চার ভাইবোনের ভেতর ও নাকি সবচেয়ে লক্ষ্মী
দেশের ১১টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল নতুন সিনেমা ‘অলাতচক্র’। এ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন হাবিবুর রহমান। কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফার উপন্যাস অবলম্বনে ও একই নামে নির্মিত এই সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। এই ছবি, ভারতীয় ছবিতে নিজের কাজসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বললেন এই অভিনেত্রী।
প্রশ্ন :
দর্শক কেন ‘অলাতচক্র’ ছবিটি দেখবে?
এই সিনেমা কেবল সিনেমা নয়, মুক্তিযুদ্ধের দলিল। দর্শকের দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধকে চেনা, জানা। আহমদ ছফার গল্প থেকে নির্মিত ছবি এটি। আমি, আহমেদ রুবেল, আজাদ আবুল কালাম অভিনয় করেছি, আর একজন নির্মাতার প্রথম ছবি, দেশের প্রথম থ্রি–ডি ছবি। এসব কারণে ছবিটি দেখা উচিত। একটা সিনেমা তখনই সিনেমা হয়ে ওঠে, যখন দর্শক সেটিকে গ্রহণ করেন। দর্শক সিনেমার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
প্রশ্ন :
আপনি বাংলাদেশ ও ভারতের একজন বড় তারকা। আপনি কেনো একেবারে নতুন এই পরিচালকের ওপর ভারসা করলেন?
পরিচালক অনেক দিন ধরে, ধৈর্য ধরে লেগে ছিলেন। এই ছবি নিয়ে পরিচালকের প্রচেষ্টা ছিল সৎ ও আন্তরিক। তা ছাড়া আহমদ ছফা দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন লেখক। ছবিতে আমার চরিত্রটিও দুর্দান্ত। ছবিটি আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির সময় মুক্তি পাবে, তাই করলাম। আশা করি, ভালোই হয়েছে। ছবিটা দ্রুত শেষ করে মুক্তি দিল, এটা একজন তরুণ নির্মাতার ক্ষেত্রে ভালো ব্যাপার। দর্শক দেখুক, ভালো–মন্দ নিয়ে আলাপ করুক।
প্রশ্ন :
‘অলাতচক্র’–এর তায়েবা হয়ে ওঠা কতটা চ্যালেঞ্জের ছিল?
আমার অংশের শুটিং হয়েছে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে। আমার বেডের চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল ৫০–৬০ জন হাম, গুটিবসন্তে আক্রান্ত রোগী। এর ভেতরে যতটা সাবধানে পারা যায়, শুটিং করা। ভয়ে ভয়ে ছিলাম। এটা ছাড়া আমাদের কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না। কেননা, কেবল এই হাসপাতাল দেখতে অনেকটাই কলকাতার হাসপাতালের মতো।
প্রশ্ন :
‘দেবী’র পর বোধ হয় এই প্রথম দেশে আপনার ছবি মুক্তি পাচ্ছে?
হ্যাঁ। মাঝে ভারতীয় বাংলা ছবি ‘কণ্ঠ’ মুক্তি পেল। এটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, বাংলাদেশে তো কলকাতার পচা পচা সব ছবি মুক্তি পায়। ভালো ছবিগুলো পায় না। কলকাতায় আমার অভিনীত ভালো ছবিগুলোর বেশির ভাগই দেশে মুক্তি পায়নি। তার ভেতর ‘কণ্ঠ’ মুক্তি পাওয়া আমার জন্য খুব আনন্দের ব্যাপার ছিল। ছবিটা আমাদের দেশের মানুষ দেখেছেন, আপ্লুত হয়েছেন। ছবিটা ভালোই চলেছে। এ রকম তাৎপর্যপূর্ণ অনুপ্রেরণাদায়ক গল্পের সিনেমা কম হয়, হলেও তা দর্শক পর্যন্ত কম পৌঁছায়। এই ছবি পৌঁছেছে।
প্রশ্ন :
এই মুহূর্তে আপনার হাতে আর কী কী ছবি আছে?
লকডাউনে পিপলু আর খানের ছবিটা করলাম। সেটার পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে। এ বছরের শেষ নাগাদ ছবিটা মুক্তি পেতে পারে। আর কলকাতায় গিয়ে সৌকর্য ঘোষালের ‘ওডিসি’র শুটিং করে এলাম। বাংলাদেশে আমার ‘পেয়ারার সুবাস’ আর ‘বিউটি সার্কাস’ ছবি দুটো মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আর কলকাতায় ‘বিনিসুতোয়’ আর ‘ঝরা পালক’ ছবি দুটো মুক্তি পাবে। দেশে তিন–চারটা প্রজেক্ট নিয়ে আলাপ চলছে। তবে এখনো কোনো ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হইনি। আসলে প্রি–প্রোডাকশন তো অনেক বড় একটা ব্যাপার। সেটার ওপরেই বাকিটা নির্ভর করে। আর কলকাতার কয়েকটা ছবির ব্যাপারে আলাপ হয়েছে। এদিককার কাজ গুছিয়ে নিয়ে হয়তো সেখানে গিয়ে শুটিং শুরু করব।
প্রশ্ন :
বাড়িতে কীভাবে সময় কাটছে?
বাড়িতে কোথায় আর সময় কাটছে! সময়ই তো পাচ্ছি না। নিজেকে দেওয়ার জন্য সময়টা বের করতে পারছি কোথায়? এই কাজ, সেই কাজ। যেটুকু সময় বাড়িতে থাকি, পরিবারের সঙ্গে কাটাই। ক্লিওর (পোষ্য কুকুর) সঙ্গে কাটাই। বাড়িতে থাকলে ও আমার আশপাশে ঘুরঘুর করে। আমি যখন সিনেমা দেখি, ও পাশে এসে বসে, একটু যন্ত্রণা করে। তবে মা বলে, আমাদের চার ভাইবোনের ভেতর (ক্লিওকে ছোট বোন ধরে) ও নাকি সবচেয়ে লক্ষ্মী।