'রাগ, অভিমান, দুঃখকে ভালোবাসায় রূপান্তর করুন'
২৪ জুলাই ডিজনি-হটস্টারে মুক্তি পেল মুকেশ ছাবড়া পরিচালিত ‘দিল বেচারা’ ছবিটি। মুক্তির আগেই হাজার হাজার সুশান্তভক্ত আইএমডিবিতে ছবির রেটিং দিয়েছে দশে প্রায় দশ। সুশান্ত সিং রাজপুত অভিনীত শেষ ছবি এটি, আর ছবির নায়িকা সানজানা সংঘির প্রথম। দিল্লি থেকে একান্ত সাক্ষাৎকারে মুঠোফোনে কথা হলো সানজানার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য।
‘রকস্টার’ ছবি দিয়ে বলিউডে আপনার অভিষেক হয়। এখন আপনি ‘দিল বেচারা’ ছবির নায়িকার চরিত্রে। বলা যেতে পারে স্বপ্ন সত্যি হলো। কেমন লাগছে?
‘রকস্টার’ ছবিতে যখন কাজের সুযোগ পাই, তখন আমার বয়স ১৩ বছর। শুটিং শেষ করে যথারীতি পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এর মধ্যে কিছু বিজ্ঞাপনের কাজ করেছি। ‘রকস্টার’ ছবির জন্য মুকেশ ছাবড়াই (‘দিল বেচারা’ ছবির পরিচালক) আমাকে আবিষ্কার করেছিল। আর এই ছবির জন্যও তিনিই আমাকে নির্বাচন করে। স্নাতক শেষ করার মাস দুই পর হঠাৎ মুকেশের ফোন আসে। অডিশনের জন্য ডাক পাই। একাধিক অডিশন দেওয়ার পর আমি নির্বাচিত হই। আর তখনই জানলাম মুকেশ এই ছবির পরিচালক। হলিউড ছবি ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’-এর হিন্দি রিমেক ‘দিল বেচারা’। ১৬ বছর বয়সে এই ছবিটা দেখেছিলাম। দারুণ লেগেছিল। আর এখন আমি এই ছবির নায়িকা। হ্যাঁ, স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতোই ব্যাপার।
‘দিল বেচারা’ ছবিতে আপনি বাঙালি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। স্বস্তিকা আর শাশ্বত আপনার মা–বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই দুই বাঙালি অভিনেতা কি আপনাকে বাঙালি হতে সাহায্য করেছেন?
স্বস্তিকাদি (স্বস্তিকা মুখার্জি) আর শাশ্বত দার (শ্বাশত চ্যাটার্জি) সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ। বাঙালি মেয়ের চরিত্রের জন্য আমাকে প্রায় আট মাস ধরে বাংলা শিখতে হয়েছে। এনএসডির একজন বাঙালি শিক্ষিকার কাছ থেকে বাংলা উচ্চারণ শিখেছি। আসলে মুকেশ (পরিচালক) চেয়েছিল আমি স্বস্তিকা আর শাশ্বতদার সঙ্গে মিলিয়ে যেন রীতিমতো বাংলায় কথা বলি। এটা আমার জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। স্বস্তিকা আর আমার প্রথম দিনের রিডিং ছিল। মুকেশও ছিল সেখানে। রিডিংয়ের পর স্বস্তিকা মুকেশকে বলে, ‘তুমি এই চরিত্রের জন্য বাঙালি মেয়েকে কীভাবে পেলে? ও তো একদম পারফেক্ট।’ তখন মুকেশ আর আমি একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলি। আমি তো আনন্দে একরকম লাফিয়ে উঠলাম। কারণ, এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রশংসা। মুকেশ তখন স্বস্তিকাকে জানাল যে আমি দিল্লির, উত্তর ভারতীয় পরিবারের মেয়ে। আমার মা গুজরাটি, বাবা পাঞ্জাবি।
সুশান্তের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের ঘটনাটা বলুন। বাস্তবে আপনাদের সম্পর্কের রসায়ন কেমন ছিল?
মুকেশের অফিসে রিডিংয়ের জন্য আমি গিয়েছিলাম। তখন সুশান্তের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ। আর প্রথম দেখাতেই মনে হয়েছিল যে আমরা একে অপরের ভালো বন্ধু হতে পারি। আমাদের মানসিকতা অনেকটা এক। আর অনেক ব্যাপারে আমাদের মিল আছে। আমি আর সুশান্ত দুজনই পড়াশোনা করতে ভালোবাসি। আমাদের দুজনেরই খাওয়াদাওয়া, নাচ আর সিনেমা দারুণ পছন্দ। আমরা প্রচুর আড্ডা মারতাম। প্যারিসে গিয়ে আমরা বাচ্চাদের মতো চকলেট, ব্রাউনি খেয়েছি। শুটিংয়ের ফাঁকে নাচ করতাম। সুশান্ত অত্যন্ত বিনয়ী। বলতে পারি, আমি আর সুশান্ত দুজনই সৃষ্টিশীল আর বন্ধুপরায়ণ।
সুশান্তকে কীভাবে মনে রাখতে চান?
সুশান্ত যে শুধু স্মৃতি, তা আমার এখনো বিশ্বাস হয় না। আমি সুশান্তের ভক্তদের অনুরোধ করছি যে সব রাগ, অভিমান, দুঃখকে ভালোবাসায় রূপান্তর করুন। ‘দিল বেচারা’কে সুশান্তের দেওয়া শেষ উপহার হিসাবে গ্রহণ করুন। আর সুশান্তের প্রতি এর চেয়ে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি আর কিছু হতে পারে না। আমি নিজেও অন্যদের মতোই সুশান্তভক্ত।
গত এক মাসে বলিউডের চেহারা বদলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নিজেকে কীভাবে ইতিবাচক রেখেছেন?
‘দিল বেচারা’ আমাকে পজিটিভ থাকতে শিখিয়েছে। মাত্র ২৩ বছর বয়সে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমি সব নেতিবাচক দিককে রেডিওর ভলিউমের মতো কমিয়ে রাখি। আমি শুধু মন দিয়ে কাজ করতে চাই। আমার লক্ষ্য স্থির রেখে এগোতে চাই। এই সফরে আমার যারা সঙ্গী, তাদের সঙ্গে আমার যেন ভালোবাসার সম্পর্ক বজায় থাকে।