‘সালমান শাহ-শাবনূর জুটির এই ছবির সঙ্গে অনেক ইতিহাস জড়িত’
আগামীকাল ১০ ফেব্রুয়ারি বরিশাল অভিরুচি সিনেমা হলে আবার মুক্তি পেতে যাচ্ছে জহিরুল হক পরিচালিত সালমান শাহ-শাবনূর জুটির প্রথম সিনেমা ‘তুমি আমার’। ১৯৯৩ সালে ছবিটির শুটিং চলাকালে মারা যান পরিচালক। ছবির বাকি কাজ শেষ করেন তমিজ উদ্দীন রিজভী। পরের বছর ১৯৯৪ সালে ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। ছবির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালকের ছেলে আবদুল্লাহ জহির বাবু। এটি ছিল তাঁর প্রথম সিনেমা। ছবিটি আবার মুক্তির আগে আবদুল্লাহ জহির বাবু বুধবার বিকেলে ছবির সেই সময়কার একটি পোস্টার ফেসবুকে শেয়ার করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
আবদুল্লাহ জহির বাবু লিখেছেন, ‘আমার বাবা, মরহুম জহিরুল হক পরিচালিত এবং আমার প্রথম লেখা কাহিনি ও সংলাপের ছায়াছবি “তুমি আমার” আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বরিশাল অভিরুচি সিনেমা হলে পুনরায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে। ছবিটি প্রথম ১৯৯৪ সালের ঈদুল আজহায় ঈদে মুক্তি পায়।’
জহির বাবু আরও লিখেছেন, ‘আমার বাবার ইন্তেকালের পর মরহুম তমিজ উদ্দীন রিজভী আঙ্কেল ছবির বাকি কাজ শেষ করেন। এরপর আদৃতা কথাচিত্রের ব্যানারে ছবিটি মুক্তি পায়। সালমান শাহ ও শাবনূর অভিনীত প্রথম ছায়াছবি “তুমি আমার”। এটি আমার জীবনের সম্ভবত সবচেয়ে স্মৃতিবিজড়িত এবং উল্লেখযোগ্য ছায়াছবি। পুনরায় ছবিটি মুক্তির আয়োজন করাতে ছবির বুকিং এজেন্ট জাহাঙ্গীর ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
ছবিটি আবার মুক্তির খবরে প্রথম আলোকে বাবু বলেন, ‘যখন শুনলাম, কাকরাইলের বুকিং এজেন্ট জাহাঙ্গীর ভাই ছবিটি অভিরুচিতে মুক্তি দেবেন, শুনে কিছুটা ধাক্কা খেলাম। অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে বাবার স্মৃতিতে ফিরে গেলাম। সেই ২৮ বছর আগের কথা মনে পড়ে গেল। এ সময় এই ছবির আবার মুক্তি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বলতে পারেন। সালমান শাহ-শাবনূর জুটির এই ছবির সঙ্গে অনেক ইতিহাস জড়িত।’
কেমন সেটি? জানতে চাইলে বাবু বলেন, ‘এটি বাবার শেষ ছবি। আমার লেখা প্রথম সিনেমা। সালমান-শাবনূরের প্রথম জুটি। তা ছাড়া এই ছবিতে নায়িকা শাবনূর যেসব পোশাক পরে অভিনয়, গান করেছেন, সবই আমার ছোট বোন মেহজাবিনের।’
বাবার সঙ্গে সিনেমা দেখার দিনগুলোর কথা স্মরণ, ছবিটির চিত্রনাট্য লেখা ও সিনেমা নির্মাণের সময়কার স্মৃতিচারণা করে বাবু আরও বলেন, ‘বাবার সঙ্গে আমার ও ছোট বোনের সিনেমা দেখা শুরু ১৯৭৬ সালে। সে সময় প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত বাবার সঙ্গে সিনেমা নিয়ে আমার ও বোনের অনেক আড্ডা হতো। তাই সিনেমা সম্পর্কে আমার মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সিনেমায় কাজ করব, সিনেমার জন্য চিত্রনাট্য লিখব, কখনোই ভাবিনি। ওই সময় বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র। একদিন বাবা জানালেন, ভালো গল্প পাচ্ছেন না। আমার মাথায় একটা গল্প ছিল, শোনালাম। বাবা বললেন, “লিখে দাও।” কী আর করার, লিখে দিলাম। শুটিং শুরু হলো। কিছুদিনের মাথায় ২৫ নভেম্বর ১৯৯৩ সালে বাবা মারা গেলেন।’
মুক্তির সময় নাকি অনেক হলমালিক ছবিটি নিতে চাননি। কেন? জানতে চাইলে বাবু বলেন,‘সে সময় ধারণা ছিল, জুটিভাঙা নায়কের ছবি চলবে না। তার আগে থেকে সালমান শাহ ও মৌসুমি জুটি বেঁধে একের পর এক হিট ছবি দিয়ে যাচ্ছিলেন। মৌসুমির সঙ্গে জুটি ভেঙে শাবনূরের সঙ্গে প্রথম জুটির এই ছবি না–ও চলতে পারে। অবশ্য ছবিটি মুক্তির সময় তখন সেভাবে আলোচনায় আসেনি। কিন্তু সালমান শাহের মৃত্যুর পর দারুণ ব্যবসা করেছিল ছবিটি।’
জহিরুল হক পরিচালিত ‘প্রাণ সজনি’, ‘রংবাজ, ‘সারেন্ডার, ‘কি যে করি’ ছবিগুলো ব্যবসাসফল হয়েছিল।