‘নবাব এলএলবি’ নিয়ে প্রযোজক–পরিচালকের দুরকম বক্তব্য
৯৯ টাকা নিয়ে অর্ধেক সিনেমা দেখানোকে পরিচালক অনন্য মামুন প্রতারণা হিসেবে মানতে না চাইলেও প্রযোজক আজমত রহমান মেনেছেন। তিনি মনে করছেন, এমন ঘটনাকে দর্শকেরা প্রতারণা বলবেন। দর্শকদের না জানিয়েই যেহেতু এমনটা করা হয়েছে, এটা তো একধরনের প্রতারণাই, জানান ‘নবাব এলএলবি’ ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সেলিব্রেটি প্রোডাকশনের কর্ণধার আজমত রহমান।
শাকিব খান ও মাহিয়া মাহি অভিনীত ‘নবাব এলএলবি’ ছবিটি ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি পায় একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। দেশ-বিদেশের বাংলা সিনেমাপ্রেমী দর্শকেরা ৯৯ টাকায় অনলাইনে টিকিট কিনে ছবিটি দেখতে বসেন। কিন্তু ছবির মাঝামাঝি এসে জানানো হয়, ছবির বাকি অংশ দেখানো হবে পয়লা জানুয়ারি। এতে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন দর্শকেরা। একে প্রতারণাই বলছেন দর্শকেরা। এমন কাণ্ডে ভোক্তা অধিকার আইনে ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দিয়েছেন অনেকে। ছবি মুক্তির দিন সন্ধ্যায় ছবির একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেন পরিচালক। সেখানে আমন্ত্রিত অতিথিদের ছবিটি অর্ধেক দেখানো হয়। বাকি অর্ধেক না দেখানোর কারণ জানতে চাইলে সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, এটি একটি ব্যবসায়িক কৌশল।
‘নবাব এলএলবি’ সিনেমা অর্ধেক মুক্তি দেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে অনন্য মামুন সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘আমরা কোনো প্রতারণা করিনি। এমন তো নয় যে ৯৯ টাকায় পুরো সিনেমা দেখাচ্ছি না। যাঁরা ৯৯ টাকায় টিকিট কেটেছেন, তাঁরা এক টিকিটেই প্রথম পার্ট দেখেছেন, পরের পার্টও দেখতে পাবেন। আর সিনেমাটির দৈর্ঘ্য সাড়ে তিন ঘণ্টা। এত বড় সিনেমা এক পার্টে মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয় বলেই দুই অংশে দেওয়া হয়েছে।’
ছবিটি অর্ধেক মুক্তি দেওয়া বিষয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কী ভেবেছে, তা জানতে যোগাযোগ করা হয় সেলিব্রেটি প্রোডাকশনের চেয়ারম্যান আজমত রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ করানো হয়েছে ভারতে। ডিসিপি হাতে পেয়েছি ১৫ ডিসেম্বর। ছবির কিছু কিছু জায়গা কমপ্লিট করতে পারিনি। আমরা কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করতে চাইনি। আরেকটা বিষয় দেখলাম, সিনেমা হয়ে গেছে সাড়ে তিন ঘণ্টা। আমি তো এক্সপার্ট না। আমাকে জানানো হলো, সাড়ে তিন ঘণ্টায় মুক্তি না দিয়ে যেন দুই অংশ করে দেওয়া হয়। আমিও রাজি হলাম।’
এমনটা যেহেতু আপনারা ভেবেছেন তাহলে আগে থেকে ঘোষণা দেননি কেন? জানতে চাইলে আজমত রহমান বলেন, ‘আমরা আসলে ১৬ ডিসেম্বর পুরো ছবিটা দেখানোর পরিকল্পনাই করেছিলাম। কিন্তু এডিটিং শেষ না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এদিকে শেষ মুহূর্তে আর মুক্তির দিনও চেঞ্জ করতে চাইনি। তাই অর্ধেক দিয়ে হলেও দর্শককে দেখিয়েছি।’ বিষয়টিকে পরিচালক ‘ব্যবসায়িক কৌশল’ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নে প্রযোজক বলেন, ‘কিছুটা বাধ্য হয়েই পরিস্থিতিকে ব্যবসায়িক কৌশল বানাতে হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম, এত বড় দৈর্ঘ্যের সিনেমা দিয়ে কী করব? ছবির দৈর্ঘ্য লম্বা হয়ে যাওয়ায় পোস্ট প্রোডাকশনে সময়টাও বেশি লেগে গেছে। আমরা ১৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে ছবিটি অর্ধেক মুক্তির সিদ্ধান্ত নিই। আমরা চেয়েছিলাম, সিনেমা দেখানোর এক ঘণ্টা আগে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি সবাইকে জানাব। পরদিন ১৬ ডিসেম্বর হওয়ায় সবাই এত ব্যস্ত ছিল যে সেটা আর করা হয়ে ওঠেনি। তবে এটুকু বলতে চাই, শেষ পর্যন্ত দর্শককে হতাশ হতে হবে না। তা ছাড়া আমাদের অ্যাপসটা একেবারে নতুন। এখন আর আমাদের কাছে কোনো ছবিও নেই। অ্যাপসের প্রতি দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখতে এমনটা করেছি।’
আরও বেশ কয়েকটি সিনেমার কাজে হাত দিয়েছে সেলিব্রেটি প্রোডাকশন। সেসব ছবির কোনোটির কাজই পুরোপুরি শেষ হয়নি। নতুন ওটিটি প্ল্যাটফর্মটিকে চাঙা করতে তাই শাকিব খান অভিনীত ‘নবাব এলএলবি’ এনেছে তারা। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মতে, কৌশলটি ভালোই ছিল। কিন্তু ছবিটি অর্ধেক মুক্তি দিয়ে হিতে বিপরীত হয়েছে। লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে ফেলল পরিচালক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান।