পরিপূর্ণ বিনোদনের ছবি ‘বিউটি সার্কাস’
বড় কোনো উৎসব ছাড়াই অনেক দিন পর একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত দুই সিনেমা বিউটি সার্কাস ও অপারেশন সুন্দরবন। তারকাবহুল দুই ছবি মুক্তি নিয়ে জোর আলোচনা ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মুক্তির আগে দুই ছবির পরিচালক, কলাকুশলীরা ব্যস্ত ছিলেন প্রচারে। সবার অপেক্ষা ফুরাচ্ছে, আজ থেকেই প্রেক্ষাগৃহে দেখা যাবে ছবি দুটি। এর মধ্যে বিউটি সার্কাস মুক্তি পাচ্ছে ১৯টি হলে। এ ছবির নির্মাণের পেছনের গল্প নিয়ে এ আয়োজন।
জয়া আহসান কখনোই সিনেমাকে সহজভাবে দেখেন না। এটা জয়া আহসানের নিজেরই কথা। তিনি মনে করেন, সিনেমায় দর্শক কিছু অজানা বিষয়ের প্রেক্ষাপট দেখতে চান, যা আগে দেখেননি। ভালো পারফরম্যান্স দেখতে চান, চান ভালো গল্প, নির্মাণে নতুনত্ব। এসব মিলিয়েই পরিপূর্ণ বিনোদনের সিনেমা বিউটি সার্কাস। জয়া বলেন, ‘সব সময় চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে নিজের সেরাটা দিতে পছন্দ করি। বিউটি চরিত্রের জন্য আমি সেটাই দিয়েছি। দর্শক অসম্ভব ভালো একটি ছবি পাবেন। কারণ, আমাদের ঐতিহ্যবাহী সেই সার্কাস, জারি গান, সারি গান দর্শক ভুলে যেতে বসেছেন। নতুন প্রজন্ম চমকিত হবে সিনেমাটি দেখে আর আগের প্রজন্মকে নস্টালজিক করবে।’
যেভাবে গল্পে এল সার্কাস
সিনেমাটির নির্মাতা মাহমুদ দিদার। তিনি শৈশবের বড় একটা সময় কক্সবাজারের লোকসংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠেছেন। কখনো বলীখেলা, কখনো ষাঁড়ের লড়াই, কখনো সার্কাস দেখতে ছুটতেন রাতবিরাতে। যেন একটা নেশায় পেয়ে বসেছিল। একবার সার্কাস দেখতে গিয়ে বিরূপ এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখিও হন।
এলাকার কিছু মানুষ সার্কাস চলতে দেবেন না। সার্কাসের মানুষদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে তাঁদের চলে যেতে বাধ্য করেন। এক যুগের বেশি সময় ধরে সেই ঘটনা মাথায় নিয়ে ঘুরছিলেন পরিচালক। অবশেষে ২০১৪ সালে সার্কাসের সঙ্গে জড়িত মানুষের রঙের পেছনের গল্পকে পর্দায় আনার পরিকল্পনা করেন।
লোকেশনের খোঁজে
টাঙ্গাইলের ধলেশ্বরী নদীর পার, নেত্রকোনার হাওর এলাকা, শেরপুর, সিলেটের পাহাড়ঘেরা কানাইঘাট, সুন্দরবন, মানিকগঞ্জসহ দেশের অনেক জায়গায় সিনেমাটির লোকেশন দেখতে হয়েছিল। কিন্তু কোনো লোকেশনই পছন্দ হয়নি। পরে লোকেশন ঠিক হয় নওগাঁ। লোকেশন খুঁজতেই অনেকটা সময় চলে যায়। মাহমুদ দিদার বলেন, ‘সার্কাসশিল্পটা দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। সেই সার্কাস ঠিকঠাকভাবে তুলে ধরার জন্যই সময় লেগেছে। তা ছাড়া গল্পের পটভূমি বিশাল। আমরা খুশি, অবশেষ ভালো সময়ে সিনেমাটি দর্শকদের সামনে আনতে পারছি।’
জয়ার লুকিয়ে সার্কাস দেখা
জয়াকে ভেবেই সিনেমাটির গল্প লেখা। চরিত্র কেমন হবে, বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে চিত্রনাট্য লিখতে জয়া আহসান, পরিচালক ও সহকারী নিয়ে ছুটলেন রাজবাড়ী, লুকিয়ে যাত্রা দেখতে। জয়া কয়েক দিন থাকলেন সেখানে। সে সময় তিনি খুব কাছ থেকে দেখেন সার্কাসের রঙিন মানুষদের পেছনের সংগ্রাম। তাঁদের সঙ্গে জয়ার সখ্য বাড়তে থাকে। সেই মানুষ ও গল্পগুলো পরে বিউটি সার্কাস-এ জায়গা করে নিয়েছে। জয়া বলেন, ‘সার্কাসের মেয়েগুলো কীভাবে মেকআপ নেয়, কী পোশাক পরে, তাদের আচরণ কেমন-এগুলো তাদের সঙ্গে থেকে দেখেছি।’ তখন থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সার্কাসের দড়ির ওপর নিজেই হাঁটবেন। যত উঁচুই হোক, ডামি ব্যবহার করবেন না। সিনেমায় দেখা যাবে ৬০ ফুট ওপর থেকে জয়ার নিচে নামার দৃশ্য।
‘হাতি-ঘোড়াগুলোকে আমি খাওয়াতাম’
সার্কাস নিয়ে গল্প, সেখানে হাতি, ঘোড়া, বানর, কুকুর, পাখি থাকবে না, তা কি হয়? প্রাণিপ্রেমী জয়া যেখানে আছেন, সেখানে পশুপাখিদের সঙ্গে খাতির জমবে না, সেটাও ভাবা যায় না। জয়া বলেন, ‘যত দিন শুটিংয়ে ছিলাম, তত দিন সার্কাসের যত পশুপাখি ছিল, সব কটির যত্ন আমি নিজে নিয়েছি। খেতে দেওয়া, যত্ন নেওয়া-সবই আমি করেছি। চাইছিলাম এগুলোর যেন কোনো ক্ষতি না হয়।’
তারকাবহুল ছবিতে জয়া আহসান ছাড়াও আছেন তৌকীর আহমেদ, ফেরদৌস, এ বি এম সুমন, গাজী রাকায়েত, শতাব্দী ওয়াদুদ এবং প্রয়াত এস এম মহসীন ও হুমায়ুন সাধু। ছবিটি নিয়ে ফেরদৌস বলেন, ‘এ ধরনের গল্পে এই প্রথম অভিনয় করেছি। আমার বখতিয়ার চরিত্রে দর্শক অন্য এক ফেরদৌসকে পাবেন।’