‘নামকরা এক পরিচালকের স্ত্রী আমার শরীর নিয়ে কটাক্ষ করেন’

ম্রুণাল ঠাকুর
ইনস্টাগ্রাম

‘কুমকম ভাগ্য’ ধারাবাহিকটি বলিউড অভিনেত্রী ম্রুণাল ঠাকুরের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছিল। টেলিভিশন থেকে এসে বলিউডে এসে ধীরে ধীরে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন এই টিভি তারকা। সবে ‘জার্সি’ ছবির শুটিং শেষ করেছেন। হাতে আছে অনেক প্রকল্প। তারই ফাঁকে কথা বললেন প্রথম আলোর সঙ্গে। মুঠোফোনে নেওয়া এই সাক্ষাৎকারের শুরুতেই উঠে এল ‘জার্সি’ ছবির কথা। এই ছবিতে তাঁর বিপরীতে আছেন বলিউড তারকা শহীদ কাপুর। ম্রুণাল বলেন, ‘২০১৯ সালে “জার্সি” ছবির শুটিং শুরু হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন শুটিং বন্ধ ছিল। লকডাউন উঠতেই চন্ডিগড়ের কনকনে শীতের মধ্যে শুটিং করি। প্রথমে সেটে পিপিই কিট পরে থাকতে খুবই অস্বস্তি হচ্ছিল। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাই। আমরা ভীষণ মজা করে শুটিং করেছি।’
এই ছবিতে শহীদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ম্রুণাল। তাঁর সঙ্গে অভিনয় প্রসঙ্গে ম্রুণাল বলেন, ‘শহীদের সঙ্গে কাজ করে দারুণ লেগেছে। তিনি অত্যন্ত কেয়ারিং। প্রচণ্ড সাপোর্টিভ। আমি বারবার শহীদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। ছবিতে মোটরসাইকেলের একটা ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য আছে। আমি যাতে কোনো আঘাত না পাই, তার জন্য বিশেষভাবে খেয়াল রেখেছিল শহীদ।’

শৈশব থেকেই খেলাধুলা করতে ভালোবাসতেন ম্রুণাল। বাস্কেটবল, ফুটবল খেলেছেন তিনি।

তবে ম্রুণাল আজও রোমাঞ্চিত বলিউডে তাঁর অভিষেক ছবি ‘সুপার থার্টি’র কথা মনে করে। এই ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন হৃতিক রোশন।

ম্রুণাল ঠাকুর
ইনস্টাগ্রাম

এই বলিউড নায়িকা তাঁর অভিষেক ছবির প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে বলিউডে আমার প্রথম ছবির নায়ক হবেন হৃতিক। আমি তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তাঁর সঙ্গে কাজ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি। সব থেকে বড় কথা, হৃতিক অত্যন্ত পরিশ্রমী। আমরা যদি কোনো কাজের ক্ষেত্রে শতকরা এক শ ভাগ চেষ্টা করি, তিনি সেখানে দুই শ ভাগ চেষ্টা করেন। হৃতিক, শহীদ, ফারহান, জন এব্রাহামের সঙ্গে কাজ করেছি। তাঁরা প্রত্যেকেই ফিটনেসের ব্যাপারে অত্যন্ত সিরিয়াস। হৃতিক তো নিজের শরীরকে যেন মন্দিরের মতো পূজা করেন। তাঁদের সঙ্গে কাজ করার পরে আমিও ফিটনেসকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছি।’

তবে শৈশব থেকেই খেলাধুলা করতে ভালোবাসতেন ম্রুণাল। বাস্কেটবল, ফুটবল খেলেছেন তিনি। ম্রুণাল বলেন, ‘জেলা স্তরে বাস্কেটবল খেলতাম। আর ফুটবলও খেলেছি। লুকিয়ে লুকিয়ে আমি খেলতে যেতাম। বাস্কেটবলের কারণে বাইরে খেলতে যেতে হতো। পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হতো। তাই মা খুব বকাঝকা করতেন।’

জীবনের কোনো লক্ষ্য ছিল না। মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়েছিলাম। আমি ডাক্তার হতে পারতাম। কিন্তু গণযোগাযোগ বেছে নিই, যাতে ইচ্ছা পূরণ করতে পারি। অভিনয়ে আসার প্রেরণা সিনেমা থেকেই পেয়েছি
ম্রুণাল ঠাকুর
ম্রুণাল ঠাকুর
ইনস্টাগ্রাম


