প্রভাস ইচ্ছেমতো বিরিয়ানি খান, ওজন ১০০ কেজি
বাহুবলী সিরিজের সাফল্যের পর দক্ষিণের প্রভাসে তকমা হয়ে যায় ভারতের প্রভাস। এরপর থেকে চর্চা শুধু প্রভাসকে নিয়েই। ‘বাহুবলী’র পর থেকে আলোচনা নতুন ছবি কবে আসবে। বিয়ে কবে, কার সঙ্গে বিয়ে—ভক্তদের এ নিয়ে জোর আলোচনা। এর প্রথম হিন্দি ছবি ‘সাহো’ মুক্তি পরও প্রভাস সম্পর্কে উন্মাদনা কমেনি। জীবনে অভিনেতা হতে না চাওয়া প্রভাসই এখন ভারতের অন্যতম বড় তারকা। রেস্তোরাঁর মালিক হতে চাওয়া প্রভাসের অন্যতম প্রিয় কাজ খাওয়া। নিজের রেস্তোরাঁ দিলে বাটার চিকেন আর বিরিয়ানিই নাকি খেতেন। দক্ষিণের বড় তারকা ভারত ছাপিয়ে কীভাবে আন্তর্জাতিক তারকা বনে গেলেন পাঠকের জন্য গল্পের প্রথমটা আজ।
ভেনকাটা সত্যনারায়ণ প্রভাস রাজু উপ্পলাপতি।
না, যেটা পড়লেন তা একজনেরই নাম, পাঁচজনের নয়। তবে তিনি একাই পাঁচজনের সমান তারকা। অবশ্য তিনি কখনো তারকাখ্যাতি নিয়ে চলেন না, বরং তারকাখ্যাতিই তাঁর পিছু ছাড়ে না। বলছি, কেবল দক্ষিণী সুপারস্টার নন, ভারতের সুপারস্টার প্রভাসের কথা। নিজের নামকে যিনি ‘বাহুবলি’র সমার্থক শব্দ বানিয়ে ফেলেছেন। কখনোবা স্বল্পভাষী, অন্তর্মুখী, লাজুক এই মানুষটা তাঁর ভক্তদের কাছে বাহুবলির চেয়েও ঢের বড়
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ‘বাহুবলী’ হয়েছেন প্রভাস
‘ফিল্ম ফ্যামিলি’তে ১৯৭৯ সালের ২৩ অক্টোবর জন্মেছিলেন প্রভাস। তাঁর বাবা সূর্যনারায়ণ রাজু দক্ষিণী সিনেমার প্রযোজক। আর মামা কৃষ্ণম রাজু বড় পর্দার তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা। তাই প্রভাসের নায়ক হওয়ার রাস্তা তৈরিই ছিল। তবে প্রভাস সেই রাস্তায় হেঁটেছেন বেশ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে। খেতে খুবই ভালোবাসেন।
রাজ্যের খাবার চেখে দেখা তাঁর স্বভাব। তাই পড়াশুনা শেষ করে রেস্টুরেন্ট খুলতে চেয়েছিলেন। তবে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বা হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়েননি। পড়েছেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। জীবনেও অভিনেতা হতে চাননি প্রভাস।
ছোটবেলা থেকেই একা, নিভৃতে থাকতে ভালোবাসেন। অনেক মানুষের সামনে, অন ক্যামেরায় অ্যাকশন আর কাটের মাঝে অভিনয় করবেন- ভাবতেই লজ্জা লাগত তাঁর। বাবা আর মামার সেটে গিয়ে মনে হয়েছিল, নায়ক হওয়া তাঁর কর্ম নয়। তিনি খাবেন, বই পড়বেন আর বাগান করবেন। সমান্তরালে চলবে তাঁর ব্যবসা। কিন্তু ঘরে বসে মামার একটা সিনেমা দেখতে দেখতে তাঁর মনে হল, চরিত্রটা তিনি মামার চেয়েও ভালো করতে পারবেন। যেই ভাবা সেই কাজ!
প্রথম সিনেমা ফ্লপ, দ্বিতীয় সিনেমা ফ্লপ, তৃতীয় সিনেমা...
২০০২ সালে ঈশ্বর সিনেমা মুক্তির পর প্রভাসকে নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। তবে কয়েকজন পরিচালক ও প্রযোজক লক্ষ্য করলেন, রোমান্টিক ইমেজে প্রভাস খানিকটা আড়ষ্ট হলেও অ্যাকশন দৃশ্যে তাঁর শরীরী ভাষা, অভিব্যক্তি বদলে যায়। তাই পরের ছবি ‘রাঘাবেন্দ্র’ পুরোদস্তুর অ্যাকশন ধাঁচের। বাপ্পি চৌধুরি ও পরিমনী অভিনীত ‘লাভার নম্বর ওয়ান’ সিনেমাটি এই তেলেগু সিনেমারই রিমেক। এই সিনেমা দিয়েও জ্বলে উঠতে পারেননি প্রভাস।
‘স্ট্রাগলিং অ্যাকটর’ প্রভাসকে এক লাফে তারকা বানিয়ে দিল তাঁর তৃতীয় সিনেমা ‘ভার্সাম’। বলিউডের বাঘি এই সিনেমারই রিমেক। এরপর বাকিটা কেবলই প্রভাসের জয়ের গল্প।
প্রভাস নিজের রাস্তা নিজেই বানিয়েছেন
বাবা প্রযোজক, মামা সুপারস্টার বলে যে তাঁদের দেখানো পথে চলেছেন প্রভাস, এমনটা ভাবলে ভুল হবে। প্রভাসের প্রথম ১০টা সিনেমার কোনটিই তাঁর বাবার প্রযোজনায় নয়। ১১ তম সিনেমা ‘বিল্লা’তে প্রভাস বাবার প্রযোজনায় অভিনয় করেন। তবে ততদিনে প্রভাসের চাহিদা তুঙ্গে, বনে গেছেন তারকা। যে কোনো প্রযোজকই কাজ করতে চাইবেন প্রভেসের সিনেমায়। তাই প্রভাস বাবার ছবিতে কাজ করেছেন না বলে প্রভাসের সিনেমায় তাঁর বাবা প্রযোজক ছিলেন, এমনটা বলাই বেশি যৌক্তিক। ‘বিল্লা’ ব্লকবাস্টার হিট হয়। আর এরপরেই মারা যান প্রভাসের বাবা। ‘বিল্লা’ বলিউড শায়েনশাহ বিগ বি অমিতাভ বচ্চনের ‘ডন’-এর গল্প থেকেই নেওয়া।
প্রভাসের জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ
প্রভাসের বাবা সবসময় বলতেন, ‘তোমার জীবনে এমন একটা সিনেমা আসবে, যে সিনেমা দিয়ে তোমাকে সবাই চিনবে। মানুষ জীবনভর তোমাকে ওই সিনেমার মাধ্যমে মনে রাখবে।’ বাহুবলি সিরিজ প্রভাসের জীবনের সেই সিনেমা।
বাহুবলি প্রভাসকে কেবল দক্ষিণ ভারত ছাপিয়ে সারা ভারতে জনপ্রিয় করেনি, বরং ভারত ছাপিয়ে সারা বিশ্বে প্রভাসকে চিনিয়েছে। প্রভাসকে বড় তারকা থেকে সুপারস্টার বানিয়েছে। আর এই মুহূর্তে প্রভাস ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গোনা তারকাদের একজন। কিন্তু প্রভাসের এই জনপ্রিয়তা দেখে যেতে পারেননি তাঁর বাবা। প্রভাস এমনিতে কম কথা বলেন, তবুও প্রায়ই এই আক্ষেপের কথা বলেন।
মাসে একদিন বিরিয়ানি, পাঁচ বছর ধরে ওজন ছিল ১০০ কেজি
বাহুবলি সিনেমার স্ক্রিপ্ট পড়েই প্রভাস পরিচালককে বলেছিলেন, এটিই সেই সিনেমা, যেই সিনেমার কথা তাঁর বাবা তাঁকে বলেছিলেন। আরও বলেছিলেন, তিনি এই ছবির জন্য কোনো পারিশ্রমিক চান না।
পাঁচ বছর ধরে তাঁকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দলের অধীনে থাকতে হয়েছে। খাওয়াদাওয়ায় ছিল চরম কড়াকড়ি। মাসে একদিন ‘চিটডে’ ছিল তাঁর। সেদিন ইচ্ছেমতো বিরিয়ানি খেতেন। পাঁচ বছর এভাবেই চলেছে। এই পাঁচ বছর ধরে প্রভাসের ওজন ছিল ১০০ কেজি। এর কমও না। বেশিও না।
সেই অর্থ যেন এই ছবির নির্মাণে খরচ করা হয়। উল্টো এই ছবির জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করতে প্রস্তুত তিনি। এই দুটো সিনেমাকে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিজের জীবন থেকে পাঁচ বছর দিয়েছেন প্রভাস। এই পাঁচ বছর নিজের ইচ্ছেমতো খাওয়া বা ঘর থেকে বের হওয়ার অধিকারও ছিল না। অমানুষিক হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেছেন প্রভাস। পাঁচ বছর ধরে তাঁকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দলের অধীনে থাকতে হয়েছে। খাওয়াদাওয়ায় ছিল চরম কড়াকড়ি।
মাসে একদিন ‘চিটডে’ ছিল তাঁর। সেদিন ইচ্ছেমতো বিরিয়ানি খেতেন। পাঁচ বছর এভাবেই চলেছে। এই পাঁচ বছর ধরে প্রভাসের ওজন ছিল ১০০ কেজি। এর কমও না। বেশিও না। কেবল দুহাতের মাসলের ওজনই হয়েছিল ২০ কেজি। খেলাধুলার জন্য সেটের ভিতরেই একটা ভলিবল কোর্ট বানিয়ে নিয়েছিলেন প্রভাস। সবাই প্রভাসকে বাহুবলী সিনেমা না করতে উপদেশ দিয়েছিল। কেননা, এর আগে এই ধরনের ঐতিহাসিক মহাকাব্যিক প্লটের সিনেমা বক্স অফিসে সফলতা পায়নি। বড় ঝুঁকি নিয়েছিলেন প্রভাস। কেননা, বাহুবলী যে মানুষ দেখবেই, এমন কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। আর এই পাঁচ বছরে তিনি ৮ থেকে ১০ টি সিনেমাও করতে পারতেন।