‘দীর্ঘদিন ধরে এটাই আমি চাচ্ছিলাম’—বললেন ইলিয়াস কাঞ্চন, পাশে বসে মিটিমিটি হাসছিলেন ডিপজল

ডিপজল ইলিয়াস কাঞ্চনের বক্তব্য শুনছেন
ছবি: সংগৃহীত

গতকাল ছিল শিল্পী সমিতিতে ডাকা কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠক। সেখানে সবাইকে চমকে দিয়ে উপস্থিত হয়েছেন মিশা-জায়েদ প্যানেলের বিজয়ীরা। এর আগে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ পরিষদের বিজয়ীদের ডাকে বেশ কিছু কার্যনির্বাহী সভা হলেও মিশা-জায়েদ পরিষদের বিজয়ী কেউ সেখানে উপস্থিত হননি। সেই সময় তাঁরা জানিয়েছিলেন, জায়েদ খানের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। সুষ্ঠু বিচার না পেলে তাঁরাও পদত্যাগ করবেন। অবশেষে তাঁরাই ফিরেছেন। গতকাল তাঁদের অনেককে পেয়ে আনন্দিত শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনসহ তাঁদের প্যানেলের সবাই।

অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমি এটাই চাচ্ছিলাম। তোমরা (সহকর্মীদের উদ্দেশে) সবাই জানো, কোনো দায়িত্ব নিয়ে আমি কিছু করতে চাই। কিন্তু কিছু করতে না পরলে সেই দায়িত্ব আমি কখনোই নিই না। আমার খুব কষ্ট লাগছিল, ৯ মাস পার হয়ে গেছে, যতটুকু করার কথা ছিল, ততটুকু করতে পারছিলাম না। আমার মধ্যে যন্ত্রণা কাজ করছিল। আবার একটা ক্ষোভ কাজ করছিল। আজ আমার সেই যন্ত্রণা অনেকটা লাঘব হয়েছে।’

ইলিয়াস কাঞ্চন
ছবি: সংগৃহীত

কালকে সভায় শিল্পী সমিতির নির্বাচিত প্রায় সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এবার তাঁদের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চান ইলিয়াস কাঞ্চন। শিল্পীদের মধ্যে আর কোনো ভেদাভেদ চান না। একসঙ্গে এভাবে কাজ করাকে চলচ্চিত্রের জন্য ইতিবাচক উল্লেখ করে ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, ‘সকল শিল্পী মিলে চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করব। একটু একটু করে আমাদের সিনেমা হল ৬৫টাতে নেমেছিল, সেখান থেকে ২০০টা হচ্ছে। আমরা এখন একত্র হয়েছি। আমরা সবাই মিলে সুদিন ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করব।’
জায়েদ তাঁকে ‘গুরু’ মানেন। নির্বাচনের মাঠে গুরুত্বের বিবেচনায় তিনি ছিলেন শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-জায়েদ প্যানেলের সবার ওপরে। সিনিয়র এই মুরব্বিখ্যাত খল অভিনেতার নাম মনোয়ার হোসেন ডিপজল। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে তেমন কোনো কার্য পরিষদের সভায় আসেননি ডিপজল। তিনি এর আগে প্রথম আলোকে দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, ‘ইচ্ছা ছিল মরণের আগপর্যন্ত ছবি নিয়ে থাকব। অভিনয় করে যাব, দর্শকের হাসিখুশি দেখব। সেটা মনে হচ্ছে আর হলো না। আমারও ইচ্ছা উঠে গেছে, মনমানসিকতাও নেই, নিজেও অসুস্থ, ভেবেছিলাম ফিল্মের চাকা ঘোরাব। কিন্তু এত নোংরামি ঢুকছে, যা অকল্পনীয়। ইন্ডাস্ট্রি শেষ হয়ে গেছে। এখানে ফেরানোর পথ নেই।’

কার্যনির্বাহী সভায় এসে শপথ নিচ্ছেন মৌসুমী ও আলী রাজ।
ছবি: সংগৃহীত

এবার সেই ডিপজলকে ফিরতে দেখা গেল ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণদের কার্যনির্বাহী সভায়। পুরো সময় ডিপজলের মুখে হাসি থাকলেও তেমন কথা বলেননি। ইলিয়াস কাঞ্চনের বক্তব্যের সময়ও তাঁকে মিটিমিটি হাসতে দেখা যায়। তিনি কি সব মেনে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণদের সঙ্গে কাজ করবেন? বক্তব্যে অবশ্য সেই আভাসই দিলেন। ডিপজল সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ, ভালো লাগছে। সবাই মিলে কাজ কবর। আমি খুশি। ভালো লাগছে।’ এ সময় চিত্রনায়ক মামনুন ইমন ডিপজলকে ভি চিহ্ন (বিজয় প্রকাশ) দেখিয়ে শুভকামনা জানাতে বলেন। পরে ডিপজল ভি চিহ্ন দেখান।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জটিলতা ছিল। প্রথম দিকে নির্বাচনের ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হয়। পরে স্থগিত হয় সাধারণ সম্পাদকের পদ। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে যেতে হয় সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীদের। অবশেষে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। ২১ নভেম্বর থেকে সম্পাদক হিসেবে নিপুণ আক্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দায়িত্ব পালন করার পর এই প্রথম এফডিসি কার্যনির্বাহী সদস্যদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে কার্যনির্বাহী সভার বৈঠক হলেও সেখানে মিশা-জায়েদ প্যানেলের কাউকে দেখা যায়নি।

ডিপজল বিজয়ের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন
ছবি: সংগৃহীত

গতকাল মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত সহসভাপতি ডিপজলের নেতৃত্বে বৈঠকে যোগ দেন কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য আলী রাজ, মৌসুমী, অঞ্জনা, নাদের খান ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জয় চৌধুরী। গতকাল আলী রাজ ও মৌসুমী শপথ নিয়েছেন। ঢাকার বাইরে থাকায় সুচরিতা ও রুবেল উপস্থিত হতে পারেননি। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ‘কেমন লাগছে’ নিপুণকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি দেখাচ্ছি কেমন লাগছে।’ পরে নিপুণ মৌসুমীকে জড়িয়ে ধরেন। মৌসুমীর হাসিমুখ দেখে বোঝা গেল, এবার হয়তো বিভেদ ভুলে একসঙ্গে শিল্পী, চলচ্চিত্রের স্বার্থে কাজ করে যেতে চান।

নিপুণ মৌসুমীকে জড়িয়ে ধরেন
ছবি: সংগৃহীত

তবে জায়েদ এখনো হাল ছাড়তে রাজি নন। নিপুণ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘জায়েদ খানের সামনে পদ ফিরে পেতে আর কোনো পথ আছে কি না’ এমন প্রশ্নে জায়েদ জানিয়েছিলেন, ‘হাইকোর্টের আগের যে অর্ডার ছিল, সেটা স্টে (স্থগিত) করেছেন। তাঁদের (নিপুণের) আইনজীবী যে আপিল করেছিলেন, সেটা হাইকোর্ট গ্রহণ করেছেন। এখন আবার আপিলের শুনানি হবে। চূড়ান্ত রায় হয়ে গেছে, মামলা ডিসমিস, বিষয়টা এমন নয়। এখনো সুযোগ আছে। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় হয়নি। এখন লিভ টু আপিলের সুযোগ রয়েছে। আমি সত্যের জন্য লড়াই করছি। আমার চূড়ান্ত বিজয় চূড়ান্ত শুনানির মধ্য দিয়ে আসবে। এটা আমি বিশ্বাস করি।’