‘দোস্ত আইয়া পড়লাম’ বলে ‘আম্মাজান’ সিনেমায় নাম লেখায় মান্না

১৯৯৯ সালের ২৫ জুন মুক্তি পায় জনপ্রিয় সিনেমা ‘আম্মাজান’কোলাজ

দেখতে দেখতে ২৫ বছর পার হয়েছে ঢালিউডের জনপ্রিয় সিনেমা ‘আম্মাজান’ মুক্তির। সিনেমাটি ১৯৯৯ সালের ২৫ জুন মুক্তি পায়। সে বছরই আলোচনায় ছিল সিনেমাটি। শুধু তা–ই নয়, ব্যবসায়িকভাবেও বছরের সেরা সিনেমার তালিকায় ছিল সিনেমাটি। মা-ছেলের সম্পর্কের এই সিনেমায় নামভূমিকায় ‘আম্মাজান’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শবনম। তাঁর ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেন মান্না। রাতারাতি মান্নার খ্যাতি বাড়িয়ে দেওয়া এই সিনেমার শুটিংয়ের আগে প্রথম দিকে মান্নার অভিনয় করার কথা ছিল না। এমনকি সিনেমায় মান্নাকে নিতেই চাননি ডিপজল।

ডিপজল ও মান্না ভালো বন্ধু ছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

প্রযোজক, পরিচালক ও খলনায়ক ডিপজল এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সিনেমার প্রথম দিকে মান্নার সঙ্গে আমার বিরোধ ছিল। আমরা যখন চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করছিলাম, তখন মান্নার কথা ভাবিনি। আমরা নিজেদের মতো গল্প তৈরি করছিলাম। এর মধ্যেই আমরা কী গল্প নিয়ে কাজ করছি, এগুলো নিয়ে মান্নার কাছে খবর চলে যেত। আমাদের টিম থেকেই কোনো সোর্স তাকে জানাত। গল্প পছন্দ হলেই সে চলে আসবে, যত দ্বন্দ্ব থাকুক। আমি এখনো বলব, আমাদের নায়কদের মধ্যে মান্না এক নম্বর; গল্প বোঝার দিক দিয়ে।’

সিনেমাটি ১৯৯৯ সালের ২৫ জুন মুক্তি পায়
সংগৃহীত

ঢালিউডের এই প্রয়াত নায়ক ছিলেন ভালো গল্পের পাগল। যেখানেই কোনো ভালো গল্পের সন্ধান পেতেন, সেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ঢুঁ মারতেন। সেভাবেই দ্বন্দ্ব থাকার পরও একদিন ডিপজলদের আলোচনায় এসে হাজির মান্না। সে প্রসঙ্গে এই খল অভিনেতা বলেন, ‘আমি, কাজী হায়াৎ, চিত্রনাট্যকারসহ অনেকেই গল্প নিয়ে কথা বলছিলাম। সেখানে মান্না হুট করে এসে পড়ল। এসে বলল, “দোস্ত আইয়া পড়লাম।” বললাম, কী কারণে? তখন আমরা খাচ্ছিলাম। মান্নাও আমাদের সঙ্গে বসল। খাচ্ছি আর কথা বলছি। এর মধ্যেই মান্না বলল, “এই ছবিতে আমারে রাখ।” আমি বললাম, এই ছবিতে কে অভিনয় করবে, সেটা আমি জানি না। কাজী হায়াৎ পরিচালক। তিনি বলতে পারবেন।’

এ সময় হেসে ডিপজল আরও বলেন, ‘আমি হয়তো মান্নাকে নিতাম না। কারণ, আমি তরুণদের নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করতাম। সে রকম কাউকে নিতাম। আর যখন কাজী হায়াতের ওপর ছেড়ে দিলাম, তখন জানতাম যে তিনি মান্না ছাড়া অন্য কাউকে নেবেন না। তাঁদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া ছিল। তা–ই হলো।’

‘আম্মাজান’ সিনেমার একটি দৃশ্যে মান্না

‘আম্মাজান’ সিনেমার শুটিং শুরু হলো। এখানেও ঘটে বিপত্তি। শুটিংয়ে মান্নার সঙ্গে আবার ডিপজলের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। সেটাও বেশ মজার ঘটনা। সিনেমার জন্য সে সময় এমন একটি ভবন বেছে নেওয়া হয়েছিল যেটা শুটিং শেষ হলেই ভেঙে ফেলা হবে। শুটিংয়ে কিছুটা তাড়া ছিল। সেদিন ডিপজল মান্নাকে বলেন, দুই ঘণ্টা বেশি শুটিং করে ওই ভবনের অংশগুলো শেষ করতে হবে। কিন্তু মান্না সে কথা শোনেননি। ডিপজল বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে সারা রাত অনেকবার শুটিং করেছি। কিন্তু সেদিন মান্না বাড়তি দুই ঘণ্টা সময় না দিয়েই বের হয়ে যায়। আমি রাগে শুটিং বন্ধ করে দিই। দুই মাস পর মান্না সরি বলে আবার কাজ শুরু করতে চায়। তখন আমি মান্নাকে বলেছিলাম, সিনেমার নেগেটিভ আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে বলেছি। আমি এর কিছু জানি না। এই ছবি আর হবে না। সরি বলে নানা ঘটনার পর আবার শুটিং শুরু হলো। মান্না জানত এই সিনেমা দর্শক দেখবেন। ও গল্প বুঝত।’