ব্যক্তিগত বিষয়ে কোনো কথা বলতে চান না রাজ
আগে একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও রায়হান রাফীর পরাণ দিয়ে আলোচনায় আসেন শরীফুল রাজ। পরে হাওয়া, গুণিন, দামাল, কাজলরেখা, দেয়ালের দেশ, ওমর সিনেমা দিয়ে আরও পাকাপোক্ত হয় ক্যারিয়ার। তারপর একের পর এক চিত্রনাট্য আর সিনেমা শুটিং নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে হঠাৎ করেই শুটিং থেকে দূরে এই আলোচিত ঢালিউড তারকা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি নীরব। একটাই প্রশ্ন সামনে আসছে, এখন কী করছেন শরীফুল রাজ?
গতকাল ছিল এই অভিনেতার জন্মদিন। দুপুরে ফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে জানালেন, বেশ কিছুদিন শুটিং থেকে দূরে থাকায় কিছুটা অনিয়ম হয়েছে। তবে এর মধ্যেই নিয়ম করে হাতে থাকা চিত্রনাট্যগুলো পড়ছেন। যেসব সিনেমার শুটিং করার কথা রয়েছে, সেগুলোর জন্য নিয়মিত প্রস্তুতির মধ্যে থাকতে হচ্ছে। বললেন, ‘শুটিং না থাকলেও শুয়ে-বসে থাকার সময় নেই।’
‘রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কয়েক মাস ধরে শুটিং করা হচ্ছে না। এর মধ্যে বেশ কিছু কাজ করার কথা ছিল। সেগুলো হয়তো সামনে শুটিং শুরু হবে।’ বললেন রাজ। ‘দর্শকদের সামনে সময়-সময়ই আমি নতুনভাবে আসতে চাই। যে কারণে চিত্রনাট্যের ওপর বেশি গুরুত্ব দিই। এ কারণে অনেক সময় অনেকের সঙ্গে হয়তো সম্পর্কও খারাপ হয়। কিন্তু আমি অপেক্ষাই করি ভালো চরিত্রের। আমার শুটিংয়ে থাকলেও ভালো লাগে। বরং শুটিং না করায় শরীর ম্যাজম্যাজ করে। স্বস্তি পাই না।’
শিগগিরই শুটিংয়ে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সেগুলো নিয়ে এখনোই কিছু বলতে চান না। ঢালিউডে নাকি কোনো কিছু আগে থেকে বললে দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়। সেই কাজ ঠিকমতো করা যায় না। এ ছাড়া সিনেমার অবস্থা নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন পরাণখ্যাত এই অভিনেতা, ‘সবাই শুধু বলছেন দুই ঈদকে টার্গেট করে সিনেমা বানাবে। এভাবে একসঙ্গে ৫-৬টি সিনেমার প্রস্তাব যদি আসে, তখন দোটানায় পড়ে যাই। এ ঘটনাগুলোই ঘটছে। আমার মনে হয় দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আগে সিনেমার ঠিকঠাক শুটিং ও মুক্তির পরিকল্পনা করলে ভালো হয়। এমনও হতে পারে, কোনো সিনেমা উৎসবে গেল, সেটা সময় বুঝে মুক্তি পেল। শুধু ঈদ নিয়ে না ভেবে পর্যায়ক্রমে সিনেমাগুলো হলে এলে ভালো হয়। বছরজুড়ে দর্শক বিভিন্ন তারকার সিনেমা পাবে। এতে হলমালিক, প্রযোজক, দর্শক ভালো কিছু পাবেন। কারণ, ঈদের সব সিনেমাই কি ব্যবসাসফল হয়?’
এর মধ্যে কবি সিনেমার সব কাজ শেষ করেছেন। সিনেমায় তাঁর সহশিল্পী ইধিকা পাল। পরে বিরতি নিয়েছেন। এ অভিনেতা জানালেন, নতুন করে নিজেকে ঠিকঠাক করছেন। ‘এটা আমার রিফর্ম বলতে পারেন। নতুন করে সবকিছু ভাবতে হচ্ছে। এটাও শুনছি, অনেকেই বলছেন, আমার দ্রুত ভালো গল্পে ফেরা উচিত। এখন আমি তো সিনেমা বানাতে পারব না। আমাকে অভিনয়ের ভালো গল্পে কাজ করার সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে দিতে হবে। মুখিয়ে আছি শুটিংয়ের জন্য। ফেরাটা ফেরার মতো হতে হবে, না হলে এত পরিশ্রম করে কী লাভ হলো?’
বর্তমানে শুটিংহীন শরীফুলের দিন কেমন কাটছে? হেসে শরীফুল রাজ জানালেন, পছন্দের কাজগুলোয় সময় দিচ্ছেন। রাজ বলেন, ‘নিয়মিত সিনেমা দেখছি, বই পড়ছি, ঘুরছি। মাঝেমধ্যে ড্রাইভ করি। নিয়মিত জিমটা করতে হচ্ছে। নিজেকে সময় দিচ্ছি। রিফর্মের জন্য নিজেকে গোছাতে তো হবে।’
রাজ জানান, এর মধ্যে গ্লাডিয়েটর, সিটি অব ড্রিমস, সিভিল ওয়ার, ডিউন পার্ট ২সহ একাধিক সিনেমা দেখেছেন। তাঁর পছন্দের লেখকদের মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আহমদ ছফা, হুমায়ূন আহমেদ। তাঁদের বই ও সমসাময়িক অনেক লেখকের বই পড়া হচ্ছে। এই বিরতিতে ঘুরতে যাওয়ারও চিন্তা আছে।
রাজ বলেন, ‘আমি নিজে ড্রাইভ করে প্রায়ই ঘুরতে বের হই। সিলেট, আমার জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন খুবই পছন্দের জায়গা। ঢাকাও পছন্দ। আগে দল বেঁধে ঘুরতে যেতাম। ব্যস্ততার কারণে সেটা এখন আর হয়ে ওঠে না। কাজের ফাঁকে সামনে ইচ্ছা আছে নেপালে একটি ট্যুর দেব। অনলাইনে অনেক ভালো ভালো জায়গার ভিডিও দেখি, সেই জায়গাগুলোই যেতে ইচ্ছা করে।’
নিয়মিত কাজ করে যেতে চাইলে বিভিন্ন সময় বাধার মুখেও পড়তে হয়। সেসব বাধা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে চান। ‘ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিজের মতো করে নিজেকে এগিয়ে নিচ্ছি। একটা প্লানিং থাকে। সেভাবেই কাজ করি। কখনো কখনো নানা কথাও শুনতে হয়। এগুলোকে গুরুত্ব দিলে আসল কাজটাই হবে না। যে কারণে এখন আমি নীরব থাকার চেষ্টা করি। আমি ক্যারিয়ার নিয়েই ভাবি।’ বড় পর্দায় রাজকে আপাতত না পাওয়া গেলেও চরকি পর্দায় পাওয়া যাবে। আগামী বৃহস্পতিবার রাজ অভিনীত ওমর চরকিতে মুক্তি পাচ্ছে। এটি পরিচালনা করেছেন মোহম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। এই নায়ক শেষ করেছেন হাসিবুর রেজার কবি সিনেমার শুটিং ও ডাবিং।
ব্যক্তিগত বিষয়ে কোনো কথা বলতে চান না নায়ক শরীফুল রাজ। কাজ দিয়েই তিনি আলোচনায় থাকতে চান। অভিনয় দিয়েই তিনি ভক্তদের আরও কাছে জায়গা করে নিতে চান। বললেন, ‘আগামী সপ্তাহে চরকিতে “ওমর” রিলিজ হচ্ছে। সিনেমাটি দেখে দর্শকেরা আলোচনা সমালোচনা করুক, সেটা চাই।’
সবশেষে জানতে চাইলাম, জন্মদিন কেমন কাটছে। জানালেন, দিনটি নিজের মতো করে কাটাতেই ভালো লাগে। ‘স্কুল-কলেজের বন্ধু, সহকর্মীসহ অনেকেই ফোন করে, দেখা করে, কেউ ফেসবুকে অনেক আগের ছবি, মজার ঘটনা নিয়ে স্মৃতিচারণা করে, ইমোশনাল করে দেয়, ভালোই কাটে দিনটি।’ বললেন সময়ের আলোচিত অভিনেতা শরীফুল রাজ।