ফেসবুকে এসে কেন কাঁদলেন শ্রীলেখা
দিনকাল মোটেও ভালো যাচ্ছে না ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রের। কিছুদিন আগে বাবাকে হারিয়েছেন তিনি। দুই বাংলায় আলোচিত টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘মীরাক্কেল’–এর বিচারকাজ থেকে বাদ দেওয়া হলো তাঁকে। নিজের পালিত কুকুর নিয়ে কয়েক দিন পরপর প্রতিবেশীদের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা হচ্ছে। আজ আবারও ঘটেছে সেই একই ঘটনা। সেসব নিয়ে কথা বলতে বলতে ফেসবুক লাইভে এসে অঝোরে কাঁদলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনায় মারাত্মক ভেঙে পড়েছেন অভিনেত্রী।
শুক্রবার ফেসবুক লাইভে এসে ৫ মিনিট ২১ সেকেন্ড কাঁদতে কাঁদতে ঘটনার বর্ণনা দেন শ্রীলেখা। জানান, কুকুর নিয়ে প্রতিবেশীরা তাঁকে রীতিমতো হেনস্তা করছেন। এমনকি এক প্রতিবেশী কুকুরকে বিষ খাওয়ানোর হুমকি দিয়েছেন বলে দাবি করেন শ্রীলেখা।
ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল শ্রীলেখা মিত্রের এই ভিডিও। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণীপ্রেমীদের মধ্যে। অনেকেই তাঁর পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর অনুরাগীরা বলছেন, ‘শান্ত হন। এই মনঃকষ্ট থেকে শিগগির বেরিয়ে আসুন।’ কিন্তু কিছুতেই শান্ত করা যায়নি শ্রীলেখাকে। বাবার প্রয়াণ আর পোষা প্রাণীগুলোর সঙ্গে প্রতিবেশীদের বিমাতাসুলভ আচরণে যারপরনাই কষ্টে আছেন অভিনেত্রী।
প্রাণীপ্রেমী হিসেবে শ্রীলেখার পরিচিতি আছে কলকাতায়। বিশেষ করে পথের কুকুরগুলোর জন্য ভীষণ মায়া তাঁর। লকডাউনে পথের কুকুরগুলোকে খাবার দিতে করতে দেখা গেছে তাঁকে। এমনকি অসুস্থ কুকুরগুলোকে চিকিৎসার জন্য নিজে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন তিনি। কোনো সংগঠন নয়, বরং নিজ উদ্যোগে অবলা এ প্রাণীগুলোর পাশে থাকার চেষ্টা করছেন তিনি। এ জন্য বারবার বিতর্কের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে।
এর আগেও ফেসবুকে এসে প্রাণী নিয়ে নিজের সংকটের কথা জানিয়েছিলেন শ্রীলেখা। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, তাঁর বাসার নিচে থাকা কুকুরগুলোকে নিয়ে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে ভীষণ ঝগড়া চলছে। প্রতিবেশীদের একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘রাস্তার কুকুরকে আবার বাড়ির নিচে দেখা গেলে সিকিউরিটি গার্ডকেও ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে।’ আজকের লাইভে প্রকৃত অর্থেই ভেঙে পড়েন অভিনেত্রী। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল তাঁকে।
লাইভে শ্রীলেখা বলেন, ‘আমি আর পারছি না। আমি মানুষের সঙ্গে কম মিশি। আমি নিজের সাধ্যমতো কুকুরগুলোকে দেখি। আমি হেরে গিয়েছি, আই গিভ আপ।…এই কুকুরগুলোকে আমার সব ভ্যাকসিন দেওয়া, অ্যান্টির্যাবিস দেওয়া…আমি কোনো কিছু শান্তিমতো করতে পারছি না।
আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই। বাবার মৃত্যুর পর আমি এমনিতেই ঠিক নেই। সামনে আমার দুটো ছবি রিলিজ। আমি কিচ্ছু করতে পারছি না। আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই, একা একা এই লড়াই আমি আর করতে পারছি না। এই নেগেটিভিটি নিয়ে আমি বাঁচতে পারছি না।’ একপর্যায়ে বলেই ফেলেন, ‘আর পারছি না। অনেক কষ্ট করে রোজগার করা টাকা দিয়ে এই ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। খুব ভালোও ছিল। কিন্তু এখানে আর থাকতে পারছি না। যদি কেউ ফ্ল্যাটটা কিনতে চান, তাহলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যত তাড়াতাড়ি পারি, এখান থেকে চলে যেতে চাই।’
শ্রীলেখা মিত্রের বাবার বাড়ি বাংলাদেশের মাদারীপুরে। চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে অভিনয় করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তিনি। ১৯৯৮ সালে কলকাতার ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবিতে বাংলাদেশের ফেরদৌসের সঙ্গে অভিনয় করে দৃষ্টি কাড়েন।
বাংলাদেশে তাঁর পরিচিতি আরও বেড়ে যায় রিয়েলিটি শো ‘মীরাক্কেল’–এর বিচারক হওয়ার সুবাদে। বাংলাদেশ থেকে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রতিযোগী। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রজতাভ দত্তের সঙ্গে বরাবরই বিচারকের আসনে দেখা গেছে ভারতের এই সুপরিচিত অভিনয়শিল্পীকে। অবশ্য সর্বশেষ ‘মীরাক্কেল’–এ শ্রীলেখা ছিলেন না।