২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

২২টি কেমোথেরাপি নিয়ে সিনেমা বানাচ্ছেন রাসেল

স্বপ্নকে পুঁজি করে শরীরে ২২টি কেমোথেরাপি নিয়ে জীবনের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’ নির্মাণ করছেন ক্যানসারে আক্রান্ত নির্মাতা রফিকুল আনোয়ার রাসেল। কোনো কোনো দিন টানা ১৮ ঘণ্টাও কাজ করেছেন তিনি। গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো কার্যালয়ে তাঁর জীবন ও নির্মাণের গল্প শুনলেন মকফুল হোসেন

নির্মাতা রফিকুল আনোয়ার রাসেলকে ক্যানসার দমাতে পারেনিখালেদ সরকার

প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে স্বপ্নের অলিগলি ধরে ছুটছেন রাসেল; ঢাকা থেকে কক্সবাজার, কক্সবাজার থেকে ঢাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এক রোহিঙ্গা ম্যান্ডোলিন বাদককে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র ‘আ ম্যান্ডোলিন ইন এক্সাইল’ নির্মাণ করছিলেন। শুটিংয়ে আসা–যাওয়ার মধ্যে হঠাৎ রাসেলের শরীর বিদ্রোহ করে। ভেবেছিলেন, ৪০ পেরিয়েছেন; ডায়াবেটিস বাঁধতে পারে।

শুটিং থেকে ফিরে ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের এক চিকিৎসকের শরণ নেন। চিকিৎসকেরা ধারণা করলেন, তিনি ফলিকিউলার লিম্ফোমাতে আক্রান্ত হয়েছেন; এটি রক্তের একধরনের ক্যানসার।

এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো ক্যানসার হাসপাতালে যান। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করেছেন, তিনি নন-হজকিন ফলিকিউলার লিম্ফোমাতেই আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ছয়টি কেমোথেরাপি দেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

তবে তখন রাসেলের কাছে যথেষ্ট অর্থ ছিল না। তাঁর ভাষ্যে, ‘কেমোথেরাপির জন্য অনেক টাকার দরকার ছিল, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। তখন আমার কোনো চাকরি ছিল না, ফলে সব কেমোথেরাপি না নিয়েই ফিরে আসতে হয়েছে।’

চারটি কেমোথেরাপি নেওয়ার পর চেন্নাইয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে লকডাউনের মধ্যে আর যেতে পারেননি; দেশেই চিকিৎসা নিতে থাকেন। তত দিনে কেমোথেরাপির প্রভাবে চুল, ভ্রু ঝরে পড়তে থাকে।

চেন্নাইয়ের প্রখ্যাত অনকোলজিস্ট টি. রাজার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। চট্টগ্রামে ফিরে অধ্যাপক সাজ্জাদ মোহাম্মদ ইউসুফের তত্ত্বাবধানে কেমোথেরাপি নিতে থাকেন। মাঝে চারটি কেমোথেরাপি নেওয়ার পর চেন্নাইয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে লকডাউনের মধ্যে আটকা পড়েন। দেশেই চিকিৎসা নিতে থাকেন, তত দিনে কেমোথেরাপির প্রভাবে রাসেলের চুল, ভ্রু ঝরতে শুরু করেছে।

‘আমি আর ফিরতে পারব কি না—তা নিয়ে নিজেও হতাশায় ছিলাম। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেই ‘আ ম্যান্ডোলিন ইন এক্সাইল’ প্রামাণ্যচিত্রের শুটিং শেষ হওয়ার কথা ছিল। জানুয়ারিতে এডিট করে মার্চের ভেতরে জমা দিতে চেয়েছিলাম। তবে পারিনি।’

সিনেমা থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়েছেন নির্মাতা
ছবি: নির্মাতার সৌজন্যে

তখনো ‘আ ম্যান্ডোলিন ইন এক্সাইল’-এর সম্পাদনার কাজ বাকি। প্রামাণ্যচিত্রটি প্রযোজনা করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক ফোন করে রাসেলকে বললেন, ‘চাপ নিও না। যদি পারো একটা ভার্সন আমাদের দাও, দর্শকদের দেখাব।’ রাসেল ক্যানসারের সঙ্গে লড়বেন নাকি স্বপ্নের পথে হাঁটবেন? কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন এই নির্মাতা; রোগের সঙ্গে লড়াইও করবেন, সিনেমাও করবেন।

তত দিনে রাসেলের দুনিয়া ছোট হয়ে এসেছে; চট্টগ্রামের বিশ বাই দশ ফিটের চার দেয়ালে বন্দী জীবন কাটাতে থাকেন। করোনাভাইরাসের মধ্যে বের হওয়া বারণ ছিল, ঘরে কেউ আসতে পারতেন না।

