মা–বাবার কবরের পাশে শায়িত সালাহউদ্দীন জাকী
‘ঘুড্ডি’ নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকীকে আজ শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বেলা সাড়ে ১১টার পর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। সেখানেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানান শিল্পী–কলাকুশলীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। পরে জোহর নামাজের পর ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে নির্মাতার প্রথম জানাজা হয়। বেলা তিনটায় এই নির্মাতার মরদেহ চ্যানেল আইয়ের প্রধান কার্যালয়ে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা ও জানাজার জন্য নিয়ে আসা হয়। পরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বাবা–মায়ের কবরের পাশে আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তখন সালাহউদ্দীন জাকীর চলে যাওয়া চলচ্চিত্র অঙ্গন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য অনেক বড় ক্ষতি।’ অভিনেতা ও সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘জাকীর সঙ্গে কখন কোথায় পরিচয় সেটি মনে নেই, তবে আমরা স্বাধীনতার পর যাঁরা একটু সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করতাম, তখন প্রায়ই আমাদের দেখা হতো, আড্ডা হতো। চলচ্চিত্র নিয়ে, সৃজনশীলতা নিয়ে তাঁর এক ধরনের পাগলামি ছিল। সেই পাগলামিটা আমাদেরও স্পর্শ করত, উৎসাহিত করত।’
অন্যদিকে চ্যানেল আই কার্যালয়ে শেষবারের মতো নির্মাতাকে দেখতে ছুটে আসেন ‘ঘুড্ডি’খ্যাত নায়িকা সুবর্ণা মুস্তাফাসহ আরও অনেকে। এর মধ্যে শেষ শ্রদ্ধা জানান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নির্দেশক নাসির উদ্দীন ইউসুফ, চলচ্চিত্র পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম, অভিনেত্রী আফসানা মিমি, চিত্রনায়ক রিয়াজসহ অনেকে। পরিচালক সমিতির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে ছুটে আসেন পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, মুশফিকুর রহমান, প্রযোজক খোরশেদ আলমসহ অনেকে।
চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে জানাজা-শ্রদ্ধা শেষে সালাহউদ্দীন জাকীর মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পরিচালককে তাঁর মা-বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে।
চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী ১৯ সেপ্টেম্বর মারা যান। কিন্তু এই পরিচালকের এক ছেলে ও এক মেয়ে কানাডায় থাকায় দাফন করতে সময় নেওয়া হয়। তারা দেশে ফিরেছেন। পরবর্তীতে আজ দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মৃত্যুকালে সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকীর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। ১৯৪৬ সালের ২৬ আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জানা গেছে, ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়ও ধানমন্ডির বাসায় ছিলেন। সব ঠিকঠাকভাবে চলছিল। রাত ১০টার পর হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এরপর দ্রুত রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এই পরিচালককে। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান তিনি মারা গেছেন।
নির্মাতা পরিচয়ের বাইরেও সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী কাহিনিকার, সংলাপ রচয়িতা, চিত্রনাট্যকার ও লেখক হিসেবে পরিচিত। ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নিজের প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঘুড্ডি’ দিয়ে দর্শকদের পাশাপাশি চলচ্চিত্র সমালোচকদেরও মন জয় করেন তিনি। এই সিনেমার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এরপর ‘লাল বেনারসি’, ‘আয়না বিবির পালা’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। গত নব্বই দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন তিনি।