সমালোচকদের মুখে ছাই?
‘ছবিটি নিয়ে খুব বেশি উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। অমিতাভ বচ্চন আর আমির খানের মতো দুজন শক্তিশালী অভিনেতা দুটি দারুণ চরিত্রে অভিনয় করেও ছবিটিকে টেনে নিতে পারেননি।’ ‘থাগস অব হিন্দোস্থান’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকালেই লিখেছে এনডি টিভি। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, ‘শুধু অতীতের ছবি আর সিনের রেফারেন্স মেলানো নয়, শেষ পর্যন্ত আপনাকে বিরক্ত হতে হবে। হ্যাঁ! বিশাল আকারে ঠকতে হবে দর্শকদের।’ আরেকজন সমালোচক লিখেছেন, ‘ছবিটি কেবল নির্দিষ্ট সময়ের কাহিনি, অ্যাকশন আর প্রচারে প্রভাব রেখেছে। অমিতাভ বচ্চন ও আমির খান তাঁদের চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। দুজন সুপারস্টার অভিনীত ছবিটি যে মানের হওয়ার কথা, তা পেরেছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। যথেষ্ট বাজেট আর শক্তিশালী দুজন অভিনেতা নিয়েও বিজয় কৃষ্ণ আচার্যর ছবিটি সমুদ্র থেকে ডাঙায় উঠতে পারল না, সে আফসোস থাকবে।’
অধিকাংশ চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে, ‘থাগস অব হিন্দোস্থান’ ছবির চিত্রনাট্য আর পরিচালনা খুবই দুর্বল। চলচ্চিত্র সমালোচক শুভ্রা গুপ্তার মতে, ‘ছবিতে একমাত্র সহ্য করা যাচ্ছে আমির খানকে, যিনি আশপাশে থাকলে ছবিটা তবুও দেখা যাচ্ছে। বাকিটা “আই রোল” আর “আই গ্লেজ”-এর বিরামহীন সংমিশ্রণ।’
‘থাগস অব হিন্দোস্থান’ ছবি মুক্তির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমির খানকে নিয়ে বিভিন্ন মিম শেয়ার হচ্ছে। আমির খানের ‘পিকে’ ছবির সংলাপ, ‘হামকো ঘর জানা হ্যায় ভগবান।’ এবার অনেকে বলছেন, ‘থাগস অব হিন্দোস্থান’ ছবি দেখতে দেখতে নাকি দর্শকের ওই অবস্থা হয়েছিল। কেউ আবার অমিতাভ বচ্চনের মিম ব্যবহার করছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র সেটে অমিতাভ বচ্চন বলছেন, ‘আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় হয়েছে।’
হলিউডের ব্যবসা সফল ছবি ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’-এর সঙ্গে ‘থাগস অব হিন্দোস্থান’ ছবির চরিত্রদের লুকের মিল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ ছবির ‘জ্যাক স্প্যারো’ চরিত্রে অভিনয় করেন জনি ডেপ। ‘থাগস অব হিন্দোস্থান’ ছবিতে আমির খানের লুক দেখে অনেকের মন্তব্য, তিনি এই ছবির জ্যাক স্প্যারো! জনি আর আমিরের ছবি পাশাপাশি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখা হয়েছে, ‘বিগ বাজেটের জ্যাক স্প্যারো’ এবং ‘গরিবের জ্যাক স্প্যারো’।
আনন্দবাজার লিখেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দর্শকদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় উল্লাস কম বরং সমালোচনার ধার বেশি। বেশির ভাগ দর্শক ছবিটি দেখে নাকি হতাশ হয়েছেন। একটা বড় অংশ ‘থাগস অব হিন্দোস্থান’ ছবির সমালোচনা করে লিখেছেন, আমির খানের এই ছবি নিয়ে তাঁদের আর কোনো আগ্রহ নেই।
এ তো গেল পত্রিকা আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া সমালোচকদের অভিমত। কিন্তু ‘থাগস অব হিন্দোস্থান’ ছবি মুক্তির পর বাস্তব চিত্রটা কেমন? দেওয়ালি উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার ভারত এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুক্তি পেয়েছে আমির খানের এই নতুন ছবি। গতকাল বলিউডের বাণিজ্যিক বিশ্লেষক তরণ আদর্শ টুইটারে লিখেছেন, ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম দিন সবচেয়ে বেশি আয় করেছে ‘থাগস অব হিন্দোস্থান’। তিনি একটি পরিসংখ্যান দিয়েছেন। ‘ইন্ডিয়া বিজ’-এ প্রকাশিত এই পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ‘থাগস অব হিন্দোস্থান’ প্রথম দিন আয় করেছে ৫২ কোটি ২৫ লাখ রুপি। এরপর রয়েছে রণবীর কাপুরের ‘সঞ্জু’ (৩৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপি), সালমান খানের ‘রেস থ্রি’ (২৯ কোটি ১৭ লাখ রুপি), অক্ষয় কুমারের ‘গোল্ড’ (২৫ কোটি ২৫ লাখ রুপি) আর টাইগার শ্রফের ‘বাঘি’ (২৫ কোটি ১০ লাখ রুপি)।
২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর দেওয়ালি উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছিল শাহরুখ খানের ছবি ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। তখন ছবিটি প্রথম দিনে আয় করেছিল ৪৪ কোটি ৯৭ লাখ রুপি। বলা হয়, এখন পর্যন্ত বিজয় কৃষ্ণ আচার্যর ‘থাগস অব হিন্দোস্থান’ আমির খানের সবচেয়ে বড় ছবি। আর একই পরিচালকের ‘ধুম থ্রি’ তাঁর দ্বিতীয় বড় ছবি। ১৭৫ কোটি রুপি বাজেটের ছবিটি প্রথম দিন আয় করেছিল ৩৬ কোটি ২২ লাখ রুপি। ‘থাগস অব হিন্দোস্থান’ ছবির বাজেট ৩০০ কোটি রুপি।
এর আগে বলিউডের বাণিজ্যিক বিশ্লেষক গিরিশ জোহর বলেছেন, ‘তামিল, তেলেগু, হিন্দি ভাষায় “থাগস অব হিন্দোস্থান” প্রথম দিনে ৫০ কোটি রুপি ব্যবসা করবেই। যদি ছবির চিত্রনাট্য আর শিল্পীদের অভিনয় ভালো হয়, তাহলে দু-তিন দিনে সেই আয় গিয়ে দাঁড়াবে ১০০ কোটিতে।’
টুইটারে তরণ আদর্শ আরও লিখেছেন, ‘থাগস অব হিন্দোস্থান’ ছবির এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এই যেমন দেওয়ালি উপলক্ষে বড় ছুটি, মুক্তি আগেই বিপুল প্রত্যাশা তৈরি আর একসঙ্গে অসংখ্য প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি। তাঁর মতে, এরই মধ্যে ছবির আসল পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। আশা করা যাচ্ছে, সপ্তাহ শেষে ছবির আয় আরও বাড়বে।
‘থাগস অব হিন্দোস্থান’ ছবিতে অভিনয় করেছেন আমির খান, অমিতাভ বচ্চন, ক্যাটরিনা কাইফ, ফাতিমা সানা শেখ প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন বিজয় কৃষ্ণ আচার্য।