রাসেলের ভাষ্যে, ‘আমার বন্ধু হিমুর এডিটিং প্যানেল ছিল, ওর প্যানেল আমার বিছানার পাশে সেটআপ করে দিল। কেমোথেরাপির কারণে তখন সারারাত ঘুমাতে পারতাম না। রাত সাড়ে ৯টায় বসে সকাল ৭টা পর্যন্ত ছবিটা এডিট করছি। কাজের মধ্যে ধীরে ধীরে নিজের মনোবল চাঙা হচ্ছিল। টানা ১৭ দিনে এডিট শেষ করেছি।’

কেমোথেরাপির কারণে তখন সারারাত ঘুমাতে পারতাম না। রাত সাড়ে ৯টায় বসে সকাল ৭টা পর্যন্ত ছবিটা এডিট করছি। কাজের মধ্যে ধীরে ধীরে নিজের মনোবল চাঙা হচ্ছিল। টানা ১৭ দিনে এডিট শেষ করেছি।
রফিকুল আনোয়ার রাসেল, নির্মাতা
লকডাউনের মধ্যে চট্টগ্রামের বিশ বাই দশ ফিটের চার দেওয়ালে বন্দী অবস্থায় ‘আ ম্যান্ডোলিন ইন এক্সাইল’ প্রামাণ্যচিত্রের সম্পানা করছেন নির্মাতা
ছবি: নির্মাতার সৌজন্যে

নির্মাণের পাশাপাশি প্রামাণ্যচিত্রের চিত্রনাট্যও লিখেছেন রাসেল, তবে নিজের জীবনের চিত্রনাট্যে কী আছে—তা তাঁর জানা নেই। তবে নিজের সবটুকু দিয়ে কাজটা করে যেতে চান এই নির্মাতা।

‘তখন ভাবছিলাম, সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি, আমি কাজ করতে পারছি। এডিট নিয়ে আমার খুব একটা ধারণাও ছিল না। নতুন করে সবকিছু শুরু করলাম। ছবিটা শেষ করে জমা দেওয়ার পর অনেকে প্রশংসা করেছেন।’

২০২০ সালের ২৭ আগস্ট অনলাইনে ‘আ ম্যান্ডোলিন ইন এক্সাইল’-এর ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ছবিটি বিশ্বের বেশ কয়েকটি উৎসবেও প্রশংসা পেয়েছে।

ছবিটি মুক্তির পর রাসেলের দুনিয়াটাও বড় হয়েছে, ‘তখন বুঝলাম, আমি ফিরতে পারব। আস্তে আস্তে আরও কাজ করার চিন্তাভাবনা করলাম। এর মধ্যে জুনের পর মেইনটেইন্যান্স কেমোথেরাপি শুরু হয়।’

ক্যানসারের কথা শুনে অনেকেই পিছিয়ে যেতেন। কাজ শেষ করতে পারব কি না—এই আশঙ্কায় কাজ দিতে চাননি অনেকে। বাধ্য হয়ে একসময় অসুস্থতার কথা চেপে যেতে থাকেন রাসেল। বিভিন্ন জায়গার সিনেমার প্রকল্প জমা দিতে থাকেন, পাশাপাশি চিত্রনাট্যও লিখতে থাকেন। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে, আবারও কাজ পেতে শুরু করেন।
নির্মাতা রফিকুল আনোয়ার রাসেল
খালেদ সরকার

২২টি কেমোথেরাপি নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা

পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের সহযোগিতায় চিকিৎসার খরচ সামলিয়েছেন রাসেল। তবে কাজে ফেরার পথটা সহজ ছিল না। কেন?—এই নির্মাতা জানালেন, ক্যানসারের কথা শুনে অনেকেই পিছিয়ে যেতেন। কাজ শেষ করতে পারব কি না—এই আশঙ্কায় কাজ দিতে চাননি অনেকে। বাধ্য হয়ে একসময় অসুস্থতার কথা চেপে যেতে থাকেন তিনি। বিভিন্ন জায়গার সিনেমার প্রকল্প জমা দিতে থাকেন, পাশাপাশি চিত্রনাট্যও লিখতে থাকেন। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে, আবারও কাজ পেতে শুরু করেন।

‘আমি যেহেতু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছি, কত দিন কাজ করতে পারব—তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ভাবলাম, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটা সিনেমা করব।’ বলছিলেন, নির্মাতা রাসেল।

কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের স্মৃতিচারণামূলক বই ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’ নিয়ে জীবনের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেন তিনি। হাসান আজিজুল হকের কাছ থেকে অনুমতি নেন।

ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের মধ্যেই ২০২১ সালের নভেম্বরে সিনেমার চিত্রনাট্য লেখা শেষ করেন। ২০২১-২২ অর্থবছরের সরকারি অনুদানের জন্য ২৭ নভেম্বর চিত্রনাট্য জমা দেন।

২২টি কেমোথেরাপি নেওয়ার পর ২০২৩ সালের মার্চের দিকে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার কাজ শুরু করেন রাসেল
ছবি: নির্মাতার সৌজন্যে

‘তখনো আমার ভ্রমণে বিধিনিষেধ ছিল, চট্টগ্রামের বাইরে যেতে পারতাম না। আমি কাউকে না জানিয়ে সেদিন সকালের ট্রেনে ঢাকায় এসে চিত্রনাট্য জমা দিয়ে বিকেলের ট্রেনে চট্টগ্রামে ফিরেছি। আগেও অনুদানের জন্য ছবি জমা দিয়েছি, হয়নি। ফলে এবার খুব একটা আশা ছিল না।’

২০২২ সালের জুনে ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’ সিনেমার জন্য অনুদান পান রাসেল। আনন্দের খবরের সঙ্গে আরেকটা বিষাদের খবরও পেলেন এই নির্মাতা। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে, অস্ত্রোপচার করা হয়। ক্যানসার আবারও ফিরতে শুরু করেছে। ফলে সিনেমাটি আটকে যেতে থাকে।

রাসেল বলছেন, ‘তখনো নিশ্চিত ছিলাম না, সিনেমাটা করতে পারব কি না। আমার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। আমি একবার ভেবেছিলাম, অনুদান ফেরত দেব।’

তত দিনে ১৬টি কেমোথেরাপি নিয়েছেন, আরও ছয়টি কেমোথেরাপি নিতে হবে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৪টি কেমোথেরাপি শেষে চেন্নাই গেলেন। ‘চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি শুটিং করতে পারব? চিকিৎসক বললেন, ছয়টা কেমোথেরাপি নেওয়ার পর কাজটা করতে পারবেন।’

তখনো নিশ্চিত ছিলাম না, সিনেমাটা করতে পারব কি না। আমার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। আমি একবার ভেবেছিলাম, অনুদান ফেরত দেব।
রফিকুল আনোয়ার রাসেল, নির্মাতা
‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’ সিনেমার শুটিংয়ের ফাঁকে আসাদুজ্জামান নূর, নাজিয়া হক অর্ষা ও নির্মাতা রাসেল
ছবি: নির্মাতার সৌজন্যে

২২টি কেমোথেরাপি নেওয়ার পর মার্চে সিনেমার কাজে হাত দেন। পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণে ধকল আছে। প্রধান সহকারী পরিচালক, চিত্রগ্রাহক, শিল্পী জোগাড় করা খাটনির কাজ। কাজগুলো ধীরে ধীরে এগিয়ে নিতে থাকেন।

২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সিনেমার দৃশ্যধারণ শুরু করেন রাসেল। কোনো কোনো দিন টানা ১৮ ঘণ্টাও কাজ করেছেন। গত বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ১৫ দিনে সিনেমার ৮০ ভাগ কাজ শেষ করেছেন। এই বছর মার্চের মধ্যে সিনেমার শুটিং শেষ করতে চান রাসেল। জীবনের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমাটি এই বছর দর্শকের সামনে নিয়ে আসতে চান।

একাত্তর পরবর্তী একটি পরিবারের গল্পে নির্মিতব্য সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন আসাদুজ্জামান নূর, সঙ্গে ইমতিয়াজ বর্ষণ, নাজিয়া হক অর্ষাসহ আরও অনেকে।

‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’ সিনেমার দৃশ্য আসাদুজ্জামান নূর ও নাজিয়া হক অর্ষা
ছবি: নির্মাতার সৌজন্যে
ছবির কাজটা শুরুর পর দেখলাম, ক্যানসার ভুলে গেছি। আমি ওভারকাম করতে শুরু করেছি। যতক্ষণ আমি কাজের মধ্যে থাকি ততক্ষণ আমি ভুলে থাকি।
রফিকুল আনোয়ার রাসেল, নির্মাতা

অনুপ্রেরণা পেলেন কোথায়?

আজন্ম নির্মাতাই হতে চেয়েছেন রাসেল। নির্মাণে মন দিতে চাকরি–বাকরিও ছেড়েছেন। তাঁর ভাষ্যে, ‘সিনেমা ছাড়া আমার কোনো অপশন নেই। নির্মাণ না করলে আমার কোনো অস্তিত্ব নেই। চাকরি-বাকরি ছেড়ে পুরোপুরিভাবে নির্মাণে এসেছি।’

ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার তাঁকে অক্টোপাসের মতো বিষণ্নতা আঁকড়ে ধরেছিল। তিনি বলেন, ‘ইরফান খান মারা যাওয়ার খবরে বাচ্চা ছেলের মতো কান্না করছি। অনেকেই ক্যানসারে মারা যাচ্ছে, এটা শুনলে খুব খারাপ লাগত। চিকিৎসক আমাকে বলেছিলেন, আপনি কখনো মানসিক চাপ নেবেন না, বিষণ্ন থাকবেন না। কমেডি দেখবেন, হাসবেন। কিন্তু কতক্ষণ এটা থাকে?’

