতা সম্রাট। আয়োজনের এখানেই শেষ নয়, এদিন বেলা ৩টা ৫ মিনিটে দেখানো হবে শাইখ সিরাজ নির্মিত রাজ্জাকের জীবনীনির্ভর প্রামাণ্যচিত্র রাজাধিরাজ রাজ্জাক। রাত ১০টা ২০ মিনিটে থাকছে আবদুর রহমানের উপস্থাপনায় রাজ্জাককে ঘিরে ‘সাময়িকী’ অনুষ্ঠানের বিশেষ পর্ব।

‘রংবাজ’ ছবিতে কবরী ও রাজ্জাক
ছবি: সংগৃহীত

রাজ্জাক পরিবারের উদ্যোগেও থাকছে নানা আয়োজন। গতকাল সন্ধ্যায় সম্রাট প্রথম আলোকে বলেন, ‘বনানী কবরস্থানে আব্বার কবর জিয়ারত তো আছে। বাসায় আমরা পরিবারের সবাই আব্বার স্মরণে কোরআনখানি করব। থাকবে মিলাদ মাহফিলও। এ ছাড়া বাসায় ও বাইরে গরিব মানুষদের খাওয়ানোর আয়োজনও থাকবে।’ কথায়–কথায় সম্রাট বলেন, ‘অন্য সবার কাছে বাবা ছিলেন চলচ্চিত্রের হিরো। কিন্তু তিনি আমাদের কাছে ছিলেন বাস্তব জীবনের নায়ক। ব্যক্তিজীবনে কত সংগ্রাম করে বাবা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সে গল্প বলে শেষ করা যাবে না। সেসব গল্প তিনি আমাদের বলতেন। কোনো জিনিসের প্রতি কারও যদি একাগ্রতা থাকে, তাহলে মানুষ তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে, এটা বাবা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন।’

সম্রাট ও রাজ্জাক
ছবি: সংগৃহীত

রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি ভারতের কলকাতা শহরের নাকতলায় জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে ওঠাও সেখানে। স্বাধীনতার আগে ১৯৬৪ সালে ভারত ছেড়ে স্ত্রী লক্ষ্মী ও সন্তান বাপ্পারাজকে নিয়ে অনিশ্চিত গন্তব্য ঢাকায় আসেন। পরবর্তী সময়ে কষ্ট ও মেধার অসামান্য সমন্বয়ে নিজেকে চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেন নায়করাজ হিসেবে। ১৯৬৬ সালে বেহুলা চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ঢাকাই ছবিতে দর্শকনন্দিত হন কিংবদন্তি এই অভিনেতা। তিনি একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। সত্তরের দশকেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের প্রধান অভিনেতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ ডাকলে তাতে সাড়া দিতেন বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, এতটুকু আশা, অশ্রু দিয়ে লেখা, ওরা ১১ জন, অবুঝ মন-এ অভিনয় করা রাজ্জাক। আমৃত্যু এই শিল্পের সঙ্গেই থাকতে চাওয়ার কথা জানিয়ে একসময় বলেছিলেন, ‘আমি রাজ্জাক হয়তো অন্য কোনো চাকরি করতাম অথবা ঘুরে বেড়াতাম। কিন্তু ছোটবেলার অভিনয়ের প্রচেষ্টাকে আমি হারাতে দিইনি। আমি নাটক থেকে চলচ্চিত্রে এসেছি। সবাই আমাকে চিনেছে। পেয়েছি সাফল্যও। বাংলার মানুষজন আমাকে একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবেই দেখেন ও আমাকে ভালোবাসেন। আজকে আমার যা কিছু হয়েছে, সবই এই চলচ্চিত্রশিল্পের কল্যাণে।’