বারবার মৃত্যুর গুজব: এখনো পর্দায় তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি
ফরিদা জালাল মারা গেছেন! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েক দিন পরপর এমন ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল হয়, তাঁর ছবি দিয়ে ‘শান্তিতে ঘুমান’ লিখে শোক প্রকাশ করে। তারপর একসময় স্বয়ং ফরিদা জালাল লাইভে আসেন। ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমি সুস্থ এবং স্বাভাবিক রয়েছি।’
ফরিদা জালালকে চিনেছেন? নাম শুনে চট করে চেনা একটু মুশকিল। অন্তত এ প্রজন্মের দর্শকের জন্য। তবে ছবিতে তাঁকে চিনে নিতে এতটুকু সমস্যা হবে না। তিনি নায়িকা। তিনি নায়কের বোন, প্রত্যাখ্যাত প্রেমিকা বা নায়িকার ফুফু, খালা। নায়কের মা। এমনরূপে আমরা তাঁকে বেশি দেখেছি। অথচ নায়িকা হিসেবেই তাঁর শুরু হয়েছিল পর্দায়। ঠিক সেই অর্থে প্রথম সারির নায়িকা হতে পারেননি কিংবা নায়িকা হিসেবে খুব বেশি পরিচিতি পাননি। তবে এ নিয়ে তিনি হতাশ হননি কখনো। বরং চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে তিনি কাজ করে গেছেন বছরের পর বছর।
এক সাক্ষাৎকারে ফরিদা পরে বলেছিলেন, তাঁর মনে হয়েছিল তথাকথিত নায়িকার ভূমিকায় না থাকলেও চিত্রনাট্যে তাঁর চরিত্রের গুরুত্ব অনেক বেশি।
আজ এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। ১৯৪৯ সালের ১৪ মার্চ তাঁর জন্ম দিল্লিতে। তাঁর শুরুটা হয়েছিল ‘নতুন মুখ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে। ১৯৬৫ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন ফিল্মফেয়ার আয়োজিত একটি প্রতিভা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায়। সেই প্রতিযোগিতায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন ফরিদা। পুরুষ বিভাগে শ্রেষ্ঠ হয়েছিলেন রাজেশ খান্না। সে সময় ফরিদা মুম্বাই পঞ্চগনির সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট স্কুল থেকে সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।
ফিল্মফেয়ারের সে প্রতিযোগিতায় দর্শকদের আসরে ছিলেন প্রযোজক তারাচাঁদ বরজাতিয়া। তাঁর মনে ধরে তরুণ অভিনেত্রীর প্রতিভা। তিনি ফরিদাকে তাঁর পরের ছবি ‘তকদীর’–এ সুযোগ দেন। ১৯৬৭ সালে মুক্তি পায় ‘তকদীর’। ব্যবসাসফল এ ছবির পর আবার ডাক পড়ে তাঁর। একে একে তিনি ‘বাহারোঁ কি মঞ্জিল’, ‘মহল’,‘নয়া রাস্তা’র মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন। ‘আরাধনা’ এবং ‘পুরস্কার’ ছবিতে অবশ্য ফরিদা ছিলেন নায়িকার ভূমিকায়। ‘আরাধনা’তে ফরিদার নায়ক ছিলেন রাজেশ খান্না। ‘পুরস্কার’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন জয় মুখোপাধ্যায়ের বিপরীতে।
বেশ চলছিল। একটি–দুটি করে ছবিতে অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় ‘গোপী’। এই ছবিতে দিলীপ কুমারের বোনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ফরিদা। এরপর থেকে তিনি এই ধরনের চরিত্রেই ডাক পেতে থাকেন। ‘পরশ’ ছবিতে তাঁকে দেখা যায় সঞ্জীব কুমারের বোনের চরিত্রে।
‘জীবনরেখা’ ছবির সেটে ফরিদার সঙ্গে পরিচয় হয় অভিনেতা তবরেজ বরমাভরের। পরিচয়ের পর প্রেম ও বিয়ে। ১৯৭৮ সালে বিয়ের পর ফরিদা কিছুদিন সংসারে ঝুঁকে পড়েন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ তিনি বলিউড থেকে দূরে ছিলেন। এ সময় তিনি বেঙ্গালুরু ছিলেন। তাঁর স্বামীও অভিনয় ছেড়ে তখন ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
নব্বই সালে আবার ফেরেন। এবার তিনি আরও উজ্জ্বল। ভারতীয় চলচ্চিত্র গবেষকদের মতে, ফরিদা জালালের অভিনয় জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস অনেক বেশি সফল।
‘রাজা হিন্দুস্তানি’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’, ‘কাভি খুশি কাভি গম’-এর মতো ছবিই তার প্রমাণ। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘খোঁজ’, ‘অমর প্রেম’, ‘প্যায়ার কি কাহানি’, ‘ববি’, ‘আচানক’, ‘রাজা রানি’, ‘লোফার’, ‘মজবুর’, ‘আলাপ’, ‘কসম খুন কি’ উল্লেখযোগ্য।
তবে ফরিদা জালালের ক্যারিয়ারে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছবি হলো ‘মাম্মো’। শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত এই ছবি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৪ সালে। সুরেখা সিক্রি, রজিত কাপুরের পাশাপাশি এই ছবিতে ফরিদার অভিনয় প্রশংসিত হয়।
২০০৩ সালে মারা যান ফরিদার স্বামী। একাকিত্ব দূর করতে অভিনয়ে আরও বেশি সময় দেন এই তারকা। ফিরে আসা অভিনয়জীবনে ফরিদা জালাল বড় পর্দার পাশাপাশি সমানতালে অভিনয় করেছেন ছোট পর্দা এবং ওয়েব সিরিজেও। টেলিভিশনে তাঁর কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ইয়ে তো হ্যায় জিন্দেগি’, ‘দেখ ভাই দেখ’, ‘দ্য গ্রেট মারাঠা’, ‘শারারত’ ও ‘বালিকা বধূ’।