বিষণ্নতাকে কীভাবে জয় করলেন?—এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্মাতা জানান, ‘আ ম্যান্ডোলিন ইন এক্সাইল’ প্রামাণ্যচিত্রের সম্পাদনা করতে গিয়ে আবিষ্কার করেছি, ছবিতে ডুবে থাকলে আমাকে আর বিষণ্নতা আক্রান্ত করতে পারছে না।

রাসেল বলছেন, ‘ছবির কাজটা শুরুর পর দেখলাম, ক্যানসার ভুলে গেছি। আমি ওভারকাম করতে শুরু করেছি। যতক্ষণ আমি কাজের মধ্যে থাকি ততক্ষণ আমি ভুলে থাকি।’

পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মাণের ধকলটাও বেশি
ছবি: নির্মাতার সৌজন্যে

সিনেমায় অনুপ্রেরণা খুঁজেছেন নির্মাতা রাসেলকে। তিনি বলেন, ‘আমি সিনেমায় বেঁচে আছি। সিনেমা ইজ মাই লাইফ। যতক্ষণ সিনেমা আছে, আমি শারীরিকভাবে বেঁচে আছি। আমি ২৪ ঘণ্টা সিনেমার মধ্যেই থাকি। স্বপ্নের সবটুকুজুড়েই সিনেমা রয়েছে। সিনেমায় আমাকে টিকিয়ে রেখেছে।’

রাসেলের প্রিয় চলচ্চিত্রকার আন্দ্রেই তারকোভস্কি ক্যানসারে মারা গেছেন। আন্দ্রেই তারকোভস্কির লেখা ও সিনেমাও অনুপ্রাণিত করেছে এই নির্মাতাকে।

তিনি বলেন, ‘চেন্নাইয়ের চিকিৎসার সময় ভাবতাম, অনেক গল্প বলার বাকি আছে, আমাকে ফিরতেই হবে; কাজ করতে হবে। যদিও আমার সিনেমাতে তাঁর (আন্দ্রেই তারকোভস্কি) কোনো ছাপ নেই, কিন্তু আমি তাঁর ভাবনা আর দর্শনকে শ্রদ্ধা করি। তাঁর লেখা আর সিনেমা আমাকে অনুপ্রাণিত করে, বাঁচিয়ে রাখে।’

সিনেমার বাইরে চিকিৎসক, মা, ভাইবোনসহ পরিবারের সব সদস্যরাও তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছেন।

আমি সিনেমায় বেঁচে আছি। সিনেমা ইজ মাই লাইফ। যতক্ষণ সিনেমা আছে, আমি শারীরিকভাবে বেঁচে আছি। আমি ২৪ ঘণ্টা সিনেমার মধ্যেই থাকি।
রফিকুল আনোয়ার রাসেল, নির্মাতা
গত শনিবার কাপ্তাইয়ে ‘সার্চিং রুটস: অ্যান আর্টিস্ট’স টেল’ প্রমাণ্যচিত্রের শুটিংয়ে নির্মাতা রাসেল
ছবি: নির্মাতার সৌজন্যে

ক্যানসারকে সঙ্গী করে ‘একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা’ ছাড়াও শিল্পী জয়দেব রোয়াজাকে নিয়ে ‘সার্চিং রুটস: অ্যান আর্টিস্ট’স টেল’ নামে আরেকটি প্রমাণ্যচিত্রের কাজ করছেন। গত শনিবার কাপ্তাইয়ে এটির দৃশ্যধারণ করছেন নির্মাতা রাসেল। এর বাইরে ‘স্বপ্নচারী’ ও ‘স্বপ্ন কত দূরে’ নামে দুটি ফিকশনের চিত্রনাট্য করছেন।

২০০৮ সালে ‘হ্যাইজাক’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দিয়ে নির্মাণে অভিষেক ঘটে চট্টগ্রামের এই নির্মাতার। পরে ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারার’ নামে আরেকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্মাণ করেছেন। ২০০৩ সালে চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের ‘অন্তর্যাত্রা’ সিনেমার পেছনে কাজ করেন তিনি।

রাসেলের জন্ম ও বেড়ে উঠা ও পড়াশোনা চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন