বাংলাদেশকে খুব মিস করছি: পাওলি দাম
একের পর এক ব্যতিক্রমী চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরেছেন টালিউড নায়িকা পাওলি দাম। তবে তাঁর পছন্দের ঘরানা থ্রিলার। ক্রাইম থ্রিলার, ভৌতিক থ্রিলার, সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারসহ আরও নানা ধরনের ছবি দেখতে বা অভিনয় করতে দারুণ পছন্দ করেন কলকাতার এই নায়িকা। আবারও একটি থ্রিলারধর্মী ছবিতে দেখা যাবে পাওলি দামকে। হিন্দি ভাষার এই ছবির নাম ‘রাত বাকি হ্যায়’। কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে কথাবার্তা হলো চলচ্চিত্রে তাঁর কাজ ও ভাবনা নিয়ে।
পাওলি কোনো চরিত্রের জন্য খুব বেশি প্রস্তুতি নেন না। এটা নির্ভর করে ছবির ঘরানার ওপর। পাওলি বলেন, ‘চিত্রনাট্য শোনার পরে চরিত্রের গ্রাফটা নিজের মাথায় প্রথমে এঁকে নিই। বাকিটা ফ্লোরে গিয়ে করি। আমি একেকটা সিনেমাকে একেকটা সফর হিসেবে দেখি। এই সফরের মধ্য দিয়ে আমি আমার চরিত্রগুলো আবিষ্কার করি।’
একজন অভিনেত্রী হিসেবে পাওলিকে সবচেয়ে বেশি তৃপ্ত করে পরিচালকের প্রশংসা। পাওলির ভাষায়, ‘সিনেমা হলো পরিচালকের মাধ্যম। দর্শকের কাছে সিনেমাটা পৌঁছানোর আগে পরিচালকই প্রথম মনিটারে বসে সবকিছু দেখেন। তাই সেটে পরিচালকের মুখে যখন আমার প্রশংসা শুনি বা তাঁর মুখে হাসি দেখি, তখন মনে হয় সেরা পাওনাটা পেয়ে গেছি। তবে দর্শকের জন্যই একটা ছবি নির্মাণ করা হয়। সবশেষে দর্শকের প্রশংসা ছাড়া কোনো সৃষ্টি পূর্ণতা পায় না।’
একেকটা ছবিতে একেক রকম চরিত্রে দেখা যায় পাওলিকে। ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে তিনি গুরুত্ব দেন? পাওলির উত্তর, ‘প্রথমে দেখি কোন ছবির গল্পের নির্যাস আমায় ছুঁয়ে যায়। এরপর আমি দেখি ছবির পরিচালক কে। তৃতীয় বিষয়টি হলো আমার অভিনীত চরিত্রটি। আমি যেন প্রতিটি ছবির মাধ্যমে দর্শককে নতুন কিছু উপহার দিতে পারি। দর্শক যেন এক নতুন পাওলিকে পায়, সেদিকটা খেয়াল রাখি। একটা সিনেমা হলো মিলিত প্রয়াস। এখানে একটা টিম কাজ করে। তাই প্রযোজনা সংস্থাসহ আরও অনেক বিষয় দেখে নিতে হয়।’
পাওলি কখনোই পর্দায় তাঁর উপস্থিতি নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন। কোনো ছবিতে স্বল্প উপস্থিতি হলেও তিনি ছবিটি করেন। এ ক্ষেত্রে চরিত্র কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা পাওলির কাছে প্রাধান্য পায়। তিনি বলেন, ‘কোনো ছবিতে আমার চরিত্রের কতখানি গুরুত্ব, সেটাই আমি প্রাধান্য দিই। পর্দায় স্বল্প উপস্থিতিতেও আমি যেন দর্শককে প্রভাবিত করতে পারি। তাই পর্দায় কতক্ষণ থাকলাম, এ নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই।’
২০১২ সালে ‘হেট স্টোরি’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল পাওলির। এরপর বলিউডের বেশ কিছু ছবিতে দেখা গেছে তাঁকে। পাওলি মনে করেন, পারদর্শিতার দিক থেকে টালিউড বলিউডের থেকে কোনো অংশে কম নয়। টালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রচুর দক্ষ টেকনিশিয়ান আছে। আর কাঠামোর দিক থেকে টালিউড অন্য কোনো ইন্ডাস্ট্রির থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই বলে দাবি করেন পাওলি। এই নায়িকা গর্ববোধ করেন যে বাংলা চলচ্চিত্র থেকে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল। নিজের এই ফিল্মি সফর নিয়ে দারুণ খুশি পাওলি।
তিনি বলেন, ‘আজ আমি যা কিছু পেয়েছি বা পাচ্ছি, তা আমার কাছে বোনাস। আমি কখনোই ভাবিনি যে অভিনেত্রী হব। তাই আমার স্বপ্ন কখনোই আকাশছোঁয়া ছিল না। আজ যা যা পাচ্ছি, সবকিছু উপরি বলে মনে হয়।’
কয়েক বছর ধরে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে নানাভাবে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। তবে বলিউডে যাত্রা কখনোই কঠিন মনে হয়নি পাওলির। এ প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি বলেন, ‘আমি এখানে সব সময় রাজকন্যার মতো অনুভব করেছি। “হেট স্টোরি” ছবির জন্য যখন বিক্রম ভাটের সঙ্গে দেখা করি, তিনি আমাকে একজন প্রিন্সেসের মতো ট্রিট করেছিলেন। “বুলবুল” ছবির শুটিংয়ের সময়ও প্রচুর সম্মান আর ভালোবাসা পেয়েছি। “রাত বাকি হ্যায়” ছবির ক্ষেত্রেও আমার একই অনুভূতি। আসলে আমি সত্যি ভাগ্যবতী যে ভালো ভালো টিম, সহ-অভিনয়শিল্পী, পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমি কখনোই এই ইন্ডাস্ট্রিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিনি।’
পাওলি জানান, বাংলাদেশকে ভীষণভাবে মিস করছেন তিনি। ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির প্রসঙ্গ উঠতে এই টালিউড নায়িকা বলেন, ‘বাংলাদেশে আমি শেষ “সত্তা” ছবিতে কাজ করেছিলাম। ওই ছবির পরিচালক কল্লোলের সঙ্গে আরেকটা ছবি নিয়ে কথাবার্তা চলছিল। কিন্তু অতিমারির জন্য কোনো পরিকল্পনা করতে পারছি না। সত্যি বলতে, বাংলাদেশকে খুব মিস করছি। এখানকার মানুষের থেকে প্রচুর ভালোবাসা পাই। আমি ওপার বাংলার মানুষদের খুব ভালোবাসি।’
দাম্পত্য জীবনের চার বছর পেরিয়েছে পাওলির। বিয়ের পরে সাধারণত মেয়েদের জীবন অনেকটাই পাল্টে যায়। তবে বিয়ের পরও তাঁর জীবন একই রকম আছে। পাওলি বলেন, ‘বিয়ের পরে আমার জীবন এতটুকু বদলায়নি। বিয়ের আগে যা ছিলাম, এখনো তাই। আমার শ্বশুরবাড়ি, স্বামী খুবই সাপোর্টিভ। বিয়ের আগে মায়ের থেকে সব সময় সাপোর্ট পেয়ে এসেছি। বিয়ের পর স্বামীকে সব সময় আমার পাশে পাই।’