লুঙ্গি পরা সেই ব্যক্তির খোঁজ মিলল, সেদিন কী ঘটেছিল সিনেপ্লেক্সে
লুঙ্গি পরা এক বৃদ্ধ ব্যক্তির ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে, তিনি অভিযোগ করেছেন, লুঙ্গি পরায় তাঁকে সিনেমার টিকিট দেওয়া হয়নি। ‘পরাণ’ সিনেমা দেখতে গতকাল বুধবার বিকেলে মিরপুরে স্টার সিনেপ্লেক্সের সনি স্কয়ারে গেলেও সিনেমা না দেখেই ফিরে যেতে হয়েছে তাঁকে।
বাংলা চলচ্চিত্র নামে চলচ্চিত্রবিষয়ক একটি গ্রুপে সেই বৃদ্ধের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে ঘটনা তুলে এনেছেন কাওসার আহমেদ নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁর পোস্টটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে; কেউ কেউ এটিকে বৈষম্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সেই ব্যক্তির নাম আমান আলী সরকার, তাঁর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। ঢাকায় ছেলের মিরপুরের বাসায় বেড়াতে এসে সনি স্কয়ারে গিয়েছিলেন। তাঁর ছেলে শফি আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবা লুঙ্গি পরে সিনেমা হলে যাওয়ায় তাকে টিকিট দেওয়া হয়নি। আমরাও লুঙ্গি পরি, এমনটা কেন করা হবে? আমার বাবা আর সিনেমা দেখতে হলে যাবে না। যদি “পরাণ” সিনেমার নায়ক-নায়িকা বাবাকে হলে নিয়ে সিনেমা দেখায়, তাহলে যাবে।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কাওসার আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, টিকিট জন্য অপেক্ষমাণ ব্যক্তিদের সারিতে তাঁর সামনেই ছিলেন আমান আলী, কাউন্টারে তাঁর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর লুঙ্গি পরা দেখে আর টিকিট দেননি টিকিট বিক্রেতা। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা প্রতিবাদ করলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
ঘটনার বর্ণনা করে এ প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘কাউন্টারে গেলে সেই মুরব্বির কাছে টাকা চাওয়া হলে তিনি ৫০০ টাকার একটি নোট দিলেন। পরে ওনাকে টিকিট বিক্রেতা বললেন, “টিকিটের দাম ৩৫০ টাকা, আপনি টিকিট নেবেন?” মুরব্বি বললেন, “হ্যাঁ।” তখন মুরব্বির মুখ দেখে টিকিট বিক্রেতা বলেন, “আপনি কী পরে আছেন?” তিনি বললেন, “লুঙ্গি।”
টিকিট বিক্রেতা বললেন, “লুঙ্গি পরে আমাদের এখানে আলাউ নাই। লুঙ্গি পরে ঢোকা যাবে না।” আমি বললাম, লুঙ্গি পরে ঢোকা যাবে না, এটা কী সিস্টেম? তখন তিনি বললেন, “এটা আমাদের নিয়ম। ২০০১ সাল থেকে এই নিয়ম চলছে সনিতে।” আমার সঙ্গে রুড আচরণ করেছেন।’
আমান আলীর একটি ভিডিও ধারণ করেছেন কাওসার আহমেদ। সেই ভিডিওতে তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনার কাছে টিকিট বিক্রি করেনি কেন?’ আমান আলী বলেন, ‘আমি লুঙ্গি পরা। লুঙ্গি পরেছি বলে আমার কাছে টিকিট বিক্রি করবে না।’ কিছুক্ষণ পর তাঁকে আবার প্রশ্ন করা হয়, তাহলে এখন সিনেমা দেখবেন কীভাবে? লুঙ্গি পরা ব্যক্তি বলেন, ‘এখন চলে যাব। চলে যাচ্ছি।’
ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর তুমুল সমালোচনার মুখে স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে এ ঘটনাকে ভুল–বোঝাবুঝি হিসেবে দাবি করেছে। আমান আলীকে সিনেমা দেখতে সনি স্কয়ারে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।