শৈশব থেকেই গ্ল্যামার অঙ্গনের প্রতি দুর্দান্ত আকর্ষণ ছিল ম্রুণালের। সেই টান থেকেই মহারাষ্ট্রের ধুলে জেলা থেকে এই ‘মায়ানগরী’তে ছুটে এসেছিলেন তিনি। বলিউড সফর নিয়ে ম্রুণাল বলেন, ‘আমার পরিবারের কেউ কখনো সিনেমার জগতে ছিলেন না। কিন্তু সিনেমার প্রতি আমার দারুণ আকর্ষণ ছিল। কোনো ছবি দেখলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সেই ঘোরে থাকতাম। “থ্রি ইডিয়টস” ছবিটি দেখার পরে আমার চোখ খুলে যায়। বলা যায়, এই ছবি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। কারণ, ছবিটিতে বলা হয়েছে সেই কাজ করা উচিত, যা আপনি পছন্দ করেন। আমি তখন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ি। জীবনের কোনো লক্ষ্য ছিল না। মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়েছিলাম। আমি ডাক্তার হতে পারতাম। কিন্তু গণযোগাযোগ বেছে নিই, যাতে ইচ্ছা পূরণ করতে পারি। অভিনয়ে আসার প্রেরণা সিনেমা থেকেই পেয়েছি।’

ক্যারিয়ারের শুরুতে বাবা-মায়ের সমর্থন পাননি এই বলিউড তারকা। তবে আজ তাঁর এই সফলতার পেছনে মা–বাবাই মূল কান্ডারি বলে মনে করেন তিনি। তাঁদের প্রসঙ্গ উঠতেই ম্রুণাল বলেন, ‘শুরুতে মা–বাবা অভিনয়ে আসতে নিষেধ করেছিলেন।

ম্রুণাল ঠাকুর
সংগৃহীত
‘আমি তখন সবে টেলিভিশনে কাজ শুরু করেছি। আমার প্রথম শোর সময় ফটোসেশন চলছিল। বলিউডের এক নামকরা পরিচালকের স্ত্রী আমার শরীর নিয়ে কটাক্ষ করেন। আমি ছোট শহর থেকে এসেছি বলে আমাকে নানাভাবে অপমান করেন।
ম্রুণাল ঠাকুর

প্রচারের আলোয় আসি, তা তাঁরা কখনোই চাননি। কারণ, তাঁরা এই ইন্ডাস্ট্রিকে ভয় পেতেন। চাইতেন, আমি যেন একটা নিরাপদ চাকরি করি। কারণ, আজ হাতে ছবি আছে, কাল হয়তো থাকবে না। টেলিভিশনে কাজের সুযোগ পাওয়ার পরে আমি তাঁদের শুটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত সবকিছুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আর তখন তাঁরা আমার কাজের ধরন বুঝতে পারেন। এরপর মা–বাবা আর অমত করেননি। তাঁদের সমর্থন পেয়েছি বলে আমাকে শুধু পড়াশোনা নিয়ে পড়ে থাকতে হয়নি। বইয়ের পাতার বাইরে আরও একটা দুনিয়া আছে। সেখান থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়।’

মুম্বাইয়ে পা রাখতে একজন বলিউড নায়িকাও ম্রুণালের জীবনে দারুণভাবে প্রভাব ফেলেন। তিনি বলেন, ‘কারিনা কাপুর খান আমাকে সব সময় প্রভাবিত করে এসেছেন। তাঁর গানের সঙ্গে নাচতাম। কারিনার মতো “জিরো ফিগার” করেছিলাম। তাঁর ফ্যাশন, এনার্জি—সবকিছুই আমাকে অনুপ্রাণিত করে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেও কারিনা নিজেকে যেভাবে ব্যস্ত রেখেছিলেন, তা সত্যি অবাক করার মতো।’

ম্রুণাল ঠাকুর
ইনস্টাগ্রাম

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ম্রুণালের এই ফিল্মি সফর মোটেও মসৃণ ছিল না। টেলিভিশনের জগতে এসে তাঁর শরীর নিয়ে নানা কটু কথা শুনতে হয়েছে। এই বলিউড নায়িকা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি তখন সবে টেলিভিশনে কাজ শুরু করেছি। আমার প্রথম শোর সময় ফটোসেশন চলছিল। বলিউডের এক নামকরা পরিচালকের স্ত্রী আমার শরীর নিয়ে কটাক্ষ করেন। আমি ছোট শহর থেকে এসেছি বলে আমাকে নানাভাবে অপমান করেন। তবে সেই নারীকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনি সেদিন আমাকে এতটা হেনস্তা করেছিলেন বলেই আমি এত দূর আসতে পেরেছি। প্রার্থনা করি তিনি যেন এই সাক্ষাৎকার পড়েন।’