সুনামগঞ্জ যাই, ডিসি স্যার দেখা করতে বলেছেন: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী ফারজিনার বাবা
ছয় মাস ধরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া শিশুশিল্পী ফারজিনা আক্তারের পরিবারের দিনগুলো অনিশ্চয়তায় কাটছিল। কারণ, তাদের থাকার কোনো জায়গা ছিল না। সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ হওয়া স্বপ্নের ঘরের জন্য দিনের পর দিন সংশ্লিষ্টদের অফিসে ধরনা দিয়েও কোনো আশ্বাস ছাড়া তেমন কিছুই মিলছিল না। স্বপ্নের একটা ঘরের জন্য কারও কোনো অপমান গায়ে মাখেনি এই পরিবার—জানান ফারজিনার বাবা মো. সায়েম।
তাঁরা চেয়েছিলেন মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করতে। সেসব ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এখন অতীত। সরকারের বরাদ্দের ঘর না পেয়ে ফারজিনার আশ্রয় হলো আবার সিলেটে।
আজ দুপুর ১২টার দিকে ফারজিনার বাবা সায়েমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা বাড়ি আর পেলাম না। এখন সিলেটে চলে আসছি। আর কারও কাছে কোনো চাওয়া–পাওয়া নাই। আমরা সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার পাশে একটি রুম ভাড়া নিয়েছি। এখানেই থাকব। আর কী বলব, অনেক কষ্টই তো করলাম। কোনো কাজ হলো না। অনেক কষ্ট নিয়ে সিলেটে আসছি।’
কথা শুনে বোঝা গেল সায়েম বাসে। কোথায় যাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জের ডিসি স্যার ফোন করেছিলেন। তিনি দেখা করতে বলেছেন। স্যারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। এখন বাসে উঠলাম।’
সায়েম জানালেন, সিলেটে থাকার জন্য আপাতত থালাবাসন যা প্রয়োজনীয় সব গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন। হাতে অল্প টাকা ছিল, সেগুলো দিয়েই আপাতত চলবেন। কোনো কাজ পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে সায়েম বলেন, ‘আজ কাজ খুঁজতে যেতে চেয়েছিলাম। এখন সুনামগঞ্জ যাচ্ছি। ফিরে কাজ খুঁজব। সিলেটে আসছি, রিকশা চালাব। রিকশা না পাইলে মাটি কাটার কাজ করব।’
ফারজিনা আক্তারের বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার ছিলানী তাহিরপুর গ্রামে। ৯ বছরের এই শিশু ২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া মোহম্মদ কাইউম পরিচালিত ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমায় অভিনয় করে শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার পায়। গত বছরের ১৪ নভেম্বর ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ফারজিনা পুরস্কার গ্রহণ করে। সেদিনই প্রথম আলোতে ‘শিশুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের টাকায় বাড়ি করতে চায়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। নজর কাড়ে অনেকের।
সেই সময় সুনামগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী সাহায্যের আশ্বাস দেন। জেলা প্রশাসক তাঁদের ডেকে মিষ্টি খাওয়ান। পরিবারের আর্থিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। ফারজিনার লেখাপড়ার জন্য ২০ হাজার টাকা দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তাঁদের একটি ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দেন সাবেক জেলা প্রশাসক। সেই সঙ্গে সব সময় তার পরিবারের খোঁজখবর রাখার জন্য তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন তিনি।
পরে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়ার খবরে ফারজিনার পরিবার স্বপ্ন দেখে, গ্রামে থেকেই তিন ছেলেমেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করবে। আর সিলেটে যাবে না তারা। পরবর্তী সময়ে সব বরাদ্দের খবর এই পরিবার জানলেও কাজের অগ্রগতি পাচ্ছিল না। সায়েম এই সময়ে দফায় দফায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে অনিশ্চয়তার কথা বলেন।
সর্বশেষ গত মাসে জানান, তাঁদের বাড়িটি হচ্ছে। পরে জটিলতায় কাজ আটকে যায়।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সায়েম প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্যার আমার বাড়ির জন্য যে জমি বরাদ্দ হয়েছে, সেটা যাদের দখলে, তারা আমাকে হুমকি দেয়। আমি স্যারদের জানাইছি। মনে হয়, আমার বাড়ি আর পাওয়া হবে না। আমি আবার সিলেট গিয়ে কাজ করব। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকব।’