সাইফ আলী খান 'ইতিহাসের পোকা'
১৭ জানুয়ারি ফিল্ম কম্পানিয়নের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে মুক্তি পেয়েছে এক ভিডিও। সেখানে ‘স্যাকরেড গেমস’খ্যাত সাইফ আলী খান কথা বলেছেন তাঁর সাম্প্রতিক সুপারহিট ছবি ‘তানহাজি: দ্য আনসাং হিরো’ নিয়ে। ১০ জানুয়ারি মুক্তির পর মাত্র ১২ দিনে ১৫০ কোটি রুপি খরচ করে বানানো এই ছবিটি বক্স তুলে এনেছে ২৪২ কোটি রুপি।
অনুপমা চোপড়ার সঙ্গে কথোপকথনের একপর্যায়ে ৪৯ বছর বয়সী এই অভিনেতা বলেন, ‘ছবিটা খুবই ভালো করছে। তবে দর্শক যদি ভাবেন যে যা কিছু দেখানো হয়েছে, সেসব ঐতিহাসিক সত্যি, তাহলে ভুল করবেন। আমার চরিত্রটাও কাল্পনিক। আর আমি যা বলছি বুঝেশুনেই বলছি।’
তখন এই সাংবাদিক বলেন, ‘হ্যাঁ, আপনার তো ইতিহাস নিয়ে অনেক পড়াশোনা। আপনি তো ইতিহাসের পোকা।’ সাইফ আলী খান তখন গম্ভীরভাবে বলেন, ‘ইংরেজরা এই উপমহাদেশে আসার আগে তো ভারতের অস্তিত্বই ছিল না।’
সাইফ আলী খানই জানেন, তিনি কী অর্থে কথাটি বলেছেন। তবে দর্শক ও অনুসারীরা বিষয়টি মোটেই ভালোভাবে নেয়নি। এই ভিডিওর নিচে থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছেয়ে গেছে সাইফ আলী খানের এই মন্তব্য নিয়ে সমালোচনা আর ট্রলে।
বলিউড তারকা কঙ্গনা রনৌত ‘পাঙ্গা’ সিনেমার দলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সাইফ আলী খানকে একহাত দেখে নিয়েছেন। লিখেছেন, ‘ব্রিটিশদের আগে ভারতের অস্তিত্ব না থাকলে পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো মহাভারত এল কোত্থেকে? বেদ লেখা হলো কীভাবে? কৃষ্ণ মহাভারতে ছিলেন। তখন ভারতও ছিল। আমাদের দেশের অনেক শক্তিমান রাজা যুদ্ধ করেছেন। তাঁরাই ছিলেন ভারত। আর সে জন্যই ভারত মহান।’
ভারতীয় লেখক তারেক ফাতাহ টুইট করেন, ‘ইতিহাস বিশেষজ্ঞ সাইফের কথা ধরে বলা যেতে পারে, ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল চীনে। আর ভাস্কো দা গামা গিয়েছিলেন ফিজিতে!’ নন্দিনী নামের একজন লিখেছেন, ‘এ জন্যই তো নেটিভ আমেরিকানদের বলা হলো রেড পাকিস্তান। কারণ, তখন তো ভারত বলে কিছু ছিল না।’
আরেকজন সাইফ আলী খানকে টিটকারি করে বলেন, ‘প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ সাইফ আলী খান বলছেন, তানহাজি ঐতিহাসিকভাবে সত্য নয়। কয়েক দশক ধরে বামপন্থীরা এভাবেই ইতিহাসকে মুছে দিয়ে আসছে।’ এরপর তিনি সাইফ আলী খানকে শিবাজি ও চাণক্যকে জানতে ও আরও ভালোভাবে ইতিহাস পড়তে ও বুঝতে উপদেশ দেন।
‘ইন্ডিয়া যদি না-ই থাকবে, তাহলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কোত্থেকে এল?’, ‘নতুন ইতিহাসবিদের আবির্ভাব ঘটল। সাইফ আলী খান। প্রশ্ন হলো, তাঁর ইতিহাসের শিক্ষক কে? তৈমুর আলী খান?’, ‘তবে কি প্রাচীন মানচিত্র ভুল? সেখানে তো স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, ব্রিটিশরা আসার বহু আগে থেকে ভারতের অস্তিত্ব ছিল।’
চতুর্দশ শতকের তুর্কি-মোঙ্গল সেনাপতি তৈমুর লং দিল্লি আক্রমণ চালিয়ে মধ্য এশিয়া দখল করে নিজেকে স্বৈরশাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নামের সঙ্গে মিল রেখে নিজের সন্তানের নাম রাখার দিকে ইঙ্গিত করে একজন লিখেছেন, ‘যে নিজের সন্তানের নাম রাখে ভারতের ঐতিহাসিক শত্রুর নামে, তাঁর কাছ থেকে আর কী আশা করব? বেইমান!’ বিজেপির মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখিও হেঁটেছেন একই পথে। টুইটারে একটি টুইটের উত্তরে তিনি লিখেছেন, ‘তুর্কিরা তৈমুরকে নিষ্ঠুর মনে করলেও “কিছু লোক” সন্তানের নাম হিসেবে তৈমুরই বেছে নেয়।’
এসব মন্তব্য হ্যাশট্যাগ সাইফ আলী খান লিখে টুইটারে সার্চ দিলে পাওয়া যাবে।