২০২০ সালে লকডাউনের শুরু থেকেই বলিউড তারকা সোনু সুদ ত্রাতা আর যোদ্ধার ভূমিকায় দাঁড়িয়েছেন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে। খুলেছেন নিজের তহবিল ‘সোনু ফাউন্ডেশন’। এর অধীন একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে চালাচ্ছেন ‘হিল ওয়েল’ নামের একটি প্রজেক্ট। এর মাধ্যমে করোনা পজিটিভ রোগীরা ডাক্তারের ফ্রি পরামর্শ পাবেন।
এ ছাড়া সোনু বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহের ব্যবস্থা করছেন। এরই মধ্যে পুরো একটি গ্রামের খাবারের দায়িত্ব নিলেন তিনি। মধ্যপ্রদেশের মালওয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম নীমুচের সব মানুষকে তিন বেলা খাওয়াবেন তিনি। রিয়েলিটি শো ‘ড্যান্স দিওয়ান’–এর বিচারক সোনু সুদ। এখনকারই এক প্রতিযোগী উদয় সিং। নাচ শেষে উদয় সিং জানান যে তিনি খুব ছোট একটা গ্রাম থেকে এসেছেন। তাঁর গ্রামের সবাই দিনমজুর, নানা কাজ করে দিন আনে দিন খান। কিন্তু লকডাউনে সব কাজ বন্ধ থাকায় তাঁদের গ্রামের সবারই খাওয়ার কষ্ট। এ কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন উদয়।
শুনে সোনু সুদ তাৎক্ষণিকভাবে কথা দেন যে তিনি এই গ্রামের প্রত্যেককে রেশন দেবেন। যত দিন লকডাউন চলবে, তত দিন ওই গ্রামের বাসিন্দাদের খাওয়াবেন তিনি। সোনু বলেন, ‘উদয়, তুমি ছোট শহরের বড় তারকা। দুই মাস, ছয় মাস—যত দিন লকডাউন চলবে, তোমার গ্রামের মানুষ খাবার পাবে। আমি সেই ব্যবস্থা করব। কথা দিলাম।’
করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাঁদের মা–বাবা মারা গেছেন, তাঁদের কথাও ভাবছেন সোনু। সরকারকে ইতিমধ্যে তিনি এমন অনাথ শিশুদের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেছেন।
মহামারিকালের শুরুতে নিজ উদ্যোগে বাস, ট্রেন, এমনকি উড়োজাহাজে করেও এ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ২০ হাজার পরিযায়ী দিনমজুর ও তাঁদের পরিবারকে বাড়ি পাঠিয়েছেন সোনু সুদ। তাঁর এসব দাতব্যকাজের খবর সবখানে ছড়িয়ে গেছে। ভারতের কোথাও সোনুর ভাস্কর্য গড়ে তোলা হচ্ছে, কোথাও তাঁর নামে রাখা হচ্ছে নবজাতকের নাম। মানুষের এই ভালোবাসা আর আশীর্বাদকে পাথেয় করেই আগামী দিনগুলোতে এগিয়ে যেতে চান সোনু।
প্রায় দুই দশক ধরে দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি ও বলিউড দুনিয়ায় দাপটের সঙ্গে কাজ করছেন সোনু। অবশ্য সোনু সুদ কখনোই বলিউডের প্রথম সারির তারকা ছিলেন না। তাঁর চলচ্চিত্রজীবনের শুরুর দিকের অধ্যায় ভীষণ সংগ্রামের। ১৪ বছর নিজের পরিচয় গড়ে তোলার জন্য পরিশ্রমের পর পায়ের তলায় শক্ত মাটি পান তিনি। করোনাকালে হাজার হাজার মানুষের জীবনসংগ্রাম দেখে নিজের সেই অতীতের দিনগুলো আবার সোনুর স্মৃতিতে হানা দেয়। এক সাক্ষাৎকারে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ফিল্মজগতের বাইরে থেকে এলে মোটামুটি সবাইকে স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখানে বাইরের কেউ সহজে জায়গা গড়তে পারে না। আমাকেও তাই একটা সুযোগের জন্য অনেক সংগ্রাম-সংঘর্ষ করতে হয়েছে।’