সঞ্জয় দত্ত ফুরিয়ে যাননি

জীবদ্দশায় ভারতের কোনো চলচ্চিত্র তারকাকে নিয়ে জীবনীচিত্র হয়েছে? সঞ্জয় দত্তের হয়েছে। সিনেমার হিরো সঞ্জয়ের জীবন বাঁকে পূর্ণ। তাঁকে নিয়ে খবরের পর খবর ক্লান্ত করেনি ভক্তদের। তাঁর অভিনীত সিনেমাগুলোও উজ্জীবিত করে রেখেছে আজও। আজ বৃহস্পতিবার ছিল এই অভিনেতার ৬২তম জন্মদিন।

সঞ্জয় দত্ত
ইনস্টাগ্রাম

অভিনেতা সঞ্জয়কে চেনার আগে একটু পেছনে ফিরে তাকানো দরকার। সঞ্জয়ের বাবা সুনীল দত্ত ছিলেন অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক ও রাজনীতিবিদ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সরকারের যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন তিনি। কেমন বাবা ছিলেন তিনি? রাজকুমার হিরানী পরিচালিত ‘সঞ্জু’ ছবিটা দেখলে সে ব্যাপারে ধারণা হয়ে যাবে। বাবার প্রসঙ্গ এলেই সঞ্জয় বলতেন, বাবা না থাকলে ধ্বংস হয়ে যেতেন তিনি। সঞ্জয়ের মা নার্গিস হিন্দি সিনেমার অন্যতম সেরা অভিনেত্রী। ক্যানসারে মারা যান তিনি। সেই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত সঞ্জয় নিজেও। গত বছর থেকে চলছে তাঁর চিকিৎসা।

বাবা সুনীল দত্তের হাত ধরে ১৯৮১ সালে ‘রকি’ দিয়ে বলিউডে যাত্রা করেছিলেন সঞ্জয়। তারপর যত ছবি করেছেন, প্রায় সব কটিই হিট। ‘খলনায়ক’, ‘নাম’, ‘বাস্তব’, ‘মিশন কাশ্মীর’, ‘অগ্নিপথ’, ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এর মতো ছবিগুলো তাঁকে জনপ্রিয়তা এনে দেয়। গত বছর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বিরতি নিয়েছিলেন। ফিরে এসে শুটিং শুরু করেন আবার। সঞ্জয় দত্তর ‘কলঙ্ক’ ছবিটি বক্স অফিসে ততটা আলোচিত হয়নি। তবে তাঁর অভিনয় যথারীতি প্রশংসা কুড়ায়।

মুন্নাভাই এমবিবিএস ছবিতে সঞ্জয় দত্ত
ইনস্টাগ্রাম

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সঞ্জয় দত্ত ছিলেন পরিবারের প্রতি ভীষণ উদাসীন। নাক-মুখ গুঁজে কেবল কাজ করে গেছেন। বাবা সুনীল দত্ত মারা যাওয়ার পর তাঁর টনক নড়ে। তখন কেবল আক্ষেপ করেছেন এই অভিনেতা। এরপর থেকে যত কাজই থাকুক, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান সঞ্জয়। শুটিংয়ের জন্য বাইরে থাকতে হলেও নিয়ম করে ফোনে স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজখবর নেন। যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন, স্কুলে যাওয়ার আগে আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তিন সন্তানের সঙ্গে গল্প করেন সঞ্জয়। যে আক্ষেপে তিনি পুড়েছেন, তিনি চান না সন্তানেরাও সেই আক্ষেপে পুড়ুক।

মাধুরী দীক্ষিত ও সঞ্জয় দত্ত

সঞ্জয় দত্তের জীবনীচিত্র ‘সঞ্জু’ ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি। ১৫০ কোটি রুপি খরচ করে বানানো এ ছবি তুলে এনেছিল ৮৮০ কোটি রুপি। আর নিজের জীবনের গল্প দিয়ে ছবি বানানোর অনুমতি দিয়েছিলেন বলে প্রযোজক বিধু বিনোদ চোপড়া আর বন্ধু রাজকুমার হিরানির কাছ থেকে পেয়েছিলেন ১০ কোটি রুপি। সেখানে সঞ্জয় দত্তের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রণবীর কাপুর। মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, নিজের বিতর্কিত জীবন মানুষের সামনে তুলে ধরতে আপত্তি করেননি সঞ্জয়। তবে বলিউডের যে অভিনেত্রীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল, সেসব যেন পর্দায় তুলে ধরা না হয়। তাঁরা এখন স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার করছেন। তাঁরা কেউ অস্বস্তিতে পড়ুক, বিব্রত হোক, তা চাননি সঞ্জয় দত্ত।

সঞ্জয় পরিবার। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

সঞ্জয় ফুরিয়ে যাননি। তাঁর অভিনীত বেশ কয়েকটি ছবি রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক ছবি, জীবনীচিত্রসহ নানা গল্প। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যায় বাংলাদেশের মিত্রবাহিনী ভারতের একটি এয়ারবেস। মাত্র তিন দিনে ৩০০ নারীর সহযোগিতায় এই এয়ারবেস পুনর্নির্মাণ করেছিলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার বিজয় কার্নিক। সেই ঘটনা নিয়ে ছবি ‘ভূজ: দ্য প্রাইড অব ইন্ডিয়া’। এই ছবিতে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা রাঞ্চোরদাস পাগির ভূমিকায় দেখা যাবে সঞ্জয় দত্তকে। একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে ছবিটি। বিজয়ের ভূমিকায় ছবিতে অভিনয় করেছেন অজয় দেবগন।

সঞ্জয় দত্ত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

কন্নড়ের সুপারহিট ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার ওয়ান’-এরপর বহুলপ্রতীক্ষিত সিক্যুয়াল ‘কেজিএফ: চ্যাপ্টার টু’ ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় দেখা যাবে সঞ্জয় দত্তকে। পৃথ্বীরাজ চৌহানের জীবনীচিত্র ‘পৃথ্বীরাজ’-এ নাম ভূমিকায় দেখা যাবে অক্ষয় কুমারকে। আর চৌহানের চাচা কানহার চরিত্রে দেখা যাবে সঞ্জয় দত্তকে। ‘অগ্নিপথ’-এর পরিচালক করণ মালহোত্রার ‘শামশেরা’ ছবিতে খলচরিত্রে দেখা যাবে সঞ্জয় দত্তকে। এতে আরও অভিনয় করেছেন রণবীর কাপুর। এ ছাড়া স্নুকার কোচের ভূমিকায় ‘তুলসীদাস জুনিয়র’ ছবিতে দেখা যাবে সঞ্জয় দত্তকে।