'তাঁরা কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন'
কেন মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই ঝলমলে ক্যারিয়ার ফেলে চলে যেতে হলো সুশান্ত সিং রাজপুতকে? একি কেবলই অবসাদ থেকে আত্মহত্যা? ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন? নাকি বলিউডের একেপেশে মনোভাব আর স্বজনপ্রীতি? এসবের সম্মিলন নাকি এসব ছাড়াও অন্য কোনো কারণ লুকিয়ে আছে? হন্যে হয়ে এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজছে মুম্বাই পুলিশ।
মৃত্যুর পর বলিউডের বিভক্তি আর অন্ধকার স্পষ্ট হচ্ছে। দুই শিবিরে ভাগ হয়ে চলছে মামলা, কাদা–ছোড়াছুড়ি। এরই মধ্যে ভারতীয় গণমাধ্যমে ছেয়ে গেল, প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে নাকি মোটেই ভালো যাচ্ছিল না সুশান্তের সম্পর্ক। এমনকি রিয়া চক্রবর্তী নাকি প্রায়ই সুশান্তের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত, মানসিক যন্ত্রণা দিত বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই সব প্রতিবেদনে। ৬ জুন সুশান্তের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান রিয়া। এর মধ্যে রিয়া আর সুশান্তর কোনো কথা হয়নি। মৃত্যুর আগের রাতে সুশান্ত রিয়াকে ফোন করে রিয়া সেই ফোনও ধরেননি। আর ১৪ জুন দুপুরে অন্য সবার সঙ্গে, পুরো বিশ্বের সঙ্গে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো রিয়া জানতে পারেন সুশান্তের আত্মহত্যার ঘটনা। এর মধ্যে রিয়ার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। সুশান্তের আত্মহত্যার প্ররোচনার জন্য। এমনটাও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সুশান্ত তাঁর প্রথম প্রেমিকা অঙ্কিতা লোখান্ডেকেই মিস করছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন, অঙ্কিতাকে ছেড়ে আসা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আর এটাও বুঝে গিয়েছিলেন যে অঙ্কিতার মতো করে কেউ তাঁকে কখনো ভালোবাসতে পারেনি, পারবে না। যদিও এসব তথ্যের ভিত্তিতে সুশান্ত ছয় মাস ধরে যেসব ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছেন, পুলিশকে ওই ডাক্তারদের দেওয়া জবানবন্দিকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু জানিয়েছেন, তাঁরা সব রকম গোপনীয়তা রক্ষা করে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। এ রকম কিছুই নাকি বলেননি।
সে যা-ই হোক, ইরফান খানের স্ত্রী সুতপা শিকদার সম্প্রতি সুশান্তের আত্মহত্যা ও রিয়ার সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল নিয়ে মুখ খুলেছেন। ফেসবুকে তিনি রিয়ার পক্ষ নিয়ে লিখেছেন, ‘এই সব প্রতিবেদনে একজন নারীকে প্রমাণ ছাড়া দায়ী করে যেসব কথা লেখা হচ্ছে, তাতে আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। দুঃখ আমাদের মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শেখায়। যন্ত্রণা আমাদের কেবলই অন্য মানুষের যন্ত্রণা বুঝতে শেখায়। কিন্তু এখানে কী ঘটছে! মনে হচ্ছে, আমরা একটা মৃত মানুষকেও সম্মান করা ভুলে গেছি।’
তারপর সুতপা লেখেন, ‘দুজন মানুষের ব্যক্তিগত সম্পর্কের মধ্যে কী ছিল, কী ঘটেছিল, সেসব না জেনেই ক্রমাগত আমরা একটা মানুষকে রাজ্যের কটু কথা বলে যাচ্ছি। অনেকেই আমাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত নানা প্রতিবেদন পাঠাচ্ছেন। সেগুলো পড়ে আমি হতবাক হয়ে যাচ্ছি। এই সাংবাদিকেরা দুই মিনিটের প্রচারণার জন্য পেশাদারত্ব ভুলে গেলেন! লজ্জা, লজ্জা!আমরা সবাই মিলে কী কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিচ্ছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কথা না হয় আর না–ই বললাম। আমি কল্পনা করতে পারছি, এই মেয়েটার ওপর দিয়ে কী যাচ্ছে! আর সত্যিই যদি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পেশাগত দায়িত্ব ভুলে সুশান্তের ব্যক্তিগত ব্যাপার শেয়ার করে থাকেন, তাহলে তাঁরা কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এই ডাক্তারদের নিষিদ্ধ করা উচিত।’
এর আগে ইরফান ও সুতপার বড় ছেলে বাবিল লেখেন, ‘বলিউডের দুনিয়ায় এ রকম প্রতিভার দেখা মেলে কালেভদ্রে। এই মানুষটা কোয়ান্টাম ফিজিকস বোঝে, কবিতা ভালোবাসে, জৈব চাষের সমর্থনে লড়াই করে, স্বপ্ন দেখে বাচ্চারা নাসায় যাবে, অবসরে টেলিস্কোপ নিয়ে আকাশ দেখে, জ্যোতির্বিদ্যায় কী গভীর অনুরাগ, বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ায় আর যোগব্যায়াম করে। এ রকম আরেকজন খুঁজে পাওয়া দায